সময় আমাদের জীবনের অনেক বড় একটি অংশ। এই পৃথিবীতে আমাদের সকলের জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে যা অতিবাহিত হলে আমাদের এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। তাই আমাদের সকলের এই নির্দিষ্ট সময়কে সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে পৃথীবিতে সফল ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এ জন্য আমাদের প্রয়োজন সময়ের কাজ সময়ে করা এবং সময়কে কিভাবে সঠিক কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, যে সময় এক বার অতিবাহিত হবে তা হাজার চেষ্টার পরেও ফিরিয়ে আনা যাবে না। তাই তো কবি বলেছে, সময় এবং নদীর স্রোত এক বার চলে গেলে আর ফিরে আসে না। তাই আমরা আজকে এই প্রবন্ধে আলোচনা করবো কিভাবে সময়কে সঠিক ভাবে কাজে লাগানো যায় এবং আমাদের কাজের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো যায়।
সময় ব্যবস্থাপনা আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের এই সংক্ষিপ্ত জীবনে সময়কে সঠিক ভাবে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে। যে কোন কাজ করার আগে আমাদের মাথায় রাখতে হবে কিভাবে কম সময়ের মধ্যে কাজটির সঠিক আউটপুট বের করা যায়। কম সময়ের মধ্যে যে কোন কাজের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে হলে সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরী। সে জন্য আমাদের প্রথমে একটি কাজকে কয়েকটি ধাপে বিভক্ত করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিটি ধাপে ঠিক যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সেই সময়ের মধ্যে ঐ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য রাকখতে হবে, যেনো সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে পারি। কারণ একটা প্রবাদ বাক্য আছে, সময় গেলে সাধন হবে না। সময়ের কাজ সময়ে না করলে সেই কাজ অসম্পন্ন থেকে যাবে এবং পরের ধাপে কাজের চাপ বেরে যাবে, এর ফলে কাজের প্রোডাক্টিভিটির উপর প্রভাব পড়বে। এ জন্য সময় ব্যবস্থাপনা ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর আমাদের কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলো।
আমাদের সকলের প্রতিদিনের কাজের একটা সুন্দর তালিকা থাকা প্রয়োজন। আমরা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কি কি কাজ করব, কোথায় যাবো সব কিচছুর একটা সুন্দর তালিকা করা দরকার। এই তালিকার মধ্যে আমাদের উচিৎ খুব জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে রাখা এবং কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরে করা। প্রতিদিনের এমন একটা কাজের তালিকা থাকলে আমারা যেমন সকল কাজ সময় মত করতে পারবো, তেমনি কোন কাজ বাদ পড়বে এমন কিছু হবে না। এসব কাজের তালিকা এবং সময় বাচানোর জন্য আমরা বিভিন্ন ডিজিটাল টুল ব্যবহার করতে পারি, যেমনঃ Google Keep, Todoist, TickTick Microsoft To Do ইত্যাদি।
সময় ব্লকিং পদ্ধতি অনুসরণ করা আমাদের সকলের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন কাজের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে। সেই সময়ের মধ্যে ঐ কাজটি সম্পন্ন করতে চেষ্টা করুণ। এক সাথে অনেক কাজ করা যাবে না, একটা সময়ে একটা কাজই সম্পন্ন করতে হবে। এক সাথে বেশি কাজ করলে কোন কাজের মধ্যেই ঠিক ভাবে সময় এবং ফোকাস প্রদান করা সম্ভব না। এ জন্য প্রতিদিন একটা কাজের পিছনে নির্দিষ্ট সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যয় করতে হবে। একটা কাজ শেষ করার পর অন্য কাজে সময় নির্ধারণ করে শুরু করতে হবে।
আমরা যে কোন কাজ করার আগে সেই কাজকে সুন্দর ভাবে পরিচালনা করার জন্য কিছু অংশে ভাগ করে থাকি। এর মধ্যে আমাদের কাজের ২০% থেকে আমরা যে ফলাফল পাই তা সম্পুর্ণ কাজের ৮০% বুঝানো হয়। যে কোন কাজের যদি ২০% সুন্দর ভাবে সময় মত সম্পর্ন করতে পারি তবে বুঝতে হবে ঐ কাজের ৮০% সফলতা নিশ্চিত। এখানে যে কাজ গুলো বেশি প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি করে, সেগুলোর ওপর আমাদের আগে ফোকাস করতে হবে। আবার যে সকল কাজ তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর জন্য সময় নষ্ট না করে আউটসোর্স বা ডেলিগেট করতে হবে। আমাদের সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে কম সময়ের মধ্যে কিভাবে ১০০% কাজ সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করা যায়।
