সেরা বই

হিমু পরিচিতি ও হিমু সিরিজের তালিকা

বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের তৈরি একটি জনপ্রিয় চরিত্র হিমু। হিমু চরিত্রের বেখায়ালী আচার-আচরণ, ও তার চলাফেরা ইত্যাদি এক একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের বাঙ্গালি তরুণদের মন জয় করে নিয়েছিল।

সেই সাথে বর্তমানে হুমায়ন আহমেদের লেখা কাল্পনিক চরিত্র হিমু বর্তমান তরুণদের মাঝে আজও ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়। হিমু পরিচিতি ও হিমু সিরিজের তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

হিমু পরিচিতি

হিমু বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক লেখক হুমায়ন আহমেদের লেখা কাল্পনিক চরিত্র। এটির প্রথম পর্ব ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয়। হিমুর চারিত্রিক ও তার কার্যকলাপে হাজারো তরুণদের অনুপ্রাণিত করে। এবং এটি ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সেই সাথে বর্তমানে হিমু গল্পের জনপ্রিয়তা অনেক।

হিমু সিরিজের তালিকা

হিমু সিরিজের সর্বমোট ২১ টি বই রয়েছে। আমরা সকলেই জানি হুমায়ন আহমেদের লেখা হিমু ও মিসির আলি চরিত্র ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার মধ্য একটি হিমু চরিত্র। নব্বই দশকের সাথে বর্তমান সময়েও হিমু গল্পের জনপ্রিয়তা অনেক। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে আমরা হিমু সিরিজের কিছু বইয়ের নাম তুলে ধরলাম।

ময়ূরাক্ষী

ময়ূরাক্ষী হুমায়ন আহমেদের লেখা হিমু চরিত্রের প্রথম উপন্যাস। এটি ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয়। ময়ূরাক্ষী বইয়ে হিমুর বাবা ছিলের একজন বিকারগ্রস্থ মানুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা যায় তাহলে মহাপুরুষও প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা সম্ভব। সেই ধারাবাহিকতায় হিমুর বাবা একটি বিদ্যালয় দিয়ে বসে।

এবং সেখানকার সর্বপ্রথম ছাত্র ছিল তার সন্তান, তথা হিমু। হিমুকে তার বাবা মহাপুরুষ তৈরি করতে নানা ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তবে একটি কথা বলে রাখা ভালো, এই মহাপুরুষ পরিচালনায় হিমুর বাবা তার স্ত্রীকে হত্যা করেন। বিদ্যালয় পরিচালনার একসময় হিমুর বাবা একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে পরেন এবং মারা যাওয়ার আগমুহূর্তে হিমুকে কিছু সর্ত দিয়ে যান। এবং হিমু সেই সর্তকে পূরণ করতে তার কার্যকলাপ চলমান রাখে। এটিই ময়ূরাক্ষী বইয়ে উল্লেখ করা হয়।

দরজার ওপাশে

হিমু উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব দরজার ওপাশে। এটি ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয়। প্রথম পর্বে হিমু মহাপুরুষ হওয়ার জন্য নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে। এবং দ্বিতীয় পর্বে হিমুর বন্ধুর চাকরি বরখাস্ত থেকে বাঁচতে গল্পটি আবার শুরু হয়। হিমুর বন্ধু ছিল একজন চাকরিজীবী।

কর্তৃপক্ষ হিমুর বন্ধু তথা রফিককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার কথা বলায়, রফিক হিমুর কাছে ছুটে আশে। কারন হিমুর পরিচিত আরেক বন্ধুর বাবা ছিল মন্ত্রি। হিমু তার বন্ধুর কথা শুনে মনে করে বর্তমান অবস্থায় তার বন্ধুর বাবার কাছেই যেতে হবে। এবং হিমু সেই মন্ত্রির নজর কারার বেবস্থা করে। সেই থেকেই দ্বিতীয় গদ্যের কাহিনি শুরু হয়।

