সেরা বই

১০ টি বিখ্যাত প্রবন্ধের নাম ও সারসংক্ষেপ আলোচনা

প্রবন্ধ হলো সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা যেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তি, তথ্য ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে লেখা হয়। একটি প্রবন্ধ সাধারণত গদ্যরূপে রচিত হয় এবং একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর মনোযোগ প্রদান করা হয়। প্রবন্ধ্যে লেখক তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং পর্যবেক্ষণের আলোকে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ধারণাকে বিশ্লেষণ করে থাকেন। প্রবন্ধের ভাষা অতি সহজ এবং স্পষ্ট হয়ে থাকে যাতে পাঠক সহজে মূল বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে।

প্রবন্ধ বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখা হয়ে থাকে, যেমন বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধের মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ইত্যাদি। আবার ব্যক্তি বিষয়ক প্রবন্ধের মধ্যে কোন ব্যক্তি বা তার জীবনের বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে বিশেষ তত্ত্ব বা দর্শন নিয়ে প্রবন্ধ লেকখা হয়ে থাকে, আবার সাহিত্যকর্ম বা সাহিত্যিকদের নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। একটি প্রবন্ধের মাধ্যমে সমাজ, সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং এটি পাঠকের চিন্তাশক্তিকে উদ্দীপিত করে এবং একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।

১০ টি বিখ্যাত প্রবন্ধের নাম ও সারসংক্ষেপ

প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ দিক যার মাধ্যমে আমরা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিষধভাবে জানতে, বুঝতে এবং উপলব্ধি করতে পারি। প্রবন্ধে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বর্ণনামূলক ভাবে আলোচনা করা হয় যার ফলে পাঠকগণ অনেক সহজে মূল বিষয়টি বুঝতে পারে। আজকের এই লেখাটিতে আমরা বাংলা ভাষার কিছু বিখ্যাত প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করে চলেছি। এখানে ১০টি বিখ্যাত প্রবন্ধ এবং তাদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলচোনা করা হবে আশাকরি তা আপনাদের ভাল লাগবে।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী

অসমাপ্ত আত্মজীবনী শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা তার রাজনৈতিক জীবনের উত্থান এবং সংগ্রামের কথা নিয়ে রচিত একটি আত্মজীবনীমূলক প্রবন্ধ। এখানে তার জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন জানা অজানা কথা নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। এখানে ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শাসকদের নিপীড়ন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তার ত্যাগের কথা আলোচনা করা হয়েছে। এখান তিনি তার শৈশব, শিক্ষাজীবন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন অজানা কথা তুলে ধরেছেন।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রবন্ধে শেখ মুজিবুর রহমান তার শৈশবের জীবন থেকে শুরু করে এক রাজনৈতিক নেতায় রূপান্তরের এক জটিল পথ সম্পর্কে তুলে ধরেছেন। তিনি বাঙালি জাতির মধ্যে কিভাবে স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করেছিলেন তা গভিরভাবে আলোচনা করেছেন। বাংলার মানুষদের পাকিস্তানি শাসকদের হাত থেকে মুক্তির জন্য তার যে অদম্য মনোভাব তা এখানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এই প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধুর কারাগারে বন্দী জীবনের যন্ত্রণার কথা ফুটে উঠেছে। কারাগারে বন্দি জীবনে তার পরিবারের প্রতি তার গভীর ভালবোবাসার চিত্র এই প্রবন্ধে মানবিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ করে তুলে ধরেছেন। এই প্রবন্ধ পড়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনের রাজনৈতিক আদর্শ এবং সংগ্রামের দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে অনুপ্রানিত করবে।

