হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত উপন্যাস

হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত উপন্যাস ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ

হুনায়ুন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। হুনায়ুন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার এবং সেইসাথে চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। বাংলা সাহিত্যে হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয়তা অত্যাধিক। তিনি তাঁর অনবদ্য গল্প, দক্ষতা ও মানবিক অনুভূতির গভীরতা দিয়ে পাঠকদের মুগ্ধ করেছেন।

হুনায়ুন আহমেদকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রভাবশালী লেখক হিসেবে পরিচিত করা হয়। তার জনপ্রিয় অনেক উপন্যাসের তালিকা রয়েছে। যা পাঠকদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম পর্যায়ে দেখা যায়। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে হুনায়ুন আহমেদের বিখ্যাত উপন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এবং সেইসাথে এটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। তাহলে আসুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত উপন্যাস

হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত উপন্যাস

হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত অনেক উপন্যস বাংলা সাহিত্যে রয়েছে। আমরা সকলেই জানি হুমায়ুন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় ও অন্যতম প্রভাবশালী লেখক। তার বেশিভাগ বই পাঠকদের নানা ভাবে আকৃষ্ট করে এসেছে। বাংলা সাহিত্যে হুমায়ুন আহমেদের লেখা বিখ্যাত উপন্যাসগুলি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তার লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যসের মধ্য রয়েছেঃ

  • নন্দিত নরকে।
  • শঙ্খনীল কারাগার।
  • জোছনা ও জননীর গল্প।
  • দেবী।
  • মধ্যাহ্ন।
  • দেয়াল।
  • একজন মায়াবতী।
  • শ্রাবণ মেঘের দিন।
  • দারুচিনি দ্বীপ।
  • তন্দ্রাবিলাস ইত্যাদি।

হুমায়ুন আহমেদের এছাড়াও তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় তিনশত। তার মধ্য উল্লেখযোগ্য কিছু উপন্যসের কথা সংক্ষেপে আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম। সেইসাথে নিচে এটির বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

নন্দিত নরকে

নন্দিত নরকে

নন্দিত নরকে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস। এই বইয়ের রচনাকাল ১৯৭০ সালে। তবে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে অধ্যয়নকালে নন্দিত নরকে উপন্যাসটি রচনা করেন। এই উপন্যাসটি খুব সাধারণ একটা নিম্নবিত্ত পরিবারের জীবন সংগ্রাম নিয়ে লেখা হয়েছে। এই গল্পের প্রধান চরিত্র রাবেয়া। সে মুলত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। রাবেয়ার জীবন সংগ্রামকে ঘিরেই পুরো গল্পের পটভূমি। এই গল্পে রাবেয়ার মা, বাবা, ভাই, বোন সহ অনেকেই দেখা যায়।

গল্পে রাবেয়ার পরিবারকে নানা সমস্যার সন্মুখীন হতে দেখা যায়। সেইসাথে এই গল্পে সফিক নামে একজন লোকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সে মুলত একজন স্কুলের শিক্ষক। সফিক সাহেব রাবেয়ার বাবার ভার্সিটি জীবনের বন্ধু। এছাড়াও গল্পে রয়েছে রাবেয়াদের পাশের বাড়ির ধনী পরিবারের মেয়ে শিলু ও তার ভাই হারুন। এই গল্পে রাবেয়াদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের সংগ্রাম এবং পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে, লেখক তাদের মানসিক দ্বন্দ্ব ও অভিজ্ঞতার কথা গভীরভাবে তুলে ধরেছেন। যা এই উপন্যাসকে সুন্দরভাবে ফুটে তুলেছে।

শঙ্খনীল কারাগার

শঙ্খনীল কারাগার

শঙ্খনীল কারাগার হুমায়ূন আহমেদের একটি সমকালীন উপন্যাস। এই উপন্যাসটি ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয়। এই গল্পটি মূলত লেখকের কাল্পনিক চরিত্র রাবেয়াকে ঘিরে। এই উপন্যাসে প্রধান চরিত্রের জীবন এবং তার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের চিত্র এই গল্পে তুলে ধরা হয়েছে। গল্পের শুরুতে দেখা যায়, উপন্যাসের কথক খোকা। খোকারা ছয় ভাইবোন, তার মধ্য বড় বোন রাবেয়া। তবে খোকার বাবা আর রাবেয়ার বাবা ভিন্ন দুই ব্যক্তি।

