বাংলা সেরা কিছু অতিপ্রাকৃত ও ভৌতিক উপন্যাস

বাংলা সেরা কিছু অতিপ্রাকৃত ও ভৌতিক উপন্যাস

বাংলা সাহিত্যে ভৌতিক উপন্যাস গুলো খুব জনপ্রিয়। মানুষের ভূতে বিশ্বাস থাক বা না থাক ভূতের গল্পের প্রতি আকর্ষণ চিরন্তন। এই উপন্যাস গুলো পাঠকের মধ্যে রহস্য, আতঙ্ক ও ঘটনার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে। ভৌতিক উপন্যাস গুলো মূলত প্রেতাত্মা, অতিপ্রাকৃত ঘটনাবলী, পুরনো বাড়ির রহস্য কিংবা প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়ে থাকে। এই ভৌতিক উপন্যাসের গল্প গুলো চরিত্র অদ্ভুত বা অশুভ পরিবেশের মুখোমুখি হয়ে ঘটে থাকে। সাধারণত মানুষের ভয়, কুসংস্কার, ও রহস্যময়তা উঠে আসে যা সমাজে মানুষের মনস্তত্ত্বের গভীরে প্রভাব ফেলে।

বাংলা সেরা কিছু ভৌতিক উপন্যাস

বাংলা সেরা কিছু ভৌতিক উপন্যাস রয়েছে যা মানুষের মনে রহস্য, আতঙ্ক, ও অবাস্তব কল্পনাশক্তিকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। এই ধরনের গল্প গুলো প্রেতাত্মা, অলৌকিক জগত, পরিত্যক্ত ভবন, অতিপ্রাকৃত ঘটনাবলী, এবং রহস্যময় পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়। এই উপন্যাস গুলো পাঠককে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি করে যেখানে বাস্তবতা এবং অতিরিক্ত কল্পনাশক্তি একত্রিত হয়ে এক নতুন অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করে। নিচে সেরা কিছু ভৌতিক উপন্যাসের তালিকা দেওয়া হলো:

ভূত ৭৩

ভূত ৭৩

ভূত ৭৩ বইটি হেমেন্দ্রকুমার রায়ের রচিত একটি বিখ্যাত ভৌতিক উপন্যাস। এই উপন্যাসটি রহস্য, আতঙ্ক এবং অলৌকিক ঘটনা ভরা। এই গল্পের মূল বিষয় হচ্ছে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি। যা অনেক বছর ধরে জনমানবশূন্য। এই বাড়ির আশে পাশে স্থানীয়দের মধ্যে নানা ধরনের গুজব এবং কুসংস্কার প্রচলিত হয়েছে এই বাড়ি সম্পকে। অনেকে বিশ্বাস করেন সেখানে প্রেতাত্মার উপস্থিতি রয়েছে। ওই বাড়িতে যখন প্রবেশ করা হয় তখন বিভিন্ন অস্বাভাবিক ও রহস্যময় ঘটনা ঘটতে থাকে। বাড়ির ভিতরে অদ্ভুত শব্দ ও ছায়ামূর্তি  অনেক কিছুর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। এই বাড়ির ইতিহাস এবং সেই রহস্যময় ঘটনাগুলোর পেছনে লুকিয়ে থাকা সত্য উদঘাটন করার মধ্য দিয়ে কাহিনী এগিয়ে চলে। ভূত ৭৩ উপন্যাস টি বাংলা সাহিত্যের ভৌতিক ধারার একটি মাইলফলক।