হিমু

হিমু গদ্যের তৃতীয় পর্ব হিমু। এই পর্বে হিমু চরিত্রের অনেক বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। হিমু গদ্য ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়। এককথায় বলা যায় সেই সময়ের জনপ্রিয় বইয়ের মধ্য একটি ছিল হিমু। গল্পে দেখা এষা ও মোরশেদ সাহেব মধ্যকারে পেক্ষাপট। মোরশেদ সাহেব অনেক অসুস্থ থাকায় তার স্ত্রি এষা তাকে ডিভোর্স দেয়। এবং ডিভোর্স দেওয়ায় মোরশেদ সাহেব আরও অসুস্থ হয়ে পরেন।

মোরশেদ সাহেবের স্ত্রি তথা এষার সাথে হিমুর পরিচয় হয় এষার দাদি অসুস্থ হলে। এবং সেই সাথে তাদের বাসায় যাওয়া আসা হয় হিমুর। এবং যাওয়া আসার এক মুহূর্তে মোরশেদ সাহেবের সাথে হিমুর পরিচয় হয়। এবং মামা সম্বোধন পায় তিনি। এবং হিমু মোরশেদ সাহেবকে নানা ভাবে সাহায্য করার মনোভাব পোষণ করতে থাকে এবং মোরশেদ সাহেবকে হিমু বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতে থাকে।

এবং দেখা যায় হিমুর বন্ধু ও তার স্ত্রী নীতুর দৃশপট। গল্পতে দেখা যায় হিমুর বন্ধু ইয়াদের রিসার্চের বিষয় ছিল ভিক্ষুকদের জীবনযাপন। ইয়াদ হিমুকে তার গবেষকের জন্য ব্যাগ বহনকারী হিসেবে রাখে। কিন্তু হিমু পরবর্তীতে এই কাজ আর করেনি। হিমু ইয়াদকে বলেছিল ভিক্ষুকদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে হলে ভিক্ষুক হতে হবে।

এবং ইয়াদ একসময় তাই করেছিল। এবং এই বিষয়টি ইয়াদের স্ত্রীর চোখে পরে। সে মনে করেছিল হিমুই মুলত এই কাজ করতে ইয়াদকে বলেছে। পরবর্তীতে ইয়াদের স্ত্রী হিমুকে নানা ভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে থাকে। কিছুদিনের মধ্য ইয়াদ ভিক্ষুকদের সাথে মিশে যাওয়ায় ইয়াদের স্ত্রী হিমুকে আক্রমন করার জন্য হিমুর পিছনে কুকুর লাগিয়ে দেয়।

এই পর্বে আরও অনেক ঘটনা দেখা যায়। হিমুর নিকট রুপার চিঠি, ডা.ইরতাজুল করিমের সাথে হিমুর আলাপচারিতা প্রকাশ এবং মজনু মিয়ার ভাতের হোটেলের কাহিনি এই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

পারাপার

হুমায়ন আহমেদের লেখা পারাপার হিমু গদ্যের আরেকটি অংশ। ১৯৯৩ সালে পারাপার বই প্রকাশ পায়। হিমু গল্পের চতুর্থ তম পর্ব এটি। এই বইয়ে হিমুকে ইয়াকুব আলি নামে একজন ভদ্র ব্যক্তি খোঁজ করে। কারন ইয়াকুব আলির ব্লাড ক্যান্সার। কিছুদিন পর পর তার রক্ত পরিবর্তন করতে হয়।

এবং এক কথায় বলা যায় মৃত্যুর সাথে লড়ায় করে তিনি বেঁচে আছেন। ইয়াকুব আলি প্রতিদিন স্বপ্নে তার মৃত স্ত্রীকে দেখতে পান। এবং তার স্ত্রী তাকে বলেন যদি কোনো নিষ্পাপ ব্যক্তির রক্ত পাওয়া যায় তাহলে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। সেই কারনে ইয়াকুব আলি হিমুর সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এবং সেইসাথে হিমু একজন পবিত্র মানুষ খুঁজে বেড়ায়। এটিই পারাপার বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