কারণ রাবেয়ার মায়ের আগে এক ধনী ব্যক্তির সাথে বিয়ে হয়েছিল। সেই পরিবারের মেয়ে রাবেয়া। এবং পরবর্তীতে রাবেয়ার বাবার সাথে রাবেয়ার মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। যা এই বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। গল্পটিতে দেখা যায় রাবেয়ার মায়ের বাবার বাড়ি ছিল অভিজাত শ্রেণীর। ফলে রাবেয়ার মায়ের জীবন, রূপলাবণ্য সবই ছিল বড়লোকি। কাহিনীতে রাবেয়ার মায়ের অনেক কাহিনী ফুটে এসেছে। তার মধ্য মজার বিষয় হচ্ছে রাবেয়ার মা অনেক ভালো গান করতে জানতেন।

এবং তিনি নিয়মিত গান করতেন। সেইসাথে গল্পের অপরদিকে দেখা যায়, আজহার হোসেন নামে একজন রাবেয়ার মায়ের বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। আজহার হোসেন একদিন রাবেয়ার মায়ের মুখে গান শুনে তার প্রেমে পড়ে যান। এবং সেই সুবাদে তার কয়েকমাস বাদে রাবেয়ার মায়ের সাথে বিয়ে হয় তার। গল্পটিতে আরও আকর্ষণীয় অনেক ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। যা পাঠকদের মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। এবং সেইসাথে এই উপন্যাসে অন্যান্য পার্শ্বচরিত্র এবং তাদের জীবনের ঘটনাপ্রবাহও সমান্তরালভাবে চলতে থাকে, যা পুরো গল্পটিকে সমৃদ্ধ করেছে।

জোছনা ও জননীর গল্প

জোছনা ও জননীর গল্প

জোছনা ও জননীর গল্প জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে রচিত করা হয়েছে। এই বইটি ২০০৪ সালে প্রকাশিত করা হয়। এই উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবিক সম্পর্ক, সংগ্রাম, এবং সঙ্কটের বিভিন্ন চিত্র ও ঘটনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা এই গল্পে উল্লেখ করা হয়েছে। এই গল্পের প্রধান চরিত্র কামাল ও তার পরিবার। কালাম একজন ছাত্র, যিনি সেসময় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এবং এই কাহিনীতে কামালের পরিবারের বিভিন্ন সদস্য এবং তার বন্ধুবান্ধবদের নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এই গল্পে দেখা যায়, কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষ সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। এবং সেইসাথে দেশের জন্য তারা কিভাবে নিজেদের আত্মত্যাগ করেছেন তার অনেক ঘটনা এই গল্পে তুলে ধরা হয়েছে। এই উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য চরিত্র কামালের মা। যিনি তাঁর ছেলের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এবং নিজের কষ্টের মাঝেও দেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেন। হুমায়ূন আহমেদের এই বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে নানা ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে। এবং এই উপন্যাসের মাধ্যমে, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রেম, আত্মত্যাগ, এবং বীরত্বের কাহিনীগুলি গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যা এই গল্পটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

দেবী

দেবী: হুমায়ূন আহমেদ

দেবী হুমায়ূন আহমেদের একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। দেবী উপন্যাসটি একটি রহস্যময় এবং মায়াবী কাহিনীকে নিয়ে নির্মিত। ১৯৮৫ সালের জুন মাসে দেবী উপন্যাস প্রকাশিত করা হয়। এই গল্পের মাধ্যমে মিসির আলি চরিত্রের পরিচয় ঘটে। দেবী গল্পের মূল চরিত্র হলেন রানু। রানু নানা ভয়ানক ঘটনা ও অদ্ভুত ঘটনাবলীর মুখোমুখি হয়। গল্পের শুরুতে দেখা যায়, রানু অস্বাভাবিক কিছুর উপস্থিতি টের পায়। এবং তার স্বামী আনিসকে ডেকে তোলে। অস্বাভাবিক কিছুর উপস্থিতি টের পাওয়া রানুর এমন আচরণ আনিস এর আগেও  দেখেছে। তাই সে প্রতিবারের মতো এই বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই নেয়। এবং এই গল্পে আরও এটি চরিত্রকে দেখা যায়, সে হচ্ছে রানুর প্রতিবেশী নীলু।