অলৌকিক গল্পসমগ্র

অলৌকিক গল্পসমগ্র

অলৌকিক গল্পসমগ্র বইটির লেখক হচ্ছে শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়। তার লেখা অলৌকিক গল্পগুলো বাংলা সাহিত্যে এক অন্যরকম স্থান দখল করে আছে। অলৌকিক গল্পসমগ্র বইয়ের গল্পগুলোতে রহস্য, অতিপ্রাকৃততা এবং ভয়ের পাশাপাশি গভীর সাহিত্যিক রস রয়েছে। লেখক তার বাস্তবজীবনের চরিত্র ও ঘটনার সঙ্গে অলৌকিক বিষয়কে চমৎকারভাবে মিশিয়ে গল্প লিখেছেন। গল্পগুলোতে শুধু ভয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়নি। প্রতিটি গল্পে রহস্যময় কাহিনী রয়েছে। শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় অলৌকিক গল্পসমগ্র বইয়ের কিছু গল্পে গ্রামীণ বাংলার সংস্কৃতি, লোকবিশ্বাস এবং কুসংস্কারের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। অলৌকিক গল্পসমগ্র বইয়ের গল্পের নাম গুলো হলঃ প্রেতপুরী, রক্ত-খদ্যোত, টিকটিকির ডিম, অন্ধকারে, মরণ-ভোমরা, অশরীরী, সবুজ চশমা, বহুরূপী, প্রতিধ্বনি, পঞ্চভূত, আকাশবাণী, ধীরেন ঘোষের বিবাহ, দেহান্তর, ভূত-ভবিষ্যৎ, নিরুত্তর, দেখা হবে, গুহা, শূন্য শুধু শূন্য নয়, মধু-মালতী, চিরঞ্জীব, মায়া কুরঙ্গী, সতী, নীলকর, কালো মোরগ, নখদর্পণ, প্রত্নকেতকী, ছোটকর্তা, মালকোষ, ফকিরবাবা, পিছু পিছু চলে, কামিনী।

সব ভুতুড়ে

সব ভুতুড়ে

সব ভুতুড়ে গল্পের বইটি লিখেছেন লীলা মজুমদার। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রকাশনী থেকে। জীবনে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভৌতিক গল্প গড়ে ওঠে। অনেক গুলো পত্রিকায় বহু বছর ধরে প্রকাশিত সব লীলা মজুমদারের ভূতের গল্পগুলিকে একত্রিত করে এই গ্রন্থে প্রকাশিত করা হয়েছে। সব ভুতুড়ে এই গ্রন্থে মোট ৪২টি গল্প আছে। এই গল্প গুলোর মধ্যমে অন্তত অর্ধশতাধিক ভূতে দেখা পাই যায়। সে ভূতেরা আমাদের প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এই জন্য লীলা মজুমদারের সৃষ্ট ভূতেরা তাই অন্যরকম। লীলা মজুমদারের সব ভুতুড়ে বইয়ের গল্পের সূচি দেওয়া হলঃ পেনেটিতে, আহিরিটোলার বাড়ি, অহিদিদির বন্ধুরা, ভুতুড়ে গল্প, খাগায় নমঃ, লক্ষ্মী, কাঠপুতলি, সত্যি নয়, যুগান্তর, ফ্যান্টাস্টিক, পাশের বাড়ি, দামুকাকার বিপত্তি, চোর, বাপের ভিটে, স্পাই, নটরাজ, দজ্জাল বৌ, কলম সরদার, কর্তাদাদার কেরদানি, আকাশ পিদ্দিম, ছায়া, চেতলায়, পিলখানা, রাত্রে, গোলাবাড়ির সার্কিট হাউস, অশরীরী, ট্যাঁপার অভিজ্ঞতা, ভয়, তেপান্তরের পারের বাড়ি, সন্ধ্যা হল, লাল টিনের ছাদের বাড়ি, সোহম, আলোছায়া, সোনালি-রূপালি, পাঠশালা, নাথু, শেল্টার, মোটেল, তোজো, ভ—ভূত!, ভাগ্যদেবী ব্রাঞ্চ হোটেল, হরু হরকরার একগুঁয়েমি।

তিন তিরিক্ষে ভয়

তিন তিরিক্ষে ভয়

তিন তিরিক্ষে ভয় বইটি লিখেছেন মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালে। এই বইটিতে তিন টি ভিন্ন রকম ভুতুড়ে গল্প নিয়ে গঠিত তা লেখা হয়েছে। যা একজন পাঠককে অজানা রহস্যময় এবং ভয়ের এক অনন্য অভিজ্ঞতার দিকে নিয়ে যায়। এই গল্পগুলিতে ভয় এবং অলৌকিকতার সঙ্গে মানবিক অনুভূতি ও বাস্তব জীবনের সঙ্গে ঘটনার মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। প্রতি গল্পের ভিন্ন ভৌতিক অভিজ্ঞতা উপস্থাপিত করা হয়েছে। বইটিতে অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পাপচক্র ফিরে আসে ভয়ংকর প্রতিশোধের রূপে। এছাড়া ও কিভাবে মানুষের কৌতূহল তাকে নিয়ে যায় মৃত্যুর দোরগোড়ায় দিকে। তিন তিরিক্ষে ভয় বইটি শুধু ভয় পাওয়ার জন্য নয়। এটি একটি সাহিত্যিক যাত্রা। যা মানুষের অজানা জগতের প্রতি কৌতূহল এবং অলৌকিক ঘটনার প্রতি বিশ্বাসকে গভীর ভাবে গড়ে তোলে।

