বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতি সংক্ষিপ্ত পটভূমি

বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতি সংক্ষিপ্ত পটভূমি

বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ বছর পর পর সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন দ্বারা এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদের জাতীয় সংসদ ও আইনসভা এক কক্ষ বিশিষ্ট। জনগণের ভোটে ৩০০ জন্য সংসদ সদস্যকে এ আইন সভার জন্য নির্বাচিত করা হয়। সংসদ সদস্য সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে ৫০ জন মহিলাকে সংসদ সদস্যরূপে মনোনীত করা হয়। সরকার বা প্রধানমন্ত্রী হয় নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের নেতা। যদি দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাই, তখন কোন দলের জোট থেকে কে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পাবেন, তা রাষ্ট্রপতিই নির্ধারণ করে দেয়। রাষ্ট্রপতি হচ্ছে একজন রাষ্ট্রের প্রধান ব্যাক্তি। যিনি জাতীয় সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হওয়ার পর ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা সরকার প্রধানের হাতে থাকে।

বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতি সংক্ষিপ্ত পটভূমি

ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে বাংলাদেশের জনগন স্বাধীনতার জন্য অনেক আন্দোলনে করেন। এই আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার জন্য কাজ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব। পাকিস্তান আমল (১৯৪৭-১৯৭১) সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক শাসন, ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), এবং অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জনগন। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ মুজিব রহমান। এবং ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। সেই বছর এক সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব নিহত হন। (১৯৭৫ – ১৯৯০) সালে জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। এই সময়ে বহুদলীয় রাজনীতি চালু হয়। এছাড়া ও এরশাদ সরকারের পতন হয় ১৯৯১ সালে ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দুইটি দল হচ্ছে (জিয়াউর রহমানের দল) বিএনপি ও (শেখ মুজিবের দল) আওয়ামী লীগ। বর্তমানে রাজনৈতিক বিরোধিতা দল দুটি তীব্র এবং সহিংস হয়ে ওঠে।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৭৩)

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৭৩)

বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে ৭ই মার্চ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে এবং নির্বাচন আয়োজন করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দল জয় লাভ করেন। এই নির্বাচনে অন্যান্য দলসমূহও অংশগ্রহণ করেছিল। তবে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী দল ছিল। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের কারণে আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পায়। বাংলাদেশের ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৯৩ আসনে বিপুল পরিমান ভোটে জয় লাভ করেন। সংগৃহীত ভোট হয়েছিল মোট ৫৪.৯%। ১১ টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এই সময় ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ৩.৫৭ কোটি। এই ভোটে অন্যান্য ছোট রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেয়। এই নির্বাচনে দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রহমান। সরকার গঠন পর সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ৭ এপ্রিল । সংরক্ষিত মহিলা আসনের ১৫ জনসহ মোট ৩১৫ জন সংসদ সদস্য নিয়ে প্রথম সংসদ যাত্রা শুরু করে। সংসদ সদস্য দ্বারা সংসদের স্পিকার মোহাম্মদউল্লাহ ও ডেপুটি স্পিকার মোহাম্মদ বায়তুল্লাহ নির্বাচিত হন।

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৭৯)

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৭৯)

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালে। এই নির্বাচন ছিল বিএনপির প্রথম জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মুহূর্ত হয়ে উঠে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২০৭ টি আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জয় লাভ করে। এবং আওয়ামী লীগ মাত্র ৩৯টি আসন জিতে বিরোধী দলের আসন দখল করে। মোট ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ৫১.৩%। এছাড়া ও মুসলিম লীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ ২০, জাসদ ৮, ন্যাপ (মোজাফফর) ১, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ২,বাংলাদেশ গণফ্রন্ট ২,বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ১, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ১, জাতীয় একতা পার্টি ১ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬টি আসনে জিতেন। এই নির্বাচন সামরিক শাসন থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফেরার একটি গুরুত্বপূর্ণ  অংশ ছিল। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোতে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করে।

তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৮৬)

তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৮৬)

বাংলাদেশে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৮৬ সালে ৭ই মে। এই নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিল ১,৫২৭ জন। জাতীয় পার্টি ৩০০ টি আসনের মধ্যে ১৫৩ টি আসনের নির্বাচনে জয় লাভ করেন। এই নির্বাচনটি বর্জন করেন বিএনপি। মোট ভোটারের ৬১.১% ভোট সংগৃহীত হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। এ ছাড়া ও আওয়ামী লীগ ৭৬টি আসন লাভ করেন। যা সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে।অন্যান্য দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বাকি আসন দখল করে। বিএনপি ও অন্যান্য কিছু দল রয়েছে যারা এই নির্বাচন বর্জন করে। বিরোধী কিছু দল রয়েছে তারা এই নির্বাচনকে অবৈধ বলে অভিহিত করে। এই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক কারচুপি, জালিয়াতি এবং সহিংসতার অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনের পরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৮৮)

চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৮৮)

চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৩ মার্চ ১৯৮৮ সালে। এই নির্বাচন ছিল ব্যাপক বিতর্কিত নির্বাচন। তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। জাতীয় পার্টিরা এই নির্বাচনকে অবৈধ ও সরকারের পক্ষপাতিত্বপূর্ণ বলে দাবি করে। এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রধান দলই বর্জন করেছিল। যেমনঃ বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী, কমিউনিস্ট পার্টি, কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় আওয়ামী পার্টি। প্রধান বিরোধী দলগুলোর অনুপস্থিতি থাকায় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে যায়। এই নির্বাচনে ৩০০ টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি ২৫১ টি আসনে জয় লাভ করে। মোট ভোটারদের মধ্যে ৫২.৫% ভোট গৃহীত হয়েছিল। সব দল অভিযোগ করে যে এরশাদের শাসনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, জালিয়াতি, এবং সহিংসতার অভিযোগ ওঠে। চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলে স্বীকার করেনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন তীব্র করে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে গুলো তে। এই নির্বাচন এরশাদ ক্ষমতায় থাকার পর বিরোধী দলের আন্দোলন ক্রমাগত বাড়তে থাকে ফলে তিনি ১৯৯০ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৯১)

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৯১)

বাংলাদেশে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯১ সালে ২৭শে ফেব্রুয়ারি। ১৯৮২-১৯৯০ সালের স্বৈরশাসনের পর ১৯৯০ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা উপহার পায় নির্বাচনের মাধ্যমেই। এই নির্বাচন ছিল তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এটি ছিল প্রথম নির্বাচন। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল ছিল আওয়ামী লীগে যার নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যার নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ টি আসনের মধ্যে ১৪২ আসনে জয় লাভ করেন বিএনপি দল। এই নির্বাচনে ৩০০ টি আসনের বিপরীতে ৭৫ টি দল ও সতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট অংশ গ্রহন করেন ২৭৮৭ জন প্রার্থী। মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল ৫৫.৪%। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভিত্তি তৈরি হয় এই নির্বাচনের কারনে।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬)

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬)

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি। এই নির্বাচনটি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং বিএনপি সরকারের অধীনে আয়োজিত হয়। নির্বাচনটি একটি রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত বিতর্কিত এবং একপক্ষীয় নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত। এই নির্বাচন কে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জামায়াতে ইসলামীসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো বর্জন করে। ভোটার উপস্থিতি ছিল খুব কম এই নির্বাচনে। সব দলের দাবি ছিল একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। ৩০০ টি আসনের মধ্যে ৩০০ টি আসন লাভ করেন বিএনপি দল। মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১%। সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট সংসদ ছিল এটি। এই নির্বাচনের পর ১৯ মার্চ ১৯৯৬ সালে প্রথম সংসদ অধিবেশন শুরু হয়েছিল। যার স্থায়ী ছিল ৪ কার্যদিবস অধিবেশন। যা ২৫ মার্চ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চলে। এবং ১৯৯৬ সালে ৩০ মার্চ সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। মাত্র ১২ দিন স্থায়ী ছিল এই অধিবেশন। এই নির্বাচনের পরে দেশব্যাপী হরতাল, অবরোধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তীব্র হয়।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬)

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬)

বাংলাদেশে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে ১২ জুন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপক বিতর্কিত এবং একপক্ষীয় ছিল, কারণ প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছিল। এই নির্বাচনে প্রধান দুই টি দল ছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৮১টি দল ও সতন্ত্র প্রার্থীসহ মোটঃ ২৫৭৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। ৩০০ টি আসনের মধ্যে ১৪৬ আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। এছাড়া ও বিএনপি (খালেদা জিয়া নেতৃত্বে) ১১৬টি আসন পেয়েছিল। এবং জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩২টি আসন পায়। এই নির্বাচনে সরকার গঠন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। বিরোধী দলগুলোর কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলা করা হয় এই নির্বাচনের পরপরই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। যা পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০০১)

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০০১)

