শিক্ষামূলক

সৌরজগৎ কি? সৌরজগতের সব গ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সৌরজগৎ নিয়ে অনেক মানুষের মনে অনেক ধারনার উপস্থিত লক্ষ্য করা যায়। প্রাচীনকালের মানুষ সৌরজগৎ নিয়ে নিজেদের মতো করে ধারনা করে সেটির পক্ষে যুক্তি সাজাত। এর কারণ সেসময় তাঁদের কাছে আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি ছিল না। ছিলনা পরীক্ষা, নিরীক্ষা করার কোন সামগ্রী। তবে তাদের সে সকল ধারনা কি আসলেই সত্য ছিল? তবে মজার বিষয় হচ্ছে সে সময়ের মানুষ খালি চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে যা বুঝত সেটিই সত্যান্বেষণের চেষ্টা করে যুক্তি সাজিয়ে সবার সামনে উপস্থাপন করতো।

এবং অনেকে আবার সেসকল যুক্তির সাথে তাদের মত মিলতে না চাইলেও মিলে ঝিলে মিলিয়ে নিত। তবে বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে আজ আমরা জানি, তাদের সেসব চিন্তা ছিল ভুল। আজকে আমরা এই আর্টিকেলে ঠিক সেসকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এবং সৌরজগতের সকল গ্রহ নিয়ে সঠিক তথ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। আসুন তাহলে তা শুরু করা যাক।

সৌরজগৎ কি?

সৌরজগৎ হলো সূর্য এবং এর আকর্ষণে আবদ্ধ সমস্ত গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু ও অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুদের সমষ্টি। সৌরজগতের সকল গ্রহ, উপগ্রহ আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কি ওয়ের একটি অংশ। সৌরজগতের মোট আটটি গ্রহের উপস্থিতি রয়েছে। তার মধ্য সবচাইতে বড় গ্রহ হলো ব্রেহস্পতি এবং ছোট গ্রহ বুধ। এছাড়াও সৌরজগতে শতশত বামন গ্রহ, ২০০ এর বেশি উপগ্রহ এবং হাজারো ধূমকেতু ও লাখো গ্রহাণুর উপস্থিতি রয়েছে। এই সকল গ্রহের পরিবেশ ভিন্ন। তথা কেউ দানবীয়, কেউ পৃথিবীর চেয়ে অনেক ছোট আবার কেউবা শুধু গ্যাস দ্বারা তৈরি।

তবে মজার বিষয় হচ্ছে এই সকল গ্রহের থেকে পৃথিবীর পরিবেশ ভিন্ন। সৌরজগতের মোট আটটি গ্রহের মধ্য পৃথিবীই হলো আমাদের একমাত্র বসবাসের স্থান। বিজ্ঞানিদের মতে সৌরজগতের শুরুটা হয়েছিল প্রায় ৪৬০ কোটি বছর আগে। আমাদের সৌরজগতের অবস্থান মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে। এবং সৌরজগতের বাইরের চারপাশে রয়েছে ওর্ট ক্লাউড। মহাকর্ষের প্রবল টানে ধুলোমেঘ এক জায়গায় জমা হয়ে সৃষ্টি হয় সূর্য। কিছু পঞ্জিভূত ধুলোর মেঘ মধ্যাকর্ষণের কারণে সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকে চাকতির মতো। সেই চাকতি থেকেই সৃষ্টি হয় সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহগুলো। সৌরজগৎ নিয়ে হাজারো তথ্যের উপস্থিতি রয়েছে যা বর্তমান যুগের মানুষদের সঠিক তথ্য জানতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।

সৌরজগতের সকল গ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

সৌরজগতের মোট আটটি গ্রহের উপস্থিতি রয়েছে। যা সূর্যের চারদিকে কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান। সৌরজগতের প্রত্যেকটি গ্রহের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন আকৃতির। প্রতিটি গ্রহের পরিবেশ তাপমাত্রা এবং জলবায়ু আলাদা। সমগ্র সৌরজগতের ভরের অধিকাংশ অংশই রয়েছে সূর্যে। এবং অবশিষ্ট ভরের অধিকাংশ ধারণ করে রয়েছে বৃহস্পতি। এবং সৌরজগতে চারটি ক্ষুদ্রতর অভ্যন্তরীণ গ্রহ, অর্থাৎ বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল শিলাময় গ্রহ নামে পরিচিত। এর কারণ এই সকল গ্রহ প্রধানত শিলা ও ধাতু দ্বারা গঠিত। অপরদিকে চারটি বহিঃস্থ গ্রহ রয়েছে তা হল দানব গ্রহ।