ভূতগুলো সব ভয় দেখায়

ভূতগুলো সব ভয় দেখায়

ভূতগুলো সব ভয় দেখায় বইটি লিখেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। যা প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। এই বইটিতে ভৌতিক গল্পের মাধ্যমে পাঠকদের কৌতূহল ও বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি ভয়ের একটি মজাদার অভিজ্ঞতা প্রদান করা হয়েছে। গল্পগুলোর মাধ্যমে শুধু ভয় পাওয়া নয়, বরং পাঠকদের হাস্যরসাত্মক এবং মজার এক জগতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভূতেরাও কেবল ভয় দেখানোর জন্য নয়, তাদের নিজেরাও কিছুটা রোমাঞ্চপ্রবণ এবং কখনো কখনো মজার কাজকর্মে লিপ্ত হয়েছে। এই গল্পগুলোর ভাষা সহজ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সব বয়সের মানুষ এই বই পড়ে মজার অভিজ্ঞতা গ্রহন করতে পারবে। এই বইয়ের প্রতিটি গল্প পাঠকদের জন্য এক নতুন রকমের অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

কায়াহীনের কাহিনী

কায়াহীনের কাহিনী

কায়াহীনের কাহিনী মনিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত ভৌতিক উপন্যাস। যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৫ সালে। এই বইটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছেন বাংলা সাহিত্যে ভৌতিক গল্পের মাধ্যমে। বইটির প্রধান গল্পগুলোতে অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলো এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যা পাঠকের মনে ভয় ও কৌতূহল দুটিকেই একসঙ্গে জাগিয়ে তোলে। বইটির প্রতিটি গল্পের ভয় ও রহস্যের বেড়াজালে আবদ্ধ। গল্পটির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেহহীন আত্মা ও তার সঙ্গে মানুষের জীবনের সংঘাত ও রহস্যময় কাহিনী। কায়াহীনের কাহিনী বইটিতে ৬টি গল্প রয়েছে । যেমনঃ হরতনের গোলাম, বাঁশির ডাক, লাট্টুর ঘূর্ণি, কঙ্কালের টঙ্কার, অতিথির আবদার, খোট্টাই শরবত। কায়াহীনের কাহিনী গল্পের বইটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিককার ভৌতিক গ্রন্থগুলোর একটি।

নীলাম্বরের খিদে

নীলাম্বরের খিদে

নীলাম্বরের খিদে বইটি লিখেছেন দেবারতি মুখোপাধ্যায়। যা প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে। বইটি কিশোরদের জন্য ভয়ের উপনাস। তিনটি ভৌতিক কাহিনী রয়েছে এই বইটিতে। গল্পটি বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামে আবর্তিত হয়।  যেখানে পাঁচশো বছরের ব্যবধানে দুটি পিতা চরিত্রের মধ্যে সংঘাত ও তার প্রেক্ষাপটে এক রক্তপিপাসু অভিশাপ ঘনীভূত হয়। মধ্যযুগের সামন্ততান্ত্রিক শাসন ও মহামারীকালীন লাশ ফেলা মৃত্যুকূপের ভয়াল চিত্রায়ণ গল্পটিকে আরও তীব্র করে তোলে। দেবী মহামারীর করালগ্রাস এবং সেই সময়ের নিষ্ঠুর ঘটনার সঙ্গে আধুনিক যুগের একটি অনাসৃষ্টি যুক্ত হয়। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় বস্তু মোখা – একটি মুখোশ, যা নাকি অলৌকিক ক্ষমতা বহন করে। এই মোখা বানানোর পদ্ধতি সহজ নয়। শিল্পীকে থাকতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে সম্পূর্ণ শুদ্ধ। এর মধ্যে প্রতিশোধের আগুন, ঈর্ষার কালো মেঘ ও অতিপ্রাকৃত শক্তি কাজ করে। যা এর চারপাশে থাকা মানুষদের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে।

