সায়েন্স ফিকশন সাধারণত উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সময় ভ্রমণ, সমান্তরাল মহাবিশ্ব ও মহাকাশ অনুসন্ধান এবং বহির্জাগতিক জীবনের মতো কল্পনাপ্রসূত এবং ভবিষ্যত ধারণা নিয়ে কাজ করে। সায়েন্স ফিকশন ধরনটিতে সাহিত্যের কোন কোন বিষয়গুলোকে স্থান দেয়া হবে তা নির্ধারণ করা বেশ দুঃসাধ্য ব্যাপার। যার ফলে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর ব্যাপ্তি বা পরিসর ব্যাপক।
সায়েন্স ফিকশন (বিজ্ঞান কল্পকাহিনী) সাহিত্য এমন এক ধরনের বই যেখানে বিজ্ঞানের তত্ত্ব, প্রযুক্তি এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে কল্পনা করা হয়। এই ধরনের বই পাঠকদের কল্পনার দিগন্ত প্রসারিত করে। যেমন মহাকাশ ভ্রমণ, ভিনগ্রহী প্রাণী, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, টাইম ট্রাভেল, ও ভবিষ্যতের সামাজিক পরিবর্তনের ধারণা।
বাংলা ভাষার সেরা সায়েন্স ফিকশন বই
আধুনিক কল্পসাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা বা শ্রেণী। যাতে ভবিষ্যৎ বৈজ্ঞানিক বা প্রযুক্তিগত আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং মানব সভ্যতাকে কেন্দ্র করে পটভূমি রচনা করা হয়। মানব সভ্যতা মধ্যযুগে থেকে আধুনিক যুগে প্রবেশের সময় যে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সৃষ্টি হয় তার অনিবার্য ফসল ছিল সায়েন্স ফিকশন।
সায়েন্স ফিকশনের বাংলা ভাষায় সেরা বইগুলোর মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বই রয়েছে। যেগুলো বিজ্ঞান, কল্পনা ও সৃষ্টিশীল চিন্তার মেলবন্ধনে নতুন দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। এখানে সেরা কিছু বাংলা ভাষার সায়েন্স ফিকশন বইয়ের তালিকা ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:
কল্পগল্প সমগ্র
কল্পগল্প সমগ্র বইটি লিখেছেন এইচ. জি. ওয়েলস। আর বাংলায় অনুবাদক করেন অদ্রীশ বর্ধন। যা প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালে ফ্যান্টাস্টিক ও কল্পবিশ্ব পাবলিকেশনস প্রকাশনীতে। বইটিতে ২০ টি গল্প ও ৩ টি সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস রয়েছে। এই বইটি মূলত বিভিন্ন সায়েন্স ফিকশন গল্পের সমগ্র। গল্পগুলোতে বৈজ্ঞানিক ধারণা, ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, এবং রহস্যময় ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে। যা এক চমৎকার দুনিয়া উঠে এসেছে।
এখানে সময় ভ্রমণ, ভিনগ্রহের প্রাণী, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এবং অজানা মহাবিশ্ব নিয়ে চিত্তাকর্ষক কাহিনীগুলো স্থান দেওয়া হয়েছে। কল্পগল্প সমগ্র বইটিতে বর্তমান বিজ্ঞান থেকে কল্পনা করে ভবিষ্যতের জগৎকে চিত্রিত করা হয়েছে। যার ফলে মানবজাতির সম্ভাবনা ও সমস্যাগুলোকে গল্পের মধ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বইয়ের সব গল্পগুলো চমকপ্রদ যার কারনে পাঠকদের কাছে খুব জনপ্রিয়।
দ্বিতীয় মানব
দ্বিতীয় মানব বইটি লিখেছেন লেখক হুমায়ূন আহমেদ। একটি বাংলা কল্পকাহিনিমূলক উপন্যাস। এই উপন্যাসটি হোমো সুপিরিয়র (হোমো সেপিয়েন্সের পরবর্তী প্রজন্ম) এর অতি প্রাকৃতিক শক্তির সাথে সম্পর্কিত এবং এটি ১৯১১ সালের বিজ্ঞান কথাসাহিত্য উপন্যাস দ্য হ্যাম্পডেনশায়ার ওয়ান্ডার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা। এই বইটির মূল চরিত্র হল খলিলুল্লাহ যিনি বিশেষ ক্ষমতা অধিকারী। তিনি বেশ কয়েক ঘণ্টা অক্সিজেন ছাড়া পানির নিচে থাকতে পারে।