বস্তুগত দিক থেকে এগুলি শিলাময় গ্রহগুলির তুলনায় অনেক কম ঘনত্বযুক্ত হলেও আয়তন অত্যধিক বেশি। এবং এই সকল গ্রহ আয়তনে বেশি হওয়ায় অনেক ভরযুক্ত। এগুলির মধ্যে বৃহত্তম গ্রহ দুটি হল বৃহস্পতি ও শনি। তবে মজার বিষয় হচ্ছে বৃহস্পতি ও শনি মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দ্বারা গঠিত হওয়ায় এগুলি গ্যাস দানব নামে পরিচিত। অপরদিকে দুই সর্ববহিঃস্থ গ্রহ ইউরেনাস ও নেপচুন তুষার দৈত্য নামে পরিচিত। নিচে আমরা সৌরজগতের আটটি গ্রহের বিস্তারিত তথ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করছিঃ

১.পৃথিবী

পৃথিবী সৌরজগতের প্রাণের একমাত্র গ্রহ হিসেবে পরিচিত। এবং সৌরজগতের মোট আটটি গ্রহের মধ্য পৃথিবী তৃতীয় তম গ্রহ। বিজ্ঞানিদের মতে এখন পর্যন্ত পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। আকারের দিক থেকে পৃথিবী পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। পৃথিবী গঠন ও পরিবেশগত দিক থেকে অত্যন্ত অনন্য। এবং মজার বিষয় হচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ু ও পরিবেশগত দিক থেকে অন্যান্য গ্রহ হতে ভিন্ন হওয়ায় এটিকে মহাবিশ্ব থেকে নিল রঙের আকৃতি দেখায়। তাই বিজ্ঞানিরা এই গ্রহকে নীল গ্রহ হিসেবে আখ্যায়িত করে। পৃথিবীর পৃষ্ঠের প্রায় ৭০% জল দ্বারা আচ্ছাদিত। এবং এর জলবায়ুতে শতকরা ২১ ভাগ অক্সিজেন থাকায় এখানে জীবনের বিকাশ ঘটা সম্ভব হয়েছে। বলে রাখা ভালো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বিশেষ এক ধরনের স্তর রয়েছে।

সেই বিশেষ এক স্তরের ওপর সূর্যের নীল রঙ ছড়িয়ে পড়ায় পৃথিবীকে নিল দেখায়। এছাড়াও এর বৈজ্ঞানিক নানা তথ্য রয়েছে যা নানা ভাবে প্রমাণিত। পৃথিবীতে বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের পরিক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। যেটির মাধ্যমে আমরা পৃথিবী সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে সক্ষম হয়েছি। সেইসাথে এটিই একমাত্র গ্রহ যাতে গ্রহ টেকটোনিক পর্যবেক্ষণ করতে বিজ্ঞানীরা সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীতে মানুষ সহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল রয়েছে। এছাড়াও পৃথিবীর উপরিতল একাধিক শক্ত স্তরে বিভক্ত। মহাবিশ্বের অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশেষ করে সূর্য ও চাঁদের সঙ্গে এই গ্রহের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।

২.বুধ

বুধ সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম ও নিকটতম গ্রহ। বুধ যেটিকে ইংরেজিতে Mercury বলা হয়। বুধ একটি পাথুরে গ্রহ যার তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি। এবং এই গ্রহে বায়ুমণ্ডল প্রায় নেই বললেই চলে। বুধ গ্রহের গঠন ও পরিবেশ গত দিক দিয়ে একে সৌরজগতের অন্যতম রহস্যময় গ্রহ হিসেবে পরিচিত করা হয়। বুধের ব্যাসার্ধ ২,৪৪০ কিমি। এবং সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ৫৭.৯ মিলিয়ন কিমি। বুধের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১৬৭°C। তবে মজার বিষয় হচ্ছে বুধ গ্রহ থেকে চাঁদ দেখা যায় না। বুধের অভ্যন্তরীণ গঠন তিনটি স্তরে বিভক্ত কেন্দ্র, ম্যান্তল, ও ভূত্বক। বিজ্ঞানীরা বুধ গ্রহের ওপর পরিক্ষা করে জানতে পারে বুধের পৃষ্ঠে রয়েছে প্রচুর পরিমানের গহ্বর। যেটির ফলে প্রমান হয় এটি বহু বছর ধরে উল্কাপাতের শিকার হয়েছে।