নীলু মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী, ফলে রানুর আচরণের প্রতি সে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এবং এই সুবাদে নীলুর শিক্ষক মিসির আলির পরিচয় সামনে আসে। মিসির আলি একজন মনস্তাত্ত্বিক রোগবিশেষজ্ঞ। সে এইসকল ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাজ করে থাকে। এবং রানুর এই সমস্যার কথা শুনে মিসির আলি তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। এবং মিসির আলী আসল রহস্যকে উদ্ঘাটনের চেষ্টা করতে থাকেন। এই গল্পে নানা রকমের জটিল এবং ভয়ানক ঘটনা উঠে আসে। এবং মিসির আলী রানুর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজতে থাকে। দেবি উপন্যাসটি মানবিক আবেগ, বিশ্বাস এবং ধর্মের জটিলতা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে সাহায্য করে। যা এই উপন্যাসটিতে তুলে ধরা হয়েছে।

মধ্যাহ্ন

মধ্যাহ্ন

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মধ্যাহ্ন একটি প্রভাবশালী উপন্যাস। এই উপন্যাসটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি থেকে রচিত করা হয়েছে। মধ্যাহ্ন উপন্যাস মূলত দুই খণ্ডে প্রকাশিত করা হয়। এটির প্রথম খণ্ড ২০০৬ সালে ও দ্বিতীয় খণ্ড ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়। এই দুই খণ্ডে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার জীবন ও সমাজের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যা গল্পটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। মধ্যাহ্ন উপন্যাসের কাহিনী মূলত তিনটি পরিবারের চারপাশে। যেখানে প্রধান চরিত্র মজিদ, রূপা, এবং হরেন।

গল্পে দেখা যায়, মজিদ একজন শান্তিপ্রিয় গ্রাম্য শিক্ষক। সে যুদ্ধের সময় বাধ্য হয়ে নিজের গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। এবং রূপা হলেন মজিদের স্ত্রী। যিনি তাঁর স্বামীর অনুপস্থিতিতে সাহসিকতার সাথে নিজের এবং পরিবারের দায়িত্ব পালন করেন। এবং অপরদিকে হরেন একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবক সে যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তাদের এই তিন চরিত্রকে ঘিরে মধ্যাহ্ন উপন্যাসের ঘটনা শুরু হয়। এই উপন্যাসের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, কিভাবে যুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়।

সেইসাথে তাঁদের স্বপ্ন, আশা এবং ভালোবাসা ধ্বংসের মুখোমুখি হয়। এছাড়াও এই গল্পটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। যা পাঠকদের নানা ভাবে আকৃষ্ট করে থাকে। এছাড়াও এই গল্পে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনা উঠে এসেছে। যেমনঃ গণহত্যা, নির্যাতন, এবং মানুষের সংগ্রাম। মধ্যাহ্ন উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধের একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে গণ্য হয়। এবং সেই সাথে এই উপন্যাসের মাধ্যমে মানবিকতার সাথে অনন্য চিত্র তুলে ধরেছে। যা পাঠকদের মনে একটি গভীর প্রভাব ফেলে।

দেয়াল

দেয়াল

দেয়াল হুমায়ূন আহমেদের লেখা অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যসের মধ্য একটি। দেয়াল উপন্যস হুমায়ূন আহমেদের রচিত সর্বশেষ উপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এক বছর পর এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। দেয়াল উপন্যস প্রকাশিত হওয়ার পর এটিকে নিয়ে নানা বিতর্ক দেখা দেয়। এবং পরবর্তীতে তা আদালত পর্যন্তও গড়ায়। দেয়াল উপন্যাস বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কে কেন্দ্র করে রচিত করা হয়েছে।

এই উপন্যাসে ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সুবর্ণা। সুবর্ণা একজন তরুণী, যিনি রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশের প্রভাবের মধ্যে বড় হন। সুবর্ণার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা এবং মানুষের সাথে সম্পর্কের মধ্য দিয়ে, বাংলাদেশের রাজনীতির অস্থিরতা এবং পরিবর্তনের চিত্র এই গল্পে ফুটে ওঠে। এই উপন্যসটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কঠিন সময়কে বাস্তব ভাবে তুলে ধরেছে। যা এই বইয়ের কাহিনী দ্বারা প্রমাণিত।