আবার কোনও সরঞ্জাম এবং কোনও প্রশিক্ষণ ছাড়াই বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম ঠিক করতে পারে। খলিলুল্লাহর বিশেষ ক্ষমতার পুনঃপুঙ্খ পরীক্ষা সত্ত্বেও, রহস্যটি অমীমাংসিত থাকে। এই বইটির অরেকটি চরিত্র হল মেহতাবউদ্দিন মেয়ে টুনটুনি। এক সময় টুনটুনি, খলিলুল্লাহর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। টুনটুনির মা অকালে মারা যাওয়ার কথা শুনে খলিলুল্লাহর একটি যন্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করেন। যা মৃত মানুষের সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করবে।
টাইম মেশিন
টাইম মেশিন বইটি লিখেছেন লেখক এইচ জি ওয়েলসের। যা বাংলা অনুবাদ করেছেন মোস্তফা মীর। একটি ক্লাসিক সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস। যা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেন। সময়ভ্রমণের ধারণাকে কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু করে একটি অনন্য গল্প গড়ে তোলা হয়েছে উপন্যাসটিতে। মোস্তফা মীর তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যা ও দৃষ্টিকোণ থেকে কাহিনীটি পুনর্নির্মাণ করেছেন। গল্পটি একজন বিজ্ঞানীর টাইম ট্রাভেলার আবিষ্কার করা একটি টাইম মেশিনকে কেন্দ্র করে। তিনি তার মেশিনের সাহায্যে ভবিষ্যতে ভ্রমণ করেন ও এক অদ্ভুত পৃথিবীর মুখোমুখি হন।
তিনি এই মেশিন ব্যবহার করে ৮০২,৭০১ খ্রিস্টাব্দে ভবিষ্যতের পৃথিবীতে যান। সেখানে তিনি ইলোই এবং মর্লক নামের দুটি জাতির সাথে পরিচিত হন। ইলোইরা হল এক শান্তিপ্রিয়, সরল ও সুখী জাতি, যারা ভবিষ্যতের পৃথিবীর উপরিভাগে বাস করে। তারা নিষ্কর্মা এবং দৈনন্দিন সংগ্রামহীন জীবনযাপন করে। আর মর্লকস এক বর্বর ও অন্ধকারবাসী জাতি, যারা পৃথিবীর নিচের অংশে বাস করে। তারা ইলোইদের শত্রু এবং মূলত তাদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন।
দূর পৃথিবীর ডাক
দূর পৃথিবীর ডাক বইটি লিখেছেন লেখক আর্থার সি ক্লার্ক। যা বাংলায় আনুবাদ করেন মিজানুর রহমান এবং সন্দেশ প্রকাশনী প্রকাশিত হয়। বইটিতে মহাকাশ অভিযানের পটভূমিতে রচিত হয়। যেখানে দূরবর্তী গ্রহ বা নক্ষত্রমণ্ডল থেকে সম্ভাব্য সংকেতের সন্ধান ও তা বিশ্লেষণ করার ঘটনা উঠে এসেছে। গল্পটি শুরু হয় মহাকাশ থেকে আগত এক অজানা সংকেত পাওয়ার মাধ্যমে। এই সংকেতের অর্থ উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে একদল বিজ্ঞানী ও মহাকাশ গবেষক।
বইয়ের মূল উপজীব্য হল পৃথিবীর বাইরে বুদ্ধিমান প্রাণের অস্তিত্ব এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের প্রচেষ্টা। মানুষের অজানা জগৎ সম্পর্কে কৌতূহল যেমন রয়েছে। তেমনি রয়েছে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য বিপদের শঙ্কা। দূর পৃথিবীর ডাক কেবল একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নয়। এটি পাঠকদের মহাবিশ্বের প্রতি কৌতূহলী করে তোলে ও আমাদের অস্তিত্বের সীমা নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। বিজ্ঞানভিত্তিক বর্ণনার পাশাপাশি লেখকের কল্পনার নিপুণ প্রয়োগ বইটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছেন।