অলাতচক্র

অলাতচক্র

অলাতচক্র বইটি লিখেছেন তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। যা ২০০৩ সালে মিত্র এন্ড ঘোষ পাবলিশার্স প্রকাশনীতে প্রকাশিত হয়। এটি বাংলা সাহিত্যের ভৌতিক গল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং তারানাথ তান্ত্রিক সিরিজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কল্পনাশক্তি এবং গল্পের গভীরতা অলাতচক্র কে পাঠকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এই বইটি শুধু ভয়ংকর অন্ধকার দুনিয়ার গল্প নয়। বরং গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রা এবং তাদের সংস্কৃতির অসাধারণ বর্ণনা দিয়েছে যা ভিন্ন এক জগতে নিয়ে যায়। অলাতচক্র মূলত তন্ত্রমন্ত্রের কাহিনীকে আধুনিক এবং রহস্যময় দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। গ্রামীণ পরিবেশে বাস করা মানুষের জীবনযাত্রা, বিশ্বাস, দারিদ্র্য ও তান্ত্রিক অনুশীলনগুলোর মধ্যে গাঁথা বইটির মূল কথা।

ভৌতিক গল্পসমগ্র

ভৌতিক গল্পসমগ্র

ভৌতিক গল্পসমগ্র সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অন্যতম জনপ্রিয় একটি বই। বইটি প্রকাশিত হয় পত্রভারতী প্রকাশনীতে থেকে। ৭৪ টি গল্প রয়েছে এই বইতে। এই বইটিতে বিভিন্ন রহস্যময় ও অলৌকিক গল্প সংকলিত হয়েছে। গ্রামীণ বাংলা জীবনের ঐতিহ্য, কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, যা পাঠককে শিহরণে ভরিয়ে তোলে। বইটি অধ্য্যনের মাধ্যমে পাঠকদের ভয়,কৌতূহল এবং রহস্যের এক মিশ্র অভিজ্ঞতা প্রদান করা হয়েছে। এই বইয়ের জন্যপ্রিয় গল্প হলঃ ছক্কামিয়ার টমটম, গেছোবাবার বৃত্তান্ত, হাওয়া-বাতাস, দারোগা ও চোর, মানুষের ভূতের গল্প। বইটি বাংলা সাহিত্যের ভৌতিক ধারার পাঠকদের কাছে একটি অমূল্য রত্ন হিসেবে বিবেচিত হয়।

ডট কম রহস্য

ডট কম রহস্য

ডট কম রহস্য বইটি লিখেছেন অনীশ দেব। বই প্রকাশিত করে পত্রভারতী প্রকাশনী। এই বইটি চারটি আলাদা বইয়ের সংকলন করা হয়েছে। যা ২০০৩ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল। মোট ৫৯ টি রচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যার মধ্যে ৫১ টি ছোটগল্প, ৫টি নভেলেট ও ৩টি উপন্যাস রয়েছে। এই বইটি বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ থ্রিলার ও সাসপেন্স রচনাগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম বই। প্রতিটি রচনায় দক্ষতা দিয়ে বিভিন্ন রহস্যময় এবং উত্তেজনাপূর্ণ কাহিনি গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এই বইটির গল্পগুলোতে প্রযুক্তি, আধুনিকতা এবং রহস্যময় ঘটনার এক অপূর্ব মিশ্রণ পাওয়া যায়। প্রতিটি গল্পে জীবনের কিছু অন্ধকারময় দিক এবং অজানা ঘটনার উপস্থাপনা করা হয়েছে।

অশরীরী আতঙ্ক

অশরীরী আতঙ্ক

অশরীরী আতঙ্ক বইটি লিখেছেন মানবেন্দ্র পাল। বইটিতে ভৌতিক এবং রহস্যময় গল্প দ্বারা পরিপূর্ণ। বইটিতে এমন এক প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে যেখানে মানুষের মানসিক দ্বন্দ্ব ও অজানা শক্তির উপস্থিতি পাঠকের কল্পনাকে শিহরিত করা হয়েছে। গল্পে বাস্তবতার সঙ্গে অতিপ্রাকৃত ঘটনার মিশেল যা পাওয়া যায়। তা প্রতিটি ধাপে ধাপে রহস্য বাড়িয়ে তোলে। গল্পটি এমন একটি বাড়িকে কেন্দ্র করে আবর্তিত করা হয়েছে। যেখানে অদ্ভুত ঘটনাগুলি ঘটতে শুরু করে। মানুষের বুদ্ধি, যুক্তি ও ভয়ের অনুভূতির মধ্যে সংঘর্ষ দেখা যায়। এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অতীতের কোনো গোপন সত্য ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়। যা লেখক তার কাহিনিতে চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এবং অজানা শক্তির রহস্যকে দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন। গল্পটি  ভৌতিক ঘটনার মধ্যেও যুক্তি ও বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়েছে। যা একে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