এছাড়াও বিজ্ঞানীরা বুধের আকার সম্পর্কে পরিক্ষা করতে গেলে তারা জানতে পারে বুধের কক্ষপথ বেশ ডিম্বাকৃতি। যেটির কারণে গ্রহটি কখনো সূর্যের কাছাকাছি আসে, আবার কখনো দূরে সরে যায়। বুধ সূর্যকে ৮৮ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। এই গ্রহটি নিজের অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণায়মান হতে ৫৮.৬ দিন নেয়। ফলে বুধে একটি দিন পৃথিবীর ১৭৬ দিনের সমান। পরিবেশগত দিক দিয়ে ভাবলে বুধে হালকা পরিমাণে কিছু গ্যাস রয়েছে। সেইসাথে বুধের বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত অক্সিজেন, সোডিয়াম, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি গ্যাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তবে বুধের মহাকর্ষ অত্যন্ত কম হওয়ায় এটি একটি ঘন বায়ুমণ্ডল ধরে রাখতে পারে না।

৩.শুক্র

শুক্র গ্রহ সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে সৌরজগতের দ্বিতীয় তম গ্রহ। মজার বিষয় হচ্ছে পৃথিবী এবং শুক্রের মধ্যে গাঠনিক উপাদান এবং আচার আচরণে বড় রকমের মিল রয়েছে। তাই এটিকে পৃথিবীর বোন গ্রহ বলে আখ্যায়িত করা হয়। পৃথিবীতে এই গ্রহটি যখন সকালের আকাশে উদিত হয় তখন একে শুকতারা এবং যখন সন্ধ্যার আকাশে উদিত হয় তখন একে সন্ধ্যাতারা বলে ডাকা হয়। তবে শুক্র গ্রহের কোন উপগ্রহ নেই। শুক্রের গঠন অনেকটা পৃথিবীর মতো, তবে এর ভূত্বক ও ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপ ভিন্ন। এই গ্রহের অভ্যন্তরীণ স্তরে কেন্দ্র, ম্যান্তল, ও ভূত্বক নামক স্তরের উপস্থিতি রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে শুক্র গ্রহ সূর্যের চারদিকে ২২৫ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। এটি নিজের অক্ষের চারদিকে ২৪৩ দিনে একবার ঘূর্ণন করে, যা সৌরজগতের যেকোনো গ্রহের চেয়ে ধীর।

শুক্রের বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত ঘন এবং প্রধানত এটি কার্বন ডাই অক্সাইড দ্বারা গঠিত। কাজেই এটি অত্যন্ত শক্তিশালী গ্রিনহাউস এফেক্ট তৈরি করে, যার ফলে শুক্র সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রহ হয়ে উঠেছে। এছাড়াও শুক্র গ্রহ সম্পর্কে নানা মজার তথ্যের উপস্থিতি রয়েছে। তার মধ্য অন্যতম পৃথিবীর সাথে এটি যমজ হলেও এটি বসবাসের অনুপযুক্ত। আবার শুক্রের একটি দিন, এর এক বছরের চেয়েও দীর্ঘ, শুক্রই একমাত্র গ্রহ, যেখানে সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে। এছাড়াও বিজ্ঞানীরা এই গ্রহ সম্পর্কে আরও নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন, যেটি আসলেই অকল্পনীয়। বলে রাখা ভালো শুক্র সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রহ হলেও এটির পরিবেশ বেশ ভয়ংকর। শুক্র গ্রহ নিয়ে আরও নানা রহস্যময় তথ্য রয়েছে। এবং ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা শুক্রের আবহাওয়া ও আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে আরও গবেষণা করতে চান।

৪.মঙ্গল

মঙ্গল গ্রহকে ইংরিতে Mars বলা হয়। এটি সৌরজগতের চতুর্থ তম গ্রহ। সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে এই গ্রহটি পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহ হিসেবে বিবেচিত। তবে মজার বিষয় হচ্ছে এই গ্রহটি লালচে বর্ণের। তাই এই গ্রহকে বিজ্ঞানীরা লাল গ্রহ বলে আখ্যায়িত করে। পৃথিবী ছারাও বসবাসের যোগ্য বলে মনে করা হয় এই মঙ্গল গ্রহকে। মঙ্গলের ওপর বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের গবেষণা করছেন। এর কারণ এটি পৃথিবীর পরে সবচেয়ে বেশি বসবাসযোগ্য গ্রহ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। আকারের দিক থেকে মঙ্গলের ব্যাস প্রায় ৬,৭৯২ কিমি। এবং এটির ভর পৃথিবীর ভরের মাত্র ১০.৭%। মঙ্গলের গড় তাপমাত্রা ১৪০°C থেকে ৩০°C পর্যন্ত ওঠানামা করে। এবং মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল অনেক পাতলা। সেখানকার প্রাকৃতিক ধূলিঝড় অনেক বড় এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারনা।

বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় মঙ্গলের ভূগর্ভস্থ অঞ্চলে বরফের উপস্থিতি পেয়েছে। এবং তারা বিশ্বাস করেন অতীতে মঙ্গলে তরল পানির নদী ও হ্রদ ছিল। ঠিক সে কারণে মঙ্গলে বরফের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এপর্যন্ত মঙ্গল গ্রহ নিয়ে অনেক গবেষণা চালানো হয়েছে তার মধ্য উল্লেখযোগ্য কিছু মিশন হচ্ছে ভাইকিং, পাথফাইন্ডার, কিউরিওসিটি, ও পারসিভেরেন্স। মজার বিষয় হচ্ছে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। এবং এটিকে বাস্তবায়িত করতে এলন মাস্কের SpaceX Starship রকেটের মাধ্যমে ২০৩০ এর দশকের দিকে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্য নিয়েছে বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলগ্রহকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্যের শেষ নেই। তবে উন্নতি প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহের সম্পর্কে মানুষদের সঠিক তথ্য দিতে সক্ষম হচ্ছে। ভবিষ্যতে মানব সভ্যতার জন্য দ্বিতীয় আবাসভূমি হতে পারে এই মঙ্গল গ্রহ।

৫.বৃহস্পতি

বৃহস্পতি সৌরজগতের পঞ্চম তম গ্রহ। এবং এটি সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এটিকে দৈত্যকার গ্রহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বৃহস্পতি গ্রহটি মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যস দ্বারা গঠিত। মজার বিষয় হচ্ছে বৃহস্পতি ব্যতীত সৌর জগতের বাকি সবগুলো গ্রহের ভরকে একত্র করলে বৃহস্পতির ভর তা থেকে আড়াই গুণ বেশি হবে। অন্যান্য গ্রহের থেকে বৃহস্পতি গ্রহটি খুব দ্রুত ঘূর্ণনের কারণে এর আকৃতি হয়েছে কমলাকৃতির গোলকের মত। অনেকে আবার এটিকে কমলা গ্রহ নামে আখ্যায়িত করে থাকে। এই গ্রহের পরিবেশের একটি অন্যতম ফলাফল হচ্ছে মহা লাল বিন্দু। মূলত এটি একটি শক্তিশালী ঝড়, যা সপ্তদশ শতাব্দী থেকে একটানা বয়ে চলেছে বলে ধারনা করেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের সর্বশেষ তথ্য মতে বৃহস্পতির রয়েছে ৯৫টি উপগ্রহ, যাদের মধ্যে ৪টি উপগ্রহ বৃহৎ আকৃতির।

গঠনের দিক দিয়ে বৃহস্পতি চারটি বৃহৎ গ্যাসীয় দানবের একটি বলা হয়। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে মূলত হাইড্রোজেন ৮৯% ও হিলিয়াম ১০% দিয়ে গঠিত। এতে সামান্য পরিমাণ মিথেন, অ্যামোনিয়া ও জলীয় বাষ্প সহ অন্যান্য গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতি গ্রহ নিয়ে অনেক গবেষণা করে আসছেন। এবং তারা তাদের গবেষণায় বৃহস্পতি সম্পর্কে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য আমাদের মাঝে উপস্থিত করেছেন। বৃহস্পতিকে ঘিরে বহু মহাকাশ অভিযান পরিচালিত করা হয়েছে। যার মধ্য রয়েছে পাইওনিয়ার, ভয়েজার, গ্যালিলিও, ও জুনো। এসকল অভিজানের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আমাদের সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। বৃহস্পতি গ্রহটি সৌরজগতের অন্যতম একটি রহস্যময় গ্রহ। বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যতে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও নতুন তথ্য আমাদের মাঝে উন্মোচন করতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