ওমেগা পয়েন্ট
ওমেগা পয়েন্ট উপন্যাসটি একটি দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মিশ্রণ যা লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ। বইটি একটি সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস। যা বিজ্ঞান, ভালোবাসা এবং মানবতার জটিল দ্বন্দ্বের এক অসাধারণ মেলবন্ধন। উপন্যাসের মূল চরিত্র রফিক। যার জীবন দুটি ভিন্ন সময়ে বিভক্ত। সে একজন গ্রামীণ স্কুলশিক্ষক। যার জীবনে প্রেম ও সামাজিক টানাপড়েনের মধ্যে আটকে থাকে। অপর দিকে ভবিষ্যতের একটি বৈজ্ঞানিক দুনিয়ায়, সে পরিচিত রেফ নামে।
যেখানে তার অস্তিত্ব জড়িত এক গভীর পরীক্ষার সঙ্গে। সে প্যারালাল জগতের একটি বড় রহস্যের কেন্দ্রে। যেখানে বিজ্ঞান কাউন্সিল তার ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নেয়। শেষ পর্যন্ত, ওমেগা পয়েন্টের নির্দেশনায় রেফ জানতে পারে যে সে এবং শেফা হচ্ছে মানব সভ্যতার আদি পিতা-মাতা যাদের মাধ্যমে সময় সমীকরণের সমাধান হবে। এই উপন্যাস শুধু সায়েন্স ফিকশন নয়। এটি মানুষের অস্তিত্ব, ভালোবাসা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনার একটি গভীর অনুসন্ধান।
পুনশ্চ প্রোফেসর শঙ্কু
পুনশ্চ প্রোফেসর শঙ্কু বইটি লিখেছেন সত্যজিৎ রায়। যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রকাশনিতে। এই বইটিতে ৪ টি গল্প রয়েছে। যেমনঃ আশ্চর্জন্তু, শঙ্কু ও আদিম মানুষ, শঙ্কুর পরলোকচর্চা, প্রোফেসর রণ্ডির টাইম মেশিন। এই বইটি প্রফেসর শঙ্কুর বেশ কয়েকটি ভিন্নধর্মী ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকে একত্রিত করে পাঠকদের সামনে এনেছে। একাধারে বিজ্ঞান, কল্পনা, ও রহস্য দিয়ে রচিত হয়েছে।
প্রোফেসর শঙ্কু তার উদ্ভাবনী মস্তিষ্ক এবং নৈতিকতার সাহায্যে বিভিন্ন অসম্ভব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন। তিনি নতুন নতুন অনেক কিছু আবিষ্কার করেন। যেমন অমরত্বের সূত্র, অদৃশ্য হওয়ার ওষুধ বা সময় ভ্রমণের প্রযুক্তি। এ ছাড়া বিভিন্ন বিপজ্জনক পরিস্থিতি ও রহস্যময় স্থানে অভিযান এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার ফলাফল পাঠকদের কৌতূহলী করে তোলে। পুনশ্চ প্রোফেসর শঙ্কু বইটি শুধু কিশোরদের জন্য নয়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও এক আকর্ষণীয় পাঠ্য। এটি বিজ্ঞান, কল্পনা এবং অন্বেষার এক অনন্য সংকলন।
আমি পরামানব
আমি পরামানব বইটি লিখেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। যা ২০২২ সালে সময় প্রকাশনীতে প্রকাশিত হয়েছে। এই বইটি একটি বিশেষ চরিত্র ও কাহিনির মাধ্যমে পাঠকদের কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যায়। যেখানে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে নিজেকে অস্বাভাবিক শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে আবিষ্কার করেন। গল্পটি একটি অতিরিক্ত মানব প্রজাতির জন্ম দেওয়ার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে।