একজন মায়াবতী

একজন মায়াবতী

একজন মায়াবতী হুমায়ূন আহমেদের লেখা একটি জনপ্রিয় প্রেমের উপন্যাস। এই উপন্যাসে একজন মায়াবতী নারী এবং তাঁর জীবন কাহিনীর কথা তুলে ধরা হয়েছে। গল্পের শুরুতে দেখা যায়, উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র তন্বী। তিনি এক অদ্ভুত রহস্যময়ী নারী। তার কিছু রহস্যময়ী ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি রয়েছে। যা মানুষকে আকৃষ্ট করে। এই কাহিনীর মূল আকর্ষণ তন্বীর চারপাশে ঘটতে থাকা কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা। এবং তার জীবনের রহস্যমূলক কাহিনী। এছাড়া এই গল্পের প্রধান চরিত্রের নাম আবির।

যে তন্বীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। সে মূলত তন্বীর মায়াজালে পড়ে। আবিরের জীবনে তন্বীর আগমনের তার নানা পরিবর্তন ঘটে। এবং সে তার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা সংকটের মধ্য পড়ে। এই সকল মায়াবী এবং নানা রহস্য এবং ভালবাসাকে কেন্দ্র করে একজন মায়াবতী বইটি রচিত করা হয়। এই উপন্যাসটি বিভিন্ন সম্পর্কের জটিলতা, মানবিক আবেগ এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরে। এবং এই গল্পে হুমায়ূন আহমেদ প্রেম ও রহস্যের মিশ্রণে একটি মায়াবী ঘটনা সৃষ্টি করেছেন যা পাঠকদের নানা ভাবে আকৃষ্ট করে থাকে।

শ্রাবণ মেঘের দিন

শ্রাবণ মেঘের দিন

শ্রাবণ মেঘের দিন হুমায়ূন আহমেদের একটি আবেগময় উপন্যাস। এই উপন্যাসে গ্রাম্য জীবনের সৌন্দর্য এবং মানবিক সম্পর্কের জটিলতা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এই গল্পের প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখা যায়, মতি কুসুম ও শাহানাকে। গল্পে মতি একজন গায়ক। এবং তাকে কুসুম নামে একটি মেয়ে মনে মনে ভালবাসে। গল্পে মতি এবং কুসুম তারা একই গ্রামে থাকে। মতি মিয়ার মতো কুসুম ও বেশ ভালো গান করে। কুসুমের স্বপ্ন মতি মিয়াকে নিয়ে সে একটা গানের দল করে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াবে।

গল্পের অপরদিকে সাহানা নামে একজনকে দেখা যায়। সাহানা ঐ গ্রামের জমিদারের নাতনি। মজার বিষয় হচ্ছে মতি মিয়া সাহানাকে ভালোবাসে। তবে সাহানা সেটি জানে না বরং শাহানা তাকে একজন ভাল মানুষ হিসেবে মুল্যায়ন করে মাত্র। এই সকল ঘটনা গল্পে স্বাভাবিক ভাবে ঘটতে থাকে। গল্পের মাঝখানে আরও আকর্ষণীয় অনেক বিষয় উঠে এসেছে। যা কাহিনীকে আরও সুন্দরভাবে দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করেছে। সেইসাথে এই কাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে যার ফলে গল্পের প্রত্যেকটি দৃশ্যকে পাঠকদের মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

দারুচিনি দ্বীপ

দারুচিনি দ্বীপ

দারুচিনি দ্বীপ হুমায়ূন আহমেদের শুভ্রকে নিয়ে লেখা উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম। দারুচিনি দ্বীপকে একটি বহুল পঠিত উপন্যাস হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি ১৯৯১ সালের একুশে বই মেলায় অনুপম প্রকাশনী হতে প্রথম প্রকাশিত হয়। এই গল্পে একটি যুবক এবং তার বন্ধুদের দুঃসাহসিক অভিযানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। গল্পে দেখা যায়, কানাবাবা নামে খ্যাত শুভ্র এবং তার বন্ধু বান্ধবরা মিলে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার আয়োজন করে। এবং দ্বীপে যাওয়ার জন্য তাদের নানা কার্যকলাপের ঘটনা গল্পে উঠে আসে।