অনেক প্রকার কাজ আছে যেসব কাজ আমাদের একাধারে বহু সময় ধরে করতে হয়। বহু সময় ধরে একটা কাজ করতে করতে আমাদের ভিতর ক্লান্তি চলে আসে যার জন্য কাজের ফোকাস নষ্ট হয়। তাই সেযব কাজ বেশি সময় ধরে করতে হয় সে সকল কাজের সময়কে ২৫ মিনিট করে ভাগ করতে হবে। এরপর প্রতি ২৫ মিনিট পর একটা ৫ মিনিটের বিরতি নিতে হবে। এই ২৫ মিনিট পর একটা ৫ মিনিটের বিরতিকে পমোডোরো কৌশল বলা হয়ে থাকে। প্রতি ২৫ মিনিটের চারটি বিরতির পর একটা ১৫-৩০ মিনিটের দীর্ঘ বিরতি নিতে হয়। যার ফলে আমাদের কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে এবং ক্লান্তি কমে যায়।
প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে। যে কোন কাজের লক্ষ্য স্থির না থাকলে সেই কাজের ফলাফল সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যায় না। তাই আমরা যে কোন কাজ করার আগে সেই কাজের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করব যাতে সেই কাজ সফল ভাবে সম্পূর্ণ করতে পারি। যে কোন কাজ আমাদের জীবনের সাথে সম্পর্কিযুক্ত হতে হবে, তাহলে সেই কাজর প্রতি ভাল লাগা কাজ করতে এবং কাজ করে নিজের ভিতর একটা শাক্তি পাওয়া যাবে। আবার কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্জনযোগ্য হওয়া উচিত। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করতে না পারলে কাজের শেষ ভাগে এসে প্রচুর চাপ অনুভব করতে হবে।
অনেক সময় আমরা কাজ করি কিন্তু আমাদের জীবনে সফলতা ঠিক ভাবে ধরা দেয় না। আমরা কাজ করি কিন্তু কোন কাজ কিভাবে করতে হবে বা কোন কাজ আগে করতে হবে তা জানি না। তাই কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী আমাদের কাজকে চারটি ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রথমত, জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ অনুযায়ী কাজকে ভাগ করতে হবে যেগুলো এখনই করতে হবে। জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের সবার আগে সম্পন্ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জরুরি নয় এমন টাইপের কাজকে আমাদের পরিকল্পনা করে রাখতে হবে। প্রথম টাইপের কাজ শেষ করার পর এসব কাজ করতে হবে। তৃতীয়ত, কিছু কাজ রয়েছে জরুরি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নয়, এসব কাজ আমাদের বাহিরের কাওকে দিয়ে করে নিতে হবে। এসব কাজের জন্য নিজে সময় নষ্ট না করায় ভালো। চতুর্থত, এমন কিচছু কাজ আছে যেগুলো না জরুরি, না গুরুত্বপূর্ণ এসব কাজকে আমাদের বাদ দিতে হবে। এভাবে আমরা চারটি ধাপে আমাদের কাজকে ভাগ করে সুন্দর ভাবে সম্পর্ন করতে পারি।
আমরা যদি কোন কাজ শতভাগ সফলতার সাথে করতে চাই তবে সেই কাজ মনোযোগ সহকারে করতে হবে। যে কোন কাজ মনোযোগ সহকারে করলে খুব কম সময়ে সম্পুর্ণ করা যায়। কিন্তু কাজের মধ্যে যদি সেই মনোযোগ নষ্ট হয় তবে পুনুরাই কাজে মনোযোগ নিয়ে আসতে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তা কাজের মনোযোগ যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য আমাদের কাজের সময় মোবাইল নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ কাজের সময় মোবাইল নোটিফিকেশনের জন্য কাজের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। আবার কাজ করার সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা যাবে না, এর ফলে কাজের মনোযোগ নষ্ট হয় এবং কাজের ব্যাঘাত ঘটে। তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার জন্য আমাদের নির্দিষ্ট একটা সময় নির্ধারণ করতে হবে। আবার অনেক সময় আমরা কাজের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে কাজের পরিবেশ এবং সময় নষ্ট করি। এ জন্য কাজের সময় আমাদের উচিৎ অপ্রয়োজনীয় কথা বলা বা গসিপ এড়িয়ে চলা।