যেখানে মানুষ তাদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও আধুনিক জ্ঞানকে ব্যবহার করে নতুন প্রজাতি তৈরি করতে চায়। যা তাদের চেয়ে উন্নত হবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়। সৃষ্টি করে পরামানবদের। প্রযুক্তি আমাদের কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ভবিষ্যতে এই অতিমানবদের প্রজাতির উদ্ভব মানুষের জন্য কেমন হতে পারে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের এই উপন্যাস কল্পবিজ্ঞান ও মানবিক অনুভূতির সংমিশ্রণে সমাজের অসংগতি, প্রযুক্তির অপব্যবহার, ও প্রকৃতির প্রতিশোধের বিষয়ে পাঠককে ভাবিয়ে তোলে।
কল্পবিজ্ঞান সমগ্র
কল্পবিজ্ঞান সমগ্র বইটি লিখেছেন রেবন্ত গোস্বামী। যা ২০২০ সালে কল্প বিস্ব পাবলিকেশন (ভারত) প্রকাশনীতে প্রকাশিত হয়। কল্পবিজ্ঞান সমগ্র বইটি রেবন্ত গোস্বামীর সায়েন্স ফিকশন গল্পের একটি অসাধারণ সংকলন। যেখানে লেখক বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, রহস্যময় ঘটনা, ও প্রযুক্তির প্রভাবের গল্পগুলো তুলে ধরেছেন। এ বইটি শুধুমাত্র কল্পনা নির্ভর নয়।
বিজ্ঞানসম্মত ধারণার সঙ্গে মানবজীবনের সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলোও তুলে ধরেছেন। গল্পগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি, রোবটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ গবেষণা এবং ভবিষ্যতের দুনিয়ার সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের পাশাপাশি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটও আলাপ – অলোচনা হয়েছে। বইটি পাঠককে কল্পনার জগতে নতুন ভাবে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করেন। যা বাংলা কল্পবিজ্ঞানের সমৃদ্ধি আরও এগিয়ে নিয়ে যায়।
বানিয়ালুলু
বানিয়ালুলু বইটি শিবব্রত বর্মনের লেখা একটি জনপ্রিয় বাংলা উপন্যাস। যা ২০১৯ সালে বাতিঘর প্রকাশনীতে প্রকাশিত হয়। বইটিতে বিজ্ঞান-কল্পকাহিনির চেনা সীমানা ডিঙিয়ে এই গল্পগুলোতে বিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসির এমন এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে। যা পাঠককে মুগ্ধ ও স্তম্ভিত করে রাখবে। বইটিতে মোটঃ ১১ টি গল্প রয়েছে। যেমনঃ বানিয়ালুলু, জাগার বেলা হলো, দুই শিল্পী, ভেতরে আসতে পারি?, প্রতিদ্বন্দ্বী, দ্বিখণ্ডিত, ড. মারদ্রুসের বাগান, বহুযুগের ওপার হতে, সার্কাডিয়ান ছন্দ, বুলগাশেম প্যারাডক্স,মইদুল ইসলামের শেষ তিন উপন্যাস। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন যুবক।
যার জীবনে এক রহস্যময় পরিবর্তন ঘটে। তাকে নিয়ে গল্পটি এগিয়ে যায় এক অদ্ভুত জগতে—যেখানে বাস্তবতা, কল্পনা ও রূপকথার অনুষঙ্গ মিলেমিশে একটি গভীর ও আকর্ষণীয় আখ্যান সৃষ্টি করে। বানিয়ালুলু আসলে এক প্রতীক। যা জীবনের গভীরতম ইচ্ছা, স্বপ্ন এবং মানব সম্পর্কের জটিলতাকে তুলে ধরে। বানিয়ালুলু গল্পগ্রন্থে শিবব্রত বর্মন বিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসির এমন এক কল্পলোক তৈরি করেছেন যা পাঠককে একই সঙ্গে আবিষ্ট করে রাখে অনুসন্ধিৎসায় ও সন্তরণমগ্নতায়।
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মিনি সায়েন্স ফিকশন
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মিনি সায়েন্স ফিকশন বইটি লিখেছেন রণেন ঘোষ। যা ২০১১ সালে প্রতিশ্রুতি (ভারত) প্রকাশনীতে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে মোট বাছাই করা ৪১টি বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান গল্প রয়েছে। সম্পাদক ও অনুবাদক রণেন ঘোষ বেছে নিয়েছেন একচল্লিশটি সেরা ছোটো সায়েন্স ফিকশন গল্পকে এই সংকলনে। এই গল্পগুলোতে বৈজ্ঞানিক কল্পনা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, ভবিষ্যতের ধারণা ও মানুষের সঙ্গে প্রযুক্তির সম্পর্কের গভীরতা অন্বেষণ করা হয়েছে।