পুরো উপন্যাসটিতে তাদের সমুদ্রে যাওয়ার আয়োজন, এবং না যেতে পারার আশঙ্কাটুকুই বর্ণিত করা হয়েছে। তাদের এই যাত্রার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা কাহিনী এই বইটিতে বর্ণিত করা হয়েছে। তবে গল্পের শেষে দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত তারা সমুদ্রে যেতে পারেনি। এবং এই উপন্যাস শেষ হয় পাত্র-পাত্রীদের সমুদ্রযাত্রার উদ্দেশ্যে ট্রেনে চড়ার দৃশ্য দিয়ে। এই গল্পে নানা বিষয়ক ঘটনা ও গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ফুটে ওঠে। যা সকল পাঠকদের নানা ভাবে আকর্ষণ করে থাকে। এবং এই গল্পের দ্বিতীয় পর্বে লেখক তাদের মিশন দারুচিনি দ্বীপ পূর্ণতা লাভের কাহিনী তুলে ধরেছেন।

তন্দ্রাবিলাস

তন্দ্রাবিলাস

তন্দ্রাবিলাস হুমায়ূন আহমেদ এর মিসির আলি চরিত্রভিত্তিক উপন্যাসগুলোর ১১ নম্বর উপন্যাস। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে। তন্দ্রাবিলাসে হুমায়ূন আহমেদের কাল্পনিক ও জনপ্রিয় চরিত্র মিসির আলির মাধ্যমে মানুষের অদ্ভুত আচরণের এবং অস্বাভাবিক ক্ষমতার যৌক্তিক কারণ উপস্থাপন করেছেন। এই গল্পে দেখা যায়, শীতকালের বেলা এগারোটার সময় অদ্ভুত এক মেয়ে আসে মিসির আলির কাছে। মেয়েটার আচরণ ও কথাবার্তা শুনে মিসির আলির মেজাজ খারাপ হতে থাকে। কারণ মেয়েটা শুরুতেই তাঁকে ভুল নাম হিসেবে সায়েরা বানু বলে।

পরবর্তীতে মিসির আলী জানতে পারে মেয়েটার নাম সায়েরা বানু না। এতে মিসির আলি আরো বিরক্ত হন। এবং এই ঘটনার এক সময়ে সেই মেয়েটি তার হাতের হ্যান্ডব্যাগ আর স্যুটকেস মিসির আলির কাছে রেখে চলে যায়। এবং মজার বিষয় হচ্ছে, সেখানে মিসির আলি একটি চিঠি পান। যা এই কাহিনীকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এই সকল রহস্যময় ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বইটি রচিত করা হয়েছে। যা গল্পটিকে আরও সুন্দরভাবে পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও এই উপন্যাসে মানবিক সম্পর্কের গভীরতা এবং তাতে ঘটে যাওয়া মানসিক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

শেষ কথা

বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিকর্ম বলতে প্রধানত বোঝায় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় মুখ। তার সকল বিরচিত গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, আত্মজীবনীমূলক উপাখ্যান, ভ্রমণ কাহিনী, অনুবাদ, কবিতা, সঙ্গীত এবং চিত্রকর্ম ব্যপক ভাবে জনপ্রিয়। এছাড়াও তিনি পরিচালক হিসাবে নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।

হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত অনেক বই রয়েছে যা পাঠকদের কাছে নানা ভাবে পরিচিত। তবে তার সকল বইয়ের মধ্য আমরা এই আর্টিকেলে তার বিশেষ কিছু জনপ্রিয় উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আসা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের সঠিক সময়ে কাজে আসবে। সেইসাথে আমাদের এই লেখাটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে আমাদের এই পোস্টটি আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।

About the Author: Rifat

হ্যালো বন্ধুরা, আমি রাফিউল ইসলাম রিফাত। আমি বিডিইবুক সাইটে বাংলা ভাষার বিভিন্ন লেখকের সেরা কিছু বই, বাংলা বেস্ট সেলিনং বই, শিক্ষামূলক, বিভিন্ন লেখক পরিচিতি ইত্যাদি বিষয়ের উপর লেখালিখি করে থাকি। আশাকরি আমার লেখা পড়ে আপনাদের অনেক ভালো লাগবে এবং সেরা সব বাংলা বই সম্পর্কে একটা সুন্দর ধারণা তৈরি হবে।

You May Also Like

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।