সভ্যতার সংকট

সভ্যতার সংকট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি বিখ্যাত প্রবন্ধ। প্রবন্ধটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটেকে ঘিরে রচনা করেছেন। এখানে বিশ্বযুদ্ধের পর মানবজাতির যে নৈতিক অবক্ষয় এবং সভ্যতার সংকট দেখা দিয়েছিল মূলত এটি নিয়ে প্রবন্ধটি গভীরভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি আধনিক প্রযুক্তি ও সভ্যতার উন্নতির মধ্যে মানবতার আবনতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই প্রবন্ধে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা এবং তার মানবিক মূল্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন আধনিক সভ্যতার প্রগতি মানুষকে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রদান করলেও মানুষের নৈতিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি মনে করছেন মানুষের মধ্যে সভ্যতার উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু মানুষের মাঝে প্রেম, মমতা এবং দায়িত্ববোধ হারিয়ে গিয়েছে। যার ফলে বিশ্ব রাজনীতির অসংগতি যে মানবিক সংকটের সৃষ্টি করেছে তা তিনি তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন, মানুষের আত্মিক উন্নয়নই প্রকৃত সভ্যতার পরিচয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেন মানুষের মনে প্রেম, ভালোবাসা, মায়া মমতা এবং দায়িত্ববোধ সৃষ্টি না করতে পারলে সভ্যতার এ উন্নয়ন কোন কাজের না।

বাংলার সংস্কৃতি

বাংলার সংস্কৃতি প্রবন্ধে আবুল ফজল বাংলার সংস্কৃতির গভীরতা এবং ঐতিহ্যের বিশালতাকে তুলে ধরেছেন। তিনি বাংলার সাহিত্য, সংগীত, লোকজ উৎসব এবং গ্রামীণ জীবনের বৈচিত্র্যকে অত্যন্ত যত্নসহকারে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি মনে করেন বাংলার সংস্কৃতি শুধু মাত্র মাটি ও মানুষের সংস্পর্শেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি ভাঙালি জাতির চেতনা, সৃজনশীলতা এবং আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এই সংস্কৃতি গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনের সরলতা, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং মানুষের আন্তরিকতার মিশ্রণে গঠিত হয়েছে।

এই প্রবন্ধে লেখক তুলে ধরেছেন বাংলার জনগণের আত্মার সঙ্গে কিভাবে লোকগাথা,লোকগীতি এবং বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্য মিশে আছে। এখানে লেখক সংস্কৃতিকে কেবল মাত্র বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখেননি, তিনি এটিকে বাঙালি জাতির মনের বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। এই প্রবন্ধের মাধ্যমে বাংলার ঐতিহাসিক এবং সামাজিক জীবনের অনন্যতাকে প্রকাশ করে। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাংলার সংস্কৃতি সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে এবং পাঠকদের মধ্যে এক গভীর জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলে।

বনলতা সেন

বনলতা সেন কবি জীবনানন্দ দাশের বাংলা সাহিত্যের একটি কালজয়ী অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি একটি কবিতা হলেও এটিকে যখন প্রবন্ধ আকারে বিশ্লেষণ করা হয় তখন দেখা যায় এক ক্লান্ত পথিকের কল্পনার রূপ হিসেবে বনলতা সেন একটি নির্ভরতার প্রতীক। লেখক তার কল্পনাকে এখানে এমন ভাবে রূপ দিয়েছে যা এই চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। যেখানে অতীতের স্মৃতি, জীবনের ক্লান্তি, এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন মিশে এক অপূর্ব সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। বনলতা সেন চরিত্রটি কেবল মাত্র একজন নারী নয়, বরং এটি মানব জীবনের অভ্যন্তরীণ সান্ত্বনা এবং আত্মার নির্ভরতার প্রতিচ্ছবি।

বনলতা সেন কবিতায় লেখক বাংলার প্রকৃতি, নদী, গাছপালা এবং গ্রামীণ জীবনের সুন্দর্য অসাধারণভাবে ফুটে তুলেছেন। বনলতা সেন চরিত্রটি পথিকের ক্লান্ত মনকে সান্ত্বনা দেয়, যা প্রতিটি মানুষের জীবনের দৈনন্দিন কাজের চাপে শান্তির খোঁজের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। বনলতা সেন কেবল মাত্র একটি কবিতা না, এটি বাঙালি মনের এক জাগরণ। এই প্রবন্ধে কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া বাঙালির প্রেম, বিচ্ছেদ, এবং জীবনের অন্তর্গত বিষণ্ণতার ছোঁয়া স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। নলতা সেন চরিত্রটি বাঙালি সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় প্রতীক, যা সময়ের সীমানা পেরিয়ে পাঠকের মনে চিরকাল ধরে থাকবে।