এবং হিমু

এবং হিমু, হিমু গল্পের অন্যতম পর্বের মধ্য একটি। ১৯৯৫ সালে বইমেলায় এটি প্রকাশিত হয়। এই পর্বে হিমুর সাথে ঘটে যাওয়া কিছু কল্পকাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে। গল্পে দেখা যায় রাত একটার সময় হিমু একা হেটে চলেছে রাস্তায়। হিমুর প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। কিন্তু সে রুপার দেওয়া সেই পকেট বিহীন পাঞ্জাবি পরে আছে। একসময় হিমু তার ফুফুর বাসায় চলে যায়। এবং সে সেখানে দেখতে পায়, তার ফুফাতো ভাইের গলায় মাছের কাঁটা ফুটায় সে না খেয়ে আছে।

তার বিশ্বাস ছিল হিমুই পারবে তার গলার কাঁটাকে দূর করতে। একসময় ফুফাতো ভাই বাদলের গলার কাঁটা হিমু দূর করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এই কথা মানতে নারাজ ইরা। পরবর্তীতে হিমুর সাথে দেখা হয় তার রেশমা খালার। সেও একটি বড় রোগে আক্রান্ত। সে নাকি তার মৃত স্বামীকে দেখতে পায়। অন্যদিকে হিমুর মেসের পাশের রুমের বদরুল সাহেবের চাকরি নেই কয়েক মাস ধরে।

তার ছোটবেলার বন্ধু ইয়াকুব সাহেবের কাছে তিনি চাকরির জন্য যায়, কিন্তু সে তাকে চাকরি দেন না। হিমু কথাটি সোনার পরে, চাকরির জন্য ইরাকে বলে এবং ইরা ইয়াকুব সাহেবের জন্য একটি চাকরি খুঁজে দেয়। কিন্তু ইয়াকুব আলি সে সময় কাজ করতে প্রস্তুত ছিল না। কারন তিনি তার বন্ধুর কাছে চাকরি না পাওায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরেন। এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকেন। এবং তার অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। এইসকল কল্পকাহিনী এই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম বইটি ১৯৯৬ সালে প্রকাশ হয়। এই বইয়ের সম্পর্কে নানা ধরনের মত পাঠকরা আলোচনা করেছে। কিছু মানুষ মনে করেন এখানে হিমু তার ভালবাসার সন্ধান করছে, আবার অনেকে মনে করেন এটি একটি প্রতিক, হিমুর জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য খোঁজার।

তবে এখানে নিল পদ্য বলতে বোঝানো হয়েছে। নিল পদ্য মানে একটি ফুল যা সমুদ্রের তলদেশে পাওয়া যায়। অনেকে বলে এটি প্রায়শই স্বর্গ যা ঈশ্বরের সাথে যুক্ত থাকে। তাই গল্পের হিমু চরিত্রকে দেখা যায় হাতে নীল পদ্ম প্রতীক নিয়ে সে তার উচ্চতর উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা করছেন।

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর

হিমু সিরিজের মধ্য হিমুর দ্বিতীয় প্রহর বইটি বেতিক্রম। এই উপন্যাসে হিমুর সাথে আরেকটি চরিত্রকে দেখা যায়। সেটি হচ্ছে মিসির আলি। হিমুর দ্বিতীয় প্রহর বইটি ১৯৯৭ সালে ২১শে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। এই গদ্যটিতে মিসির আলি এবং হিমুর কল্পকাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে।

একদিন পূর্ণিমার রাতে হিমু একটি গলি দিয়ে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড ভয়ের সন্মুখিন হয়। এবং এই ভয়ের কারনে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। অপরদিকে হিমুর ফুফাতো ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয় আখি নামের একটি মেয়ের সাথে। তবে বিয়ের দিনে আঁখি বাড়ি থেকে চলে যায়।