৬.শনি

শনি সৌরজগতের ষষ্ঠতম গ্রহ। এবং এটি সৌরজগতে বৃহস্পতি গ্রহের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাসীয় দৈত্য গ্রহ হিসেবে পরিচিত। শনি গ্রহের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর বৈশিষ্ট্য হল এর বর্ণময় রিং সিস্টেম। তবে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে শনি সবচেয়ে সুন্দর গ্রহগুলোর মধ্যে একটি। শনি গ্রহের বাংলা নামটি এসেছে হিন্দু গ্রহদেবতা শনির নাম থেকে। অন্যদিকে ইংরেজি নাম স্যাটার্ন এসেছে রোমান ধনসম্পদ ও কৃষিদেবতা স্যাটার্নের নাম থেকে। প্রাচীনকাল থেকেই শনি গ্রহ জ্যোতির্বিদদের কৌতূহলের মূল বিষয়ের মধ্য অন্যতম ছিল। যেটির ফলে সেসময় এই গ্রহটিকে নিয়ে অনেকেই অনেক ধারনা ও মতামত প্রকাশ করতো। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন দলিল বা প্রমান কারো কাছে ছিলনা।

তবে বর্তমান সময়ে আধুনিক বিজ্ঞান এটিকে নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উন্মোচন করেছে। যা আসলেই মহাকাশ বা সৌরজগৎ সম্পর্কে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আমাদের মাঝে তুলে ধরে। আয়তনের দিক দিয়ে শনি গ্রহের ব্যাস প্রায় ১,২০,৫৩৬ কিমি। এবং এটির ভর পৃথিবী হতে ৯৫ গুণ বড়। শনি গ্রহের উপগ্রহের সংখ্যা প্রায় অত্যাধিক। তবে বিজ্ঞানীদের মতে উপগ্রহের সংখ্যা ১৪৬ এর ও বেশি। এই গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র বৃহস্পতির চেয়ে অনেক দুর্বল হলেও পৃথিবীর চেয়ে অনেক শক্তিশালী। শনির বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেনের পরিমান ৯৬%। এবং হিলিয়ামের পরিমান রয়েছে ৩%। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী শনি গ্রহের উত্তর মেরুতে একটি রহস্যময় ষড়ভুজাকার ঝড় রয়েছে, যেটির ব্যাস প্রায় ৩০,০০০ কিমি। তবে এই ঝড়ের অদ্ভুত আবহাওয়াগত গঠনের রহস্য এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি।

৭.ইউনেরাস

ইউরেনাস সৌরজগতের একটি গ্রহ। সৌরজগতে সূর্যের দিক থেকে এর অবস্থান সপ্তম। এবং আকারের দিক দিয়ে এটি তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ। ইউরেনাস মূলত অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই আগে লক্ষ্য করেছিলেন। তবে অনেকেই এটিকে সৌরজগতের গ্রহ হিসাবে বিবেচনায় আনতে পারেননি। পরবর্তীতে অনেক ঘটনার পরে স্যার উইলিয়াম হার্শেল এই গ্রহটিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পর তিনি একে সৌরজগতের গ্রহ হিসাবে স্বীকৃতি দেন। যদিও প্রথমাবস্থায় অনেক বিজ্ঞানী এটি মানতে চাননি। তবে পরিশেষে এটিকে গ্রহ হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়। ইউরেনাসকে ইংরেজিতে Uranus বলা হয়। তবে মজার বিষয় হচ্ছে এই গ্রহটি প্রায় ৯৮° কাত হয়ে তার অক্ষে ঘূর্ণন করে, যেটি সৌরজগতের অন্য কোনো গ্রহের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।

এবং বিজ্ঞানীদের মতে এই গ্রহের দিন ও রাতের চক্র সঠিক ভাবে বোঝা যায় না। গঠনের দিক দিয়ে ইউরোনাসে প্রধানত হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এই গ্রহটি গ্যাসীয় হলেও বৃহস্পতি বা শনির মতো নয়। এতে বরফের মতো বিভিন্ন যৌগের উপস্থিতি রয়েছে। বলে রাখা ভালো, ইউরেনাসের ২৭টির ও বেশি উপগ্রহ রয়েছে। এর বিখ্যাত উপগ্রহসমূহ হলোঃ টাইটানিয়া, ওবেরন, উম্ব্রিয়েল, এরিয়েল ও মিরান্ডা। ইউরেনাস সৌরজগতের অন্যতম রহস্যময় এবং অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের গ্রহ। এর অদ্ভুত অক্ষীয় কাত, নীলচে বর্ণ, অস্বাভাবিক চৌম্বক ক্ষেত্র এবং শীতল আবহাওয়া একে একটি বিশেষ গবেষণার বিষয় করে তুলেছে।