নারী

হুমায়ুন আজাদের লেখা নারী প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যের একটি সাহসী ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো রচনা। এই প্রবন্ধে লেখক নারীর প্রতি সমাজের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারার তীব্র সমালোচনা করেছেন। প্রবন্ধে নারীকে একজন গৃহস্থালি সেবিকা বা পারিবারিক দায়িত্ব পালনকারী হিসেবে না, বরং একজন স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে লেখক নারীর স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন এবং পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারার তীব্র সমালোচনা করেছেন। এখানে লেখক আরও দেখিয়েছেন কিভাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে অবমূল্যায়ন করে এবং নিজের হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহার করে।

নারী প্রবন্ধে লেখক নারীর প্রতি সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা পরিবরর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। নারীর সামাজিক মর্জাদা, আত্মপরিচয় এবং স্বাধীনতা অর্জনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। নারী পুরুষের সমান অধিকার এটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নত সমাজ গঠনের সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন। লেখক এই প্রবন্ধে নারী শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা অর্জনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। নারী প্রবন্ধে হুমায়ুন আজাদ নারীদের প্রতি সমাজের অন্ধ কুসংস্কার এবং নারীদের প্রতি অবিচারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই প্রবন্ধ বাংলায় নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা সৃজনশীলধর্মী প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধে লেখক বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যাবলী নিয়ে কথা বলেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থার উনয়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন। কিভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং ক্ষতা বৃদ্ধি পাবে তা নিয়ে কথা বলেছেন।

এই প্রবন্ধে লেখক বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাতর ভুল ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করেছেন যার ফলশ্রুতিতে সমাজের উপর এর কি রকম প্রভাব পরছে তা তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তার অভাবে সমাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। এই প্রবন্ধে বাস্তবমুখী পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে সফল হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে সে বিষয়ে পথ দেখিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল, নেতৃত্বের গুণাবলি এবং দায়িত্বশীলতার বিকাশ কিভাবে ঘটবে তা নিয়ে একটা শিক্ষার মডেল প্রস্তাব করেছেন।

অবরোধবাসিনী

অবরোধবাসিনী লেখক বেগম রোকেয়ার একটি শক্তিশালী প্রবন্ধ যা অবরোধ প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন। তিনি এই প্রবন্ধে নারীদের অধিকার এবং স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি এখানে মুসলিম নারীদের অবরুদ্ধ জীবন এবং তার ফলে সৃষ্ট সামাজিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। কিভাবে দিনের পর দিন সমাজে নারীদের সম্মান, মর্জাদা এবং অধিকার ক্ষন্ন করা হচ্ছে তা নিয়ে এই প্রবন্ধে বিষধ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এই প্রবন্ধের মাধ্যমে নারীদের মুক্তির কথা বলা হয়েছে, নারীদের সামাজিক মর্জাদা, স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিবার কথা বলা হয়েছে।

অবরোধবাসিনী প্রবন্ধে বেগম রোকেয়া খুব স্পষ্ট ভাবে নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন, কীভাবে ধর্ম এবং সমাজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নারীদের মেধা ও সৃজনশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। লেখক এখানে স্পষ্ট ভাবে নারীর অধিকার, শিক্ষা, এবং মুক্ত জীবনের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এই প্রবন্ধে নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যে হীন মনোভাব এবং নারীর প্রতি যে অবিচার তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি নারীর যে নিজস্ব পরিচয় রয়েছে এবং স্বাধীনভাবে নারীর গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। নারীরাও যে পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারে, নারীদেরও যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রয়েছে তা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। সর্বপরী এই প্রবন্ধের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার যে পথ তা উল্লেখযোগ্য আলোচনা করা হয়েছে।