পরিশেষে হিমুর ফুফাতো ভাইয়ের সাথেই আঁখির বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। হিমুর সেই ভয়ের কথা মিসির আলির সাথে আলোচনা করে। এবং মিসির আলি তাকে সেই ভয়ের সামনে মুখোমুখি হতে বলে। ফলে হিমু আবারো সেই গলি দিয়ে পূর্ণিমার রাতে অবস্থান করে। এই সকল ঘটনা হিমুর দ্বিতীয় প্রহর বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

হিমুর রূপালী রাত্রি

হিমুর রূপালী রাত্রি বইটি ১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয়। এটি হিমু গল্পের ৮ম তম পর্ব। হিমু চরিত্রে শিক্ষনীয় অনেক কিছু তুলে ধরা হয়েছে। যা সবার মনকে অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হয়েছে। এবং এই গল্পের জনপ্রিয়তা আজও রয়েছে।

হিমুর রূপালী রাত্রি বইয়ে হিমুর নিজের শখ ও ভালোলাগা ইত্যাদি ফুঁটে উঠেছে। গল্পে দেখা যায়, হিমু ও তামান্নার বিয়ের কার্ড দেখতে বেশ সুন্দর। তবে এটি দেখে রূপসা হাসলো। হিমু বিষয়টি দেখে খুব অবাগ হলো কারন রূপসা এই নিয়ে চারবার হাসলো। সাধারণত সে বেশি হাসে না। তাই তাদের মধ্য এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। এছারাও আরও অন্যান্য দিক এই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁঝিঁ পোকা

একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁঝিঁ পোকা বইটি ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইটিতে হিমুর নানা দিক প্রকাশ করা হয়েছে। হিমু সাধারানত খুব বেশি জটিল পরিস্থিতিতে পরে না। ছোট খাটো ঝামেলায় পরলে সে বেশি গুরুপ্ত দেয় না। সে অনেকটা হাসের মতো বলা যায়।

গাঁ ঝাঁরা দিলে তার সকল সমস্যা পানির মতো নিচে পরে যায়। কিন্তু বড় ঝামেলায় পরলে হিমু কি করে? সেই কাহিনী এই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কম বয়সি মেয়েরা হিমুকে দেখলে মুচকি মুচকি হাঁসে। এবং হিমুর থেকে কিছু কাজ করে নেওয়ার দৃশ দেখা যায়। এছারাও আরও অনেক ঘটনা এই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

তোমাদের এই নগরে

তোমাদের এই নগরে বইটি ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়। হিমু গল্পের ১০ম তম বই এটি। এই বইয়ে দেখা যায় হিমুর মেসের পাশের রুমের জয়নাল সাহেব গভির রাতে হিমুর রুমে এশে বিস্কুট, সিগারেট ইত্যাদি খায়। একটা কথা বলে রাখা ভালো জয়নাল সাহেবের অনিদ্রা রোগ রয়েছে।

অনেক চিকিৎসা, কবিরাজি ইত্যাদি করার পরেও কাজ হয়নি। গত ২১ বছর ধরে তিনি রাতে ঘুমান না। অপরদিকে হিমুর খালা তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। কারণ তার এক আত্মীয়র মেয়ে আশা বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন। তাকে নিয়ে ঘুরতে হবে বলে হিমুকে বলা হয়। হিমু আরেকটা জিনিস জানতে পারে আশা নাকি বাংলাদেশে ঘোরার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সে নাকি বিদেশে গিয়ে বই লিখবে।

পরেরদিনে হিমু আশাকে নিয়ে বেড়ানোর জন্য বের হয়। অনেক জায়গায় তারা ঘোরাফেরা করে। এবং সেই সাথে হিমুর মেসের ম্যানেজারকে পুলিশে ধরে নিয়ে যায় টাকা চুরির অভিযোগে। আবার একইসাথে জয়নাল সাহেব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরে এবং তাকে হাসপাতালে নিতে হয়। তোমাদের এই নগরে বইয়ে এইসকল ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সাথে এই বইটি অনেক সারা ফেলেছে বই প্রেমিদের কাছে।