গল্পের বিষয়বস্তুতে সমাজ, সভ্যতা, এবং ভবিষ্যতের পৃথিবীর এক সম্ভাব্য চিত্র ফুটে ওঠে। এই বইটি সায়েন্স ফিকশনের ভক্তদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষ করে যারা ছোট ও প্রভাবশালী গল্প পড়তে পছন্দ করেন। এটি কেবলমাত্র কল্পবিজ্ঞানের জন্য নয়, বরং মানুষের মনস্তত্ত্ব এবং সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনারও একটি আয়না।
১৫১৩ সাল
১৫১৩ সাল বইটি লিখেছেন সত্যভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যা বোস লাইব্রেরী প্রকাশীত করেন। এই বইটি কাল্পনিক ঐতিহাসিক উপন্যাস। যা অতীতের একটি বিশেষ সময়কে কেন্দ্র করে রচিত হয়। বইটি ঐতিহাসিক তথ্য, কল্পনার রোমাঞ্চ, ও সামাজিক বিশ্লেষণের মিশ্রণ। ১৫১৩ সালের প্রেক্ষাপটে তৎকালীন সমাজ, রাজনীতি, ও সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব তুলে ধরা হয়েছে। শাসকদের শক্তি এবং সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র এতে স্পষ্ট। বইটির কাহিনিতে সময়ের ইতিহাস এবং চরিত্রগুলো বাস্তব এবং কল্পনার সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে। এতে ক্ষমতার লড়াই, বিশ্বাসঘাতকতা, ও সাধারণ মানুষের সংগ্রামের গল্প চিত্রিত হয়েছে।
সত্যভূষণ তার লেখার মাধ্যমে ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলার চেষ্টা করেছেন। যেখানে স্থান পেয়েছে প্রেম, লোভ, ষড়যন্ত্র, এবং মানবিক অনুভূতির উপস্থাপন। এই বই কেবল একটি সময়কালকে চিত্রিত করে না। যা মানুষের মনোজগত, সংগ্রাম, এবং ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে জীবনবোধের সংশ্লেষ ঘটিয়েছে। বইটি ঐতিহাসিক উপন্যাসের ধারায় একটি প্রভাবশালী কাজ করে। যারা ইতিহাস ও কল্পনার মিশ্রণে রচিত গল্প পড়তে পছন্দ করেন, তাদের জন্য অত্যন্ত এই বই টি আকর্ষণীয়।
৩০০১ : দ্য ফাইনাল ওডিসি
৩০০১ : দ্য ফাইনাল ওডিসি বইটির লেখক আর্থার সি ক্লার্ক। যা বাংলায় অনুবাদ করেন মাকসুদুজ্জামান খান। বইটির বুক ক্লাব প্রকাশনীতে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি কল্পনার ভবিষ্যৎ পৃথিবী এবং মহাকাশের গল্প। ৩০০১ সালের পৃথিবীতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির শিখরে পৌঁছানোর কাহিনী এবং মানব সভ্যতার সম্ভাবনা নিয়ে রচিত হয়। এই গল্পের প্রধান চরিত্র ফ্র্যাঙ্ক পোল। যিনি ২০০১: এ স্পেস ওডিসির সময় মহাকাশে নিখোঁজ হন। তাকে ভবিষ্যতে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। তখনকার উন্নত প্রযুক্তি তাকে আবার জীবন দেয়।
পোল আবিষ্কার করেন যে পৃথিবী এবং মানুষ এতটাই পরিবর্তিত হয়েছে যে সে একটি নতুন পৃথিবী দেখতে পায়। তার সাথে থাকে সেই মনোলিথ। যা প্রথম বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র ছিল। এই মনোলিথ এবং তার নির্মাতাদের উদ্দেশ্য নিয়ে গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে আলোচনা করা হয়েছে। অবশেষে, গল্পটি মানবসভ্যতার মহাবিশ্বের অজানার প্রতি কৌতূহল এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে ছুঁয়ে যায়। মাকসুদুজ্জামান খানের অনুবাদে বইটি সহজ ভাষায় উপস্থাপিত করা হয়েছে। যা বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের জন্য আর্থার সি ক্লার্কের জটিল ভবিষ্যৎ কল্পনাকে আরো কাছাকাছি নিয়ে আসে।