৮.নেপচুন

নেপচুন সৌরজগতের অষ্টম তম গ্রহ। এটি সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ। নেপচুনকে রোমান সমুদ্র দেবতার নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। নেপচুনের পরিবেশ অনেকটা ইউরেনাস গ্রহের মতো। এই গ্রহের আবহাওয়া অত্যন্ত উগ্র, এবং এটি সৌরজগতের সবচেয়ে প্রবল বাতাসের গ্রহ হিসেবে পরিচিত। নেপচুনের উপগ্রহের সংখ্যা ১৪টিরও বেশি। এর বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন, অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নেপচুনের বাতাসের গতি ২,১০০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারনা। নেপচুন কেবল মাত্র একটি মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে যেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ অভিযানের মধ্য একটি, যা ভয়েজার ২ নামে পরিচিত।

তবে ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা নেপচুনের দিকে একটি নতুন মহাকাশ মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। যা ২০৪০ এর দশকের মধ্যে চালু হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। বলে রাখা ভালো নেপচুনের বায়ুমণ্ডলে প্রচণ্ড চাপ ও তাপমাত্রা থাকার কারণে এখানে প্রাণের কোন সম্ভাবনা নেই। নেপচুন গ্রহ নিয়ে হাজারো রহস্যের শেষ নেই। তবে আধুনিক বিজ্ঞানের কারণে নেপচুন সম্পর্কে অনেক নিত্য নতুন তথ্য আমরা জানতে সক্ষম হয়েছি। নেপচুন সৌরজগতের অন্যতম রহস্যময় এবং আকর্ষণীয় গ্রহ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। এবং ভবিষ্যতে এর উপগ্রহগুলোর বরফের নিচে জীবনের সম্ভাবনা খুঁজতে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা চলমান রাখবেন বলে জানা গেছে।

শেষ কথা

সৌরজগৎ একটি রহস্যময় মহাজাগতিক অঞ্চল। যা আমাদের সূর্য এবং তার চারপাশের গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। সৌরজগত মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশ। তবে এই সৌরজগত নিয়ে হাজারো তথ্যের শেষ নেই। সৌরজগত নিয়ে অনেকের মনে অনেক ধারনার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তবে আজকে আমরা এই আর্টিকেলে সেসকল ভুল ধারনাকে সংশোধন করার চেষ্টা করেছি। এবং সৌরজগৎ সম্পর্কে সঠিক তথ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আসা করছি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে। নিয়মিত এই সকল তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।

Taufik

হ্যালো বন্ধুরা, আমি তৌফিক বিডিইবুক সাইটের একজন কন্টেন্ট লেখক। আমি মূলত বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বাংলা ভাষার বই নিয়ে লেখালিখি করে থাকি। বিডিইবুক সাইটে আমার লেখা পড়লে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলা ভাষার বই সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমি সব সময় সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করে থাকি যা আপনারা আমার লেখা পড়লেই বুজঝতে পারবেন।

Recent Posts

আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ১০টি কার্যকর কৌশল যা সবার জানা প্রয়োজন

আত্মবিশ্বাস বাড়ানো আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাস একজন মানুষের…

3 সপ্তাহ ago

জনপ্রিয় বাংলা সাহিত্য পুরস্কার ও তার গুরুত্ব

বাংলা সাহিত্যের প্রচলন অনেক আগে থেকেই। বাংলা সাহিত্যে অনেক কিছু শিক্ষণীয় বিষয়ের সাথে বাস্তবতার মিল…

3 সপ্তাহ ago

স্বাস্থ্য ও মানসিক প্রশান্তির জন্য আমাদের যে বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত

স্বাস্থ্য মানুষের জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। অপরদিকে মানসিক প্রশান্তি ছাড়া আমাদের জীবনের সুখ শান্তি কল্পনা…

4 সপ্তাহ ago

বাংলা নাটকের ইতিহাস ও ক্রমবর্ধমান ধারা

নাটক সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা। নাটকে আমরা মূলত অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের নড়াচড়া, কথাবার্তা ইত্যাদির মাধ্যমে…

4 সপ্তাহ ago

সময় ব্যবস্থাপনা ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর ১০টি কার্যকর উপায়

সময় আমাদের জীবনের অনেক বড় একটি অংশ। এই পৃথিবীতে আমাদের সকলের জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে…

1 মাস ago

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন কেন্দ্র সমূহের বিস্তারিত আলোচনা

সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশের সমুজ শ্যামল মাঠ, বিস্তীর্ণ…

1 মাস ago