চলে যায় বসন্তের দিন

হিমু সিরিজের ১১ তম পর্ব চলে যায় বসন্তের দিন। এই বইয়ে প্রাকিতিক দিক ও হিমু চরিত্রের কল্পকাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। এই গল্পে হিমুর খালাতো ভাই জহির ও তার খালুর কাহিনী উঠে এসেছে। বইটিতে দেখা যায়, হিমুর খালাতো ভাই ফুলফুলিয়া নামক একটি মেয়েকে পছন্দ করে। এবং ফুলফুলিয়ার বাবা এলাকার সবাইকে বলে বেড়ায় তার মেয়ের নাকি বিয়ে হয়েছে।

সেই কথা হিমুর ভাই শুনতে পারায় অভিমানে সে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পায়ে হেটে ভ্রমন করবে বলে ঠিক করে। তবে জহির তার এই কার্যকলাপের জন্য হিমুকে দায়ি করে। ফলে হিমুর খালু তথা রহমতউল্লাহ তালুকদার হিমুর বিরুদ্ধে থানায় ওয়ারেন্ট বের করে। এবং এখান থেকে ঘটনা শুরু হয়। যা এই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

সে আসে ধীরে

সে আসে ধীরে এই বইটি ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। হুমায়ন আহমেদের হিমু গল্পের ১২ তম পর্ব এটি। লেখক এই বইটিতে হিমুর কার্যকলাপ, দৈনন্দিন জীবনের চলাফেরা ইত্যাদি সহ আরও অনেক কিছু তুলে ধরেছে। গল্পটিতে হিমু চরিত্রকে দেখা যায় সে একটি হলুদ রঙের পাঞ্জাবী পরে ঘুরে বেড়ায়।

এই পাঞ্জাবির একটি বিশেষত্ব রয়েছে। একটা সময় পাঞ্জাবির রঙের সাথে পৃথিবীর রঙ একরকম হয়ে যায়। এই রঙের একটি নাম রয়েছে ‘কন্যা সুন্দর আলো’। এই ‘কন্যা সুন্দর আলোতে’ অতি সাধারণ চেহারার মেদেরও সুন্দর দেখায়। সেই সাথে প্রকৃতিকেও বেশ সুন্দর লাগে। এই বইয়ে লেখক জানতে চেয়েছে যখন পৃথিবীর রঙের সাথে হিমুর পাঞ্জাবির রঙ মিলে যায় তখন হিমু কি করে? এবং সে কি ভাবে, এই নিয়েই সে আসে ধীরে বইটি লেখা হয়েছে।

আঙ্গুল কাটা জগলু

আঙ্গুল কাটা জগলু হিমু সিরিজের একটি অংশ। এই বইটি ২০০৯ সালে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে আঙুল কাঁটা জগলু নামের এক ব্যক্তির কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে। গল্পের প্রথম দিকে মতি নামে একজন হিমুকে বলে তালে আঙুল কাঁটা জগলু নামক এক ব্যক্তি ডেকেছে। আঙুল কাঁটা জগলু একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকার মধ্য একজন।

হিমু তার সাথে দেখা করতে গিয়ে সে লক্ষ্য করে তার হাতের সবগুলো আঙুল রয়েছে। সে অন্য মানুষের আঙুল কেটে নেয়ায় তাকে আঙুল কাঁটা জগলু বলে। হিমুকে সে অনেকবার লক্ষ্য করেছে। সে ভেবেছে হয়ত হিমু পুলিশের লোক নয়তো বোমা মিজানের লোক। তাই আঙ্গুল কাটা জগলু হিমুকে ডেকে পাঠিয়েছে। এবং এই ঘটনার সাথে খান সাহেব ও তার মেয়ে মিতুর কথাও তুলে ধরা হয়েছে। এবং এইসকল কাহিনী নিয়েই আঙ্গুল কাটা জগলু বইটি লেখা হয়েছে।

হলুদ হিমু কালো র‍্যাব

হলুদ হিমু কালো র‍্যাব ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে হিমুর অবস্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হিমু একটি রুমের মধ্যে অবস্থান করছে। এবং তার হাত বাঁধা। সে ঠিক মতো নড়াচড়া করতে পারছে না। গল্পে দেখা যায়, হিমুর হাত পিছনের দিকে বাঁধা। দরিতে ফস্কা গিরোর কোনো কারবারই নেই।