ছায়া ছায়া ভূত

ছায়া ছায়া ভূত

ছায়া ছায়া ভূত বইটি একটি জনপ্রিয় ভৌতিক গল্পগ্রন্থ যা লিখেছেন সায়ন্তনী পূততুন্ড। বইটিতে লেখক এর লেখনীতে অশরীরী উপস্থিতি, ছায়াবৃত ভৌতিক পরিবেশ ও অদ্ভুত গল্পগুলো পাঠকদেরকে গা-ছমছম অনুভূতির মধ্যে ডুবিয়ে রাখে। বইটি মূলত ভৌতিক উপন্যাস এবং ছোট গল্পের সংমিশ্রণ, যেখানে অতিপ্রাকৃত বিষয়গুলি গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অশরীরী অস্তিত্ব, ভৌতিক কাহিনী, এবং অতিপ্রাকৃত সঙ্গী বা প্রেতাত্মার উপস্থিতির কাহিনী উঠে এসেছে। যা পাঠকদের মধ্যে এক গভীর আতঙ্কের সৃষ্টি করেন। গল্পগুলিতে সায়ন্তনী পূততুন্ড পাঠকদেরকে এমন পরিবেশে নিয়ে গেছেন, যেখানে অন্ধকার, নিস্তব্ধতা, ও অনিশ্চয়তা ঘিরে থাকে।

কাউরীবুড়ির মন্দির

কাউরীবুড়ির মন্দির

কাউরীবুড়ির মন্দির বইটির লেখক হচ্ছে অভীক সরকার। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০২১ সালে। এই বইটি তে ভৌতিক উপন্যাস রয়েছে। যা রহস্য, প্রাচীন বিশ্বাস, ওঅতিপ্রাকৃত ঘটনার মিশেলে এক জটিল ও রহস্যময় জগত সৃষ্টি করে। বইটি মূলত একটা প্রাচীন মন্দির কে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। আর এই মন্দির টি উত্তর আসামের জঙ্গলে অবস্থিত। বইটিতে একটি প্রাচীন ভেষজ পুষ্পের রহস্য আবিষ্কৃত করা হয়। যা যৌনকামনা বৃদ্ধি করতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়। এই রহস্য নিয়ে চাটুজ্জেমশাই উত্তর আসামের জঙ্গলে পাড়ি জমান ও বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মবিশ্বাসের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। এছাড়া ও গল্পটি একটি ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনি ও পারিবারিক কলঙ্কের গল্প রয়েছে। যা এক হারিয়ে যাওয়া উপজাতি সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। বইটিতে ভয়, লোভ, ভালোবাসা এবং অসহায়তা বিবরণ দিয়ে পাঠকদের কে এক গভীর কাহিনীতে টেনে নিয়ে যায়।

মিত্তির বাড়ির গুপ্তধন

মিত্তির বাড়ির গুপ্তধন

মিত্তির বাড়ির গুপ্তধন বইটি লিখেছেন অভীক সরকার। যা ২০২১ সালে ১ জানুয়ারি  দীপ প্রকাশনীতে  প্রকাশিত হয়েছে। এই বইয়ে রহস্যময়, ভৌতিক ও থ্রিলার-ভিত্তিক কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসে ঘটে এক রহস্যময় ও চিত্তাকর্ষক ঘটনা। যেখানে একটি প্রাচীন শিবলিঙ্গের সোনার ত্রিপুণ্ড্রক চুরির রহস্য রয়েছে। এই বইটি তে ১৯৯০ সালের গল্পটির মূল কেন্দ্রবিন্দু ঘুঘুডাঙার জমিদারবাড়ির চারপাশের রহস্যময় চরিত্র এবং তাদের বিংশ শতাব্দীর অদ্ভুত ঘটনা। মিত্তির বাড়ির প্রধান ব্রজনারায়ণ পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ হয়ে ফিরে আসেন ধূমকেতুর মতো, যার রহস্যময় ইতিহাস রয়েছে এই বইয়ে। জমিদারবাড়ি ও আশপাশের চরিত্রগুলোর কাহিনীতে রহস্য ও উত্তেজনা যুক্ত হয়ে উঠেছে। বিংশ শতাব্দীর ঘটনাগুলোর সাথে অতীতের ইতিহাস ও গুপ্তধনের কাহিনীর মিশ্রণ বইটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে হয়েছে।