আমরা অঙ্কে সময় একটা কাজ করার পাশাপাশি অন্য আরও অনেক কাজ করে থাকি। যার ফলে একটা কাজ শেষ করার চিন্তা মাথায় থাকে তার উপর অন্য একটা কাজের চিন্তা, যার কারণে কোন কাজই সম্পুর্ণরূপে ভাল ভাবে শেষ করতে পারি না। আবার এক সাথে অনেক কাজ করতে কাজ করার কার্যকারিতা অনেকাংশে কমে যায়। এ জন্য আমাদের সব সময় একবারে একটি কাজের পাশাপাশি অন্য কোন কাজ করা ঠিক না। একটি কাজ সম্পন্ন করার পর অন্য কাজে হাত দিয়া প্রয়োজন। এতে যেমন আমাদের মানসিক চাপ কমে যায়, ঠিক তেমন ভাবে কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
আমাদের মাঝে অনেকে আছে সব সময় কাজ নিয়ে থাকে, কাজ ছাড়া অন্য কিছু করতে চায় না। সব সময় কাজের মধ্যে থাকলে আমাদের শারীর এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং বিভিন্ন অসুখবিসুখ আমাদের শরীরে বাসা বাধবে। এ জন্য কাজের পাশাপাশি আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। আমাদের শারীরিক ক্লান্তি দূর করার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে, এর জন্য নিয়মিত প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি। ঘুমের পাশাপাশি আমাদের নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করতে হবে যাতে শারীর ফিট থাকে। আবার শুধু ব্যায়াম করলে হবে না এর সাথে প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার শরীরে পুষ্টি যোগান দিবে এবং শরীরকে স্ট্রোং রাখবে। প্রতিদিন কাজের পর কিছু সময় বিশ্রাম নিতে হবে, বিশ্রামের ফলে কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে এবং কাজের গতি বৃদ্ধি পায়।
আমরা প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু কাজের অগ্রগতি নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করছি না, তাহলে আমাদের কাজ সময় মত সম্পুর্ণ করতে পারব নাকি সেইটা বুঝা মসকিল হয়ে পড়বে। আমরা যদি প্রতি সপ্তাহে নিজের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করি, তবে কিভাবে কাজ করলে আরও আগে সম্পন্ন হবে তা নিয়ে চিন্তা করতে পাড়ব এবং সেই ভাবে কাজ করতে পাড়ব। আবার কোন কাজ বেশি সময় নিচ্ছে বা কোথায় সময় বেশি নষ্ট হচ্ছে সে সম্পর্কে বুঝতে পাড়ব। কাজ বিশ্লেষণের করলে কাজের উন্নতির জন্য নতুন কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পাড়ব। যার ফলে যে কাজ সম্পন্ন হতে ১ মাস সময় লাগবে তা আরও কম সময়ে সম্পন্ন করা যাবে। তাই আমাদের উচিৎ প্রতি সপ্তাহে আমাদের কাজ নিয়ে বিশ্লেষণ করা এবং কিভাবে কম সময়ে উন্নতি করা যায় তা বের করা।
সময় ব্যবস্থাপনা ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য আপনাকে নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। উপরের কৌশলগুলো অনুসরণ করলে আপনি প্রতিদিনের কাজ আরও দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে পারবেন এবং আপনার মূল্যবান সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবেন। সফল ব্যক্তিরা সময়ের সঠিক ব্যবহার জানেন, তাই আপনিও যদি সফল হতে চান, তাহলে এখন থেকেই সময় ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দিন। সকল কাজের পুর্বে আমাদের সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে হবে এবং কিভাবে কম সময়ে কাজের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো যায় এবং বেস্ট আউটপুট পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
আত্মবিশ্বাস বাড়ানো আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাস একজন মানুষের…
বাংলা সাহিত্যের প্রচলন অনেক আগে থেকেই। বাংলা সাহিত্যে অনেক কিছু শিক্ষণীয় বিষয়ের সাথে বাস্তবতার মিল…
স্বাস্থ্য মানুষের জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। অপরদিকে মানসিক প্রশান্তি ছাড়া আমাদের জীবনের সুখ শান্তি কল্পনা…
নাটক সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা। নাটকে আমরা মূলত অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের নড়াচড়া, কথাবার্তা ইত্যাদির মাধ্যমে…
সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশের সমুজ শ্যামল মাঠ, বিস্তীর্ণ…
জাতীয় দিবস একটি নির্ধারিত দিন যে দিনে কোন রাষ্ট্র বা সার্বভৌম জাতির জাতিসত্তা চিহ্নিত করা…