রসগোল্লা

রসগোল্লা প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী এটিকে একটি রসাত্মক প্রবন্ধ হিসেবে আমাদের মাজঝে উপস্থাপন করেছেন। এই প্রবন্ধে লেখক বাংলার সমাজিক দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক কে রসবোধের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। লেখক তার অসাধারণ রচনাশৈলীতার মাঝে পাঠকদের আনন্দ দেবার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার মাঝেও দৃষ্টি দিয়েছেন। তিনি এমন ভাবে এই প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন যেখানে হাস্যরসের আড়ালে সামাজিক বিশ্লেষণ উঠে এসেছে।

সৈয়দ মুজতবা আলী তার রসগোল্লা প্রবন্ধে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের হাস্যোজ্জ্বল বিষয়গুলোকে এমন ভাবে উপস্থাপন করেছেন, যে এসব পড়লে এক দিকে যেমন মজার মনে হবে অন্যদিকে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি এই প্রবন্ধে সমাজের বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার, ভণ্ডামি এবং অশিক্ষা সম্পর্কে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। তার এ লেখায় একটি দারুণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তিনি যে বিষয়ে কথা বলুক না কেনো তা অত্যন্ত সরল কিন্তু অনেক গভীরও বটে। রসগোল্লা প্রবন্ধ পড়লে পাঠকের জীবনের ছোটখাটো অনেক মজার বিষয়গুলো নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শিখবেন। এটি এমন একটি প্রবন্ধ যেটি পাঠকদের তাদের জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখাবে। এই প্রবন্ধ পাঠ করলে কেবল আনন্দই পাবে না, এর সাথে পাঠকরা সমাজ নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে শিখবে। এই প্রবন্ধে লেখক দারুণ ভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, সাহিত্য শুধুমাত্র কেবল বিনোদনের বিষয় নয়, এটি সমাজের সমস্যাগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরার একটি শক্তিশালী মাধ্যমও বটে।

একাত্তরের দিনগুলি

একাত্তরের দিনগুলি জাহানারা ইমামের একটি স্বাধীনতা সংগ্রামের ভয়াবহতা, বীরত্ব এবং ত্যাগ নিয়ে লেখা একটি হৃদয়বিদারক প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধে লেখক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে ভয়াবহতা এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তা সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। জাহানারা ইমামের ব্যক্তিগত জীবনের সাথে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে জীবন্ত চিত্র তা এই প্রবন্ধে সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন। তাই এই প্রবন্ধকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অনন্য দলিল হিসেবে ধরা যায়।

একাত্তরের দিনগুলি প্রবন্ধে জাহানারা ইমাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার চিত্র যে ভাবে তুলে ধরেছেন তা আমাদের সকলের পড়া উচিৎ। এখানে তিনি তার চোখে দেখা অনেক ঘটনা চিত্র অত্যন্ত আবেগময় ভাষায় তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে প্রতিটি পরিবার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিলেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। কিভাবে তার নিজের স্বামী সন্তানকে দেশের জন্য হারিয়েছিলেন তবুও কোন ভাবে তিনি ভেঙ্গে পড়েননি। তার এ ত্যাগকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অপরিহার্য মনে করেছেন। এই প্রবন্ধে শুধু তিনি তার ব্যক্তিগত কষ্টের বিবরণ দেন নি, এটি পুরো বাঙালি জাতির সংগ্রামের একটি প্রতিচ্ছবি। তিনি এই প্রবন্ধে মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালি জাতির সাহসিকতা এবং নির্যাতনের সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন। একাত্তরের দিনগুলি প্রবন্ধ পাঠকদের শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানায় না, এটি তাদের দেশপ্রেম এবং ত্যাগের মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করে তুলে। এই প্রবন্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে এবং এটি প্রমাণ করে যে সাহিত্যের মাধ্যমে কিভাবে একটি দেশের সংগ্রামের ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখা যায়।

কবর

কবর বাংলাদেশের প্রখ্যাত একজন লেখক মুনীর চৌধুরীর লেখা এক অনন্য উপহার। কবর ১৯৫২ সালে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে রচিত একটি চেতনামূলক প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধে লেখক ভাষার মর্যাদা এবং তার জন্য আত্মত্যাগের গুরুত্ব অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে তুলে ধরেছেন। ভাষা আন্দোলনের জন্য মানুষ কিভাবে বুকের তাজা রক্ত বিসর্জন দিয়েছেন তা এই প্রবন্ধ না পড়লে বুঝা যাবে না। এটি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি অসাধারণ উদাহরণ হয়ে থাকবে।