শঙ্কু একাই ১০০
শঙ্কু একাই ১০০ বইটি লিখেছেন সত্যজিৎ রায়। প্রোফেসর শঙ্কু সিরিজের একটি বই। যা ১৯৮৩ সালে আনন্দ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। বইটি মোট ৪ টি গল্প রয়েছে। গল্পগুলো হলঃ মহাকাশের দূত, শঙ্কুর কঙ্গো অভিযান, নকুড়বাবু ও এল ডোরাড্ প্রোফেসর শঙ্কু ও ইউ.এফ.ও.। প্রফেসর শঙ্কু একজন প্রতিভাধর বিজ্ঞানী। যার অসংখ্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও রোমাঞ্চকর অভিযান এই বইয়ের গল্পগুলোতে উঠে এসেছে। গল্পগুলির মূল উপজীব্য হল শঙ্কুর আবিষ্কার, ভ্রমণ, ও তার অসাধারণ বৈজ্ঞানিক প্রতিভা।
গল্পগুলির মাধ্যমে শুধু বৈজ্ঞানিক কল্পনার দুনিয়া নয়। প্রকৃত বিজ্ঞানের সাথে গল্পের সংযোগ ঘটিয়ে বাস্তববোধের এক অপূর্ব মিশ্রণ গড়ে তোলা হয়েছে। শঙ্কুর বিভিন্ন আবিষ্কার যেমন মিরাকিউরল (মাল্টিপারপাস ওষুধ), অ্যানাইহিলিন (ধ্বংস করার অস্ত্র), বা তার রোবট বাইডুর মতো বিষয়গুলো এ বইয়ের মাধ্যমে পাঠকদের মুগ্ধ করেন। এই বইটি প্রফেসর শঙ্কু প্রেমীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ। এটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ সংযোজন।
প্রডিজি
প্রডিজি বইটির লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। যা ২০১১ সালে জ্ঞানকোষ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। প্রডিজি মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি বহুল আলোচিত সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হল একটি অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান ছেলে। তার প্রতিভা সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি। যা তাকে সমাজের থেকে আলাদা করে তোলে। কিন্তু এই মেধা তাকে নানা সমস্যার মুখোমুখি করে।
কারণ সে নিজের ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার এবং তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর পদ্ধতি খুঁজে পায় না। গল্পটিতে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রভাব, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, ও নতুন জীবন-পদ্ধতির কথাও তুলে ধরেছেন। গল্পের পরিণতিতে কিশোরটি তার জীবনের দিক পরিবর্তন করে। এবং তার প্রতিভাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর পথ খুঁজে পায়। এটি পাঠকদের মনে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যা আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্ন পূরণের প্রেরণা দেয়। প্রডিজি কিশোর-কিশোরীসহ সব বয়সের পাঠকের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার বই।
শেষ কথা
সায়েন্স ফিকশন বইয়ের মূলত নির্ভর করে তার বিষয়বস্তু ওপর। বেশিরভাগ সায়েন্স ফিকশন গল্প বা উপন্যাসের শেষ বার্তা মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ। যা প্রযুক্তির প্রভাব, নৈতিকতা, পরিবেশগত টানাপোড়েন, বা অজানা জগতের রহস্য উন্মোচনের উপর ভিত্তি করে থাকে। সায়েন্স ফিকশন শুধু কল্পনা নয়। এটি ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সতর্কবার্তা এবং চিন্তার খোরাক।