সে অনেক ব্যথা অনুভব করছে। এবং তার সামনে একটি সেক্রেটারিয়েট টেবিলের মতো একটি টেবিল। এবং সেই টেবিলের ওইপাশে তিনজন বসে আছে। এইসকল কাহিনী এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এবং হিমু সিরিজের জনপ্রিয় গল্পের মধ্য হলুদ হিমু কালো র‍্যাব একটি।

শেষ কথা

হুমায়ন আহমেদের জনপ্রিয় চরিত্রের মধ্য হিমু অন্যতম। হিমু সিরিজের সকল গল্প বইপ্রেমিদের মনকে জয় করেছে। হুমায়ন আহমেদের কাল্পনিক চরিত্র হিমু। হিমুর আসল নাম হিমালয়। সে একজন মহাপুরুষ হওয়ার জন্য তার পিতার কথা অনুসরন করে চলতে থাকে। হলুদ পকেট বিহীন পাঞ্জাবি এলোমেলো জীবনযাপন ইত্যাদি তার মধ্যে দেখা যায়। নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য হিমুর নেই বললেই চলে।

তার চাকরি নেই আয়ের কোনো উৎস নেই। কারণ সে ভিক্ষুকদের থেকেও কঠোর পরিশ্রম পছন্দ করেন। পুলিশ অফিসার, ভিক্ষুক, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন এবং চা স্টলের মালিকদের সহ যে কারো ভবিষ্যত ঘটনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য তার বেশ অনুসারী রয়েছে। এবং পরিশেষে বলা যায় হিমু চরিত্র কাল্পনিক হলেও বাস্তব জীবনযাপনের সাথে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। নব্বই দশকের সকলের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় বইয়ের মধ্য একটি ছিল।

Sumon

হ্যালো বন্ধুরা, আমি এম মোহসিন আলী সুমন। আমি বিডিইবুক সাইতে একজন কন্টেন্ট রাইটার। আমি সাধারণত বাংলা ভাষার বিভিন্ন সিরিজ গল্পের চরিত্র এবং লেখক নিয়ে লেখালিখি করে থাকি। আশাকরি আমার লেখা পড়ে এসব সিরিজ সম্পর্কে আপনাদের স্পষ্ট ধারণা হবে।

Recent Posts

১২০+ বিখ্যাত হুমায়ূন আহমেদ এর উক্তি ও বাণী

হুমায়ন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় নাম। হুমায়ন আহমেদের লেখা সকল বই, বইপ্রেমিদের নানা ভাবে…

7 দিন ago

সেরা ১০০+ কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি ও বাণীসমূহ

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলের একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি। তার লেখা সকল কবিতা পাঠকদের নানা ভাবে…

7 দিন ago

নাটক ও উপন্যাসের মধ্যে পার্থক্য কিছু মিল ও অমিল

নাটক ও উপন্যাস পছন্দ করে না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই দেখা যায়। মানুষের বিনোদন…

7 দিন ago

আঞ্চলিক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য ও কিছু আঞ্চলিক উপন্যাসের উদাহরণ

বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস জগতের গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হচ্ছে আঞ্চলিক উপন্যাস। আঞ্চলিক উপন্যাসের মধ্যে কোন একটি…

1 সপ্তাহ ago

রাজনৈতিক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য ও সেরা কিছু রাজনৈতিক উপন্যাস

রাজনৈতিক উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের এমন একটি শাখা যেখানে কোনো রাজনৈতিক ঘটনা, রাজনৈতিক পরিবেশ, রাজনৈতিক ব্যক্তি,…

2 সপ্তাহ ago

জনপ্রিয় ইসলামিক উপন্যাস ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা

ইসলামিক উপন্যাস মূলত মুসলিম ধর্মের জনসাধারণের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এর কারণ…

2 সপ্তাহ ago