কবর এমন একটি প্রবন্ধ যেখানে মুনীর চৌধুরী ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনাকে তুলে ধরেছেন। এ প্রবন্ধে ভাষার জন্য শহীদদের আত্মত্যাগের কথা অনেক সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কবি দেখিয়েছেন কিভাবে ভাষার জন্য একটি জাতি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে পারে, এ যেন একটি জাতির ইতিহাসে অন্যন্য ঘটনা হয়ে থাকবে। কবর প্রবন্ধ শুধু মাত্র একটি সাহিত্য কর্ম না, এটি একটি জাতির সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক চেতনার প্রতীক। মুনির চৌধুরী তার কবর প্রবন্ধের মাধ্যমে দেখিয়েছেন একটি জাতির অস্তিত্ব তার ভাষার ওপর নির্ভর করে। এই প্রবন্ধ দ্বারা দেখানো হয়েছে ভাষা শুধুমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম না, এটি একটি জাতির পরিচয়ের ভিত্তি।

শেষ কথা

উপরিক্ত ১০টি বিখ্যাত প্রবন্ধের ভিত্তিতে বলতে পারি প্রতিটি প্রবন্ধের আলাদা আলাদা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক পরিস্থিতি এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। প্রতিটি প্রবন্ধই তার সময় এবং সমাজের প্রয়োজন অনুযায়ী রচিত, যা আমাদের বর্তমান সমাজের জন্যও শিক্ষণীয়। এগুলোর মাধ্যমে সাহিত্যের গভীরতা এবং সামাজিক মূল্যবোধ উপলব্ধি করা যায়।

Piku

হ্যালো, আমি পিকু। নাম দেখে অনেকেই মনে করতে পারেন এইটা কেমন নাম, এইটা কি আমার আসল নাম নাকি? না এইটা আমার ছদ্মনাম যা আমি নিজেই দিয়েছি। আমি বিডিইবুক সাইটে একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে লেখালিখি করে থাকি। আমি মূলত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বিভিন্ন বই এবং লেখক নিয়ে লিখে থাকি। আমার পড়া বিভিন্ন সেরা বই সম্পর্কে আপনারা এই সাইটে আর্টিকেল পড়তে পারবেন।

Recent Posts

১২০+ বিখ্যাত হুমায়ূন আহমেদ এর উক্তি ও বাণী

হুমায়ন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় নাম। হুমায়ন আহমেদের লেখা সকল বই, বইপ্রেমিদের নানা ভাবে…

7 দিন ago

সেরা ১০০+ কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি ও বাণীসমূহ

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলের একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি। তার লেখা সকল কবিতা পাঠকদের নানা ভাবে…

7 দিন ago

নাটক ও উপন্যাসের মধ্যে পার্থক্য কিছু মিল ও অমিল

নাটক ও উপন্যাস পছন্দ করে না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই দেখা যায়। মানুষের বিনোদন…

7 দিন ago

আঞ্চলিক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য ও কিছু আঞ্চলিক উপন্যাসের উদাহরণ

বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস জগতের গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হচ্ছে আঞ্চলিক উপন্যাস। আঞ্চলিক উপন্যাসের মধ্যে কোন একটি…

1 সপ্তাহ ago

রাজনৈতিক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য ও সেরা কিছু রাজনৈতিক উপন্যাস

রাজনৈতিক উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের এমন একটি শাখা যেখানে কোনো রাজনৈতিক ঘটনা, রাজনৈতিক পরিবেশ, রাজনৈতিক ব্যক্তি,…

2 সপ্তাহ ago

জনপ্রিয় ইসলামিক উপন্যাস ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা

ইসলামিক উপন্যাস মূলত মুসলিম ধর্মের জনসাধারণের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এর কারণ…

2 সপ্তাহ ago