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালে  ১ অক্টোবর। এই নির্বাচনে প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অংশ গ্রহন করে। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ টি আসনের বিপরীতে সতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫৪টি দল থেকে মোট ১৯৩৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে। এই নির্বাচন তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বিতীয় নির্বাচন। এই সময় লতিফুর রহমান ছিলেন তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি ১৯৩ টি আসনে জয় লাভ করে। এছাড়া ও আওয়ামী লীগ ৬২, জামায়াতে ইসলামী ১৭, জাতীয় পার্টি ১৪টি আসন অর্জন করে। এই নির্বাচনে উপস্থিতি ছিল প্রায় ৭৫%।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০০৮)

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০০৮)

বাংলাদেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে ২৯শে ডিসেম্বর। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ-এর নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকারের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ডিজিটাল ভোটার তালিকা ব্যবহার করা হয় এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো। যা সঠিক ভাবে ভোটার কে শনাক্ত করা যায়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এই নির্বাচনে ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৩০ আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। মোট ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রায় ৮৭%। এই নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। এটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সফলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয় এবং দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের জন্য একটি মাইলফলক তৈরি করে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০১৪)

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০১৪)

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারি। এই নির্বাচন ছিল বিতর্কিত নির্বাচন। কারণ হচ্ছে এই নির্বাচনে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তাদের জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এই নির্বাচন নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে। যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করে। যার ফলে ১৫৩টি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছড়া জয় লাভ করে। এই নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৩৪ টি আসনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দল। এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ৪০% এবং রাজধানী ঢাকায় ২২% এর মতো ছিল। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে এই নির্বাচন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০১৮)

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০১৮)

বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০১৮ সালে ৩০ শে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পথ দেখায়। পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে ২০১৮ সালের নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে। কে এম নুরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এই নির্বাচনে বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সহ ৩৯ টি দলের ১৮৪৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা হলঃ ১০,৪১,৯০,৪৮০ জন। যার মধ্যে ৫,২৫,৪৭,৩২৯ জন পুরুষ ও ৫,১৬,৪৩,১৫১ জন নারী ভোটার। এই নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ছিল ৪০,১৯৯টি। এবং প্রথমবারের মত ৬টি নির্বাচনী আসনে সম্পূর্ণভাবে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট গ্রহণ করা হয়। ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৫৭ টি আসনের আওয়ামী লীগ জয় লাভ করেন। ২০২০ সালের ১১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের তৈরি প্রতিবেদনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করা হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০২৪)

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০২৪)

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। এই নির্বাচনে প্রায় ১১ কোটি ৯৭ লাখ ভোটার ছিল। যার মধ্যে পুরুষ, নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিল। ২০২৩ ডিসেম্বর এর মধ্যেই মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, আপিল, এবং প্রতীক বরাদ্দের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছিল। ১৭ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। তার তিন সপ্তাহ পর হয় ভোটগ্রহণ। এই নির্বাচন মূলত একটি একতরফা নির্বাচন। বিদেশে সমালোচিত, এই নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি করা হয়। ২৭.১৫% ভোট পড়ে বিকাল ৩ টায় সময় এই তথ্য দেয় নির্বাচন কমিশন। তার ১ ঘণ্টা পর ভোট শেষ হলে জানানো হয় ৪১% ভোট পড়েছে। ১ ঘন্টায় ১৩% ভোট,যা কল্পনার বাহিরে কারচুপির উদাহরন। এই নির্বাচনে ৩০০ টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২২ আসন পেয়ে জয় লাভ করে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১,কল্যাণ পার্টি ১, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, জাসদ ১ ও তন্ত্র প্রার্থীরা ৬২ আসনে বিজয়ী লাভ করে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মনে করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। ৬ আগষ্ট ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।

শেষ কথা

নির্বাচন হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতীক। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দেশের নীতি, উন্নয়ন, এবং আইন প্রণয়নে জনগণের মতামতকে প্রতিফলিত করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বেশ কয়েকটি সফল নির্বাচন হয়েছে বাংলাদেশে। যা অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটাধিকার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সহিংসতামুক্ত নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সব পক্ষের প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

About the Author: Taufik

হ্যালো বন্ধুরা, আমি তৌফিক বিডিইবুক সাইটের একজন কন্টেন্ট লেখক। আমি মূলত বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বাংলা ভাষার বই নিয়ে লেখালিখি করে থাকি। বিডিইবুক সাইটে আমার লেখা পড়লে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলা ভাষার বই সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমি সব সময় সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করে থাকি যা আপনারা আমার লেখা পড়লেই বুজঝতে পারবেন।

You May Also Like

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।