মানুষ অভ্যাসের দাস। যদি সেটা হয় বই পড়া তাহলে কেমন হয়? বই পড়া মানুষের সবচেয়ে বড় অভ্যাসের মধ্য একটি। বই শুধুমাত্র একটি বিনোদনের মাধ্যম নয়। বরং এটি মানব জীবনের জন্য একটি নিষ্ক্রিয় অভিজ্ঞতা এবং কাল্পনিকতার প্রধান উৎস। ভারতীয় এমন অনেক লেখক রয়েছে যাদের প্রায় সকল বই পাঠকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এবং এইসকল বইগুলো জীবনের নানা দিক নিয়ে রচিত হয়েছে।
তাই ভারতীয় বাঙালি লেখকরা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের অনবদ্য রচনা এবং চিন্তা-ধারা দিয়ে। এই লেখকরা বিভিন্ন ধারায় লিখেছেন, যেমন কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, এবং ছোটগল্প। এই লেখকরা বাংলা সাহিত্যের অনন্য প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং তাদের কাজ আজও সাহিত্যপ্রেমীদের অনুপ্রাণিত করেছেন। আজকে আমরা এইসকল বইয়ের লেখকদের নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আসুন তাহলে শুরু করা যাক।
১০ বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক
ভারতীয় বাঙালি লেখকরা বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগ সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় তাদের অনন্য অবদান রেখে গিয়েছেন। এই ভারতীয় বাঙালি লেখক তারা তাদের অসাধারণ সাহিত্যকর্মের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। নিচে কয়েকজন বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখকের নাম এবং তাদের উল্লেখযোগ্য কাজ উল্লেখ করা হলো:
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- কাজী নজরুল ইসলাম
- জীবনানন্দ দাশ
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
- স্বামী বিবেকানন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন বাঙালি কবি, দার্শনিক, কণ্ঠশিল্পী, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রকর, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক। এছাড়া তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। যার মাধ্যমে তিনি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ মে ১৮৬১ সালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান তাঁর কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি জন্য। ৭ আগস্ট ১৯৪১সালে (বয়স ৮০) জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যু বরন করে।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এছাড়াও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গুলো হলঃ গীতাঞ্জলি, সোনার তরী, বলাকা, চিত্রা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিখ্যাত উপন্যাস গুলো হলঃ ঘরে বাইরে, গোরা, চোখের বালি, নৌকাডুবি, যোগাযোগ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে লেখা কিছু বিখ্যাত নাটক রয়েছে। যেমনঃ রক্তকরবী, ডাকঘর, তাসের দেশ, বিসর্জন। এছাড়া ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখা বিখ্যাত ছোটগল্প /প্রবন্ধ ও দর্শন বই রয়েছে। যেমনঃ কাবুলিওয়ালা, ছুটি সমাপ্তি, দেনাপাওনা, সভ্যতার সংকট, সাধন, জাতীয়তাবাদ। তার লেখা বই গুলো আমাদের জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার উৎস জাগিয়েছে।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক, ও গল্পকার। তিনি ৩১শে ভাদ্র, ১২৮৩ বঙ্গাব্দে (১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি বিভাগের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে পাঁচ বছর বয়সকালে মতিলাল তাকে দেবানন্দপুরের প্যারী পণ্ডিতের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন। রপর ভাগলপুর শহরে থাকাকালীন তার মামা তাকে স্থানীয় দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয়ে ছাত্রবৃত্তিতে ভর্তি করিয়ে দেন। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক পান। এছাড়াও, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডিলিট’ উপাধি পান ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জানুয়ারি ১৬, ১৯৩৮ (বয়স ৬১) কলকাতা, প্রেসিডেন্সি বিভাগ, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) মৃত্যু গ্রহণ করেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনা বাংলা সাহিত্যকে এক নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে গেছে। তাঁর লেখার বিশেষত্ব ছিল সামাজিক বাস্তবতা, চরিত্রের গভীর বিশ্লেষণ এবং মানবিক অনুভূতির স্বচ্ছ প্রতিফলন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত উপন্যাস হল দেবদাস। যা একটি দুঃখময় প্রেমের কাহিনি নিয়ে লেখা হয়েছে। এছাড়া ও তার অনেক গুলো উপন্যাস রয়েছে। যেমনঃ বড়দিদি, বিরাজবৌ, পরিণীতা, পন্ডিতমশাই, মেজ দিদি, পল্লী-সমাজ, চন্দ্রনাথ, বৈকুন্ঠের উইল, অরক্ষণীয়া, শ্রীকান্ত-প্রথম পর্ব, নিষ্কৃতি, চরিত্রহীন, কাশীনাথ, দত্তা, স্বামী, শ্রীকান্ত-দ্বিতীয় পর্ব, ছবি, গৃহদাহ, বামুনের মেয়ে, দেনা পাওনা, নব-বিধান,পথের দাবী, শ্রীকান্ত-তৃতীয় পর্ব, শেষ প্রশ্ন, শ্রীকান্ত-চতুর্থ পর্ব, বিপ্রদাস, শুভদা, শেষের পরিচয়, বর, পরিনীতা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত নাটক গুলো হলঃ ষোড়শী, রমা, বিজয়