চক্রসম্বরের পুঁথি

চক্রসম্বরের পুঁথি

চক্রসম্বরের পুঁথি বইটি লিখেছেন অভীক সরকার। যা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মায়াকানন প্রকাশনীতে প্রকাশিত হয়। এই বইটি তে তন্ত্র, মন্ত্র, ও ইতিহাসের গভীরে প্রবেশ করানো হয়েছে। গল্পটি তে তিব্বতি ও ভারতীয় তান্ত্রিক ঐতিহ্য, বিশেষ করে চক্রসম্বর তন্ত্র থেকে অনুপ্রাণিত। বইটি এমন এক রহস্যময় পুঁথির কথা বলে, যা অশুভ শক্তির হাতে পড়লে ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। চক্রসম্বরের পুঁথি উদ্ধার ও তা রক্ষার জন্যে মূল চরিত্রগুলো একটি বিপজ্জনক অভিযানে নামেন। পুঁথির রহস্য উন্মোচনের পথে তাদের নানা বাধা, প্রতারক চরিত্র এবং অতিপ্রাকৃত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। অভীক সরকারের লেখনীর বৈশিষ্ট্য হল তার দ্রুতগামী প্লট। যা গল্পের মধ্যে টানটান উত্তেজনা ধরে রাখা। এই বইটি পাঠকদের একটি গোপন রহস্যের জগতে নিয়ে যায়। যেখানে ইতিহাস ও কল্পনা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভূত প্রেত রক্তচোষা – অনীশ দাস অপু

ভূত প্রেত রক্তচোষা

ভূত প্রেত রক্তচোষা বইটি লিখেছেন অনীশ দাস অপু। যা একুশে বইমেলা ২০২০ সালে অন্বয় প্রকাশনীতে প্রকাশিত হয়। বইটিতে ভৌতিক এবং রহস্যময় ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। যা পাঠকদের এক ভয়ঙ্কর ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দিয়ে থাকেন। ভূত, প্রেত, ও রক্তচোষা পিশাচের গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে এই বইটি। প্রতিটি গল্পে ভয়ের সঙ্গে রোমাঞ্চের সমন্বয় রয়েছে বেশি করে। এছাড়া ও গল্পগুলোতে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দিকসহ অলৌকিক ঘটনা ও অজানা রহস্যকে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি গল্পে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা পাঠককে ধরে রাখে এবং শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে তা জানার জন্য আগ্রহী করে তোলে হয়েছে। অনীশ দাস অপু তাঁর গল্প গুলতে সহজ-সরল ভাষায় দিয়ে উপস্থাপন করেন। যা পাঠকদের মনে আতঙ্কের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

শেষ কথা

ভৌতিক উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে একটি জনপ্রিয় এবং সময়োপযোগী উপাদান। যা পাঠকদের কাছে রহস্য, আতঙ্ক, এবং অতিপ্রাকৃত জগতের প্রতি গভীর আকর্ষণ তৈরি করে। ভৌতিক উপন্যাস গুলো বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্যে জায়গা করে নিয়েছে। এই উপন্যাসগুলির পড়ার  মাধ্যমে পাঠকরা ভৌতিক পরিবেশ ও রহস্যময় গল্পের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে ডুবে যেতে পারে। ভৌতিক সাহিত্যের প্রতি আগ্রহীদের জন্য এগুলো আদর্শ পাঠ হিসেবে বিবেচিত হয়।

About the Author: Rifat

হ্যালো বন্ধুরা, আমি রাফিউল ইসলাম রিফাত। আমি বিডিইবুক সাইটে বাংলা ভাষার বিভিন্ন লেখকের সেরা কিছু বই, বাংলা বেস্ট সেলিনং বই, শিক্ষামূলক, বিভিন্ন লেখক পরিচিতি ইত্যাদি বিষয়ের উপর লেখালিখি করে থাকি। আশাকরি আমার লেখা পড়ে আপনাদের অনেক ভালো লাগবে এবং সেরা সব বাংলা বই সম্পর্কে একটা সুন্দর ধারণা তৈরি হবে।

You May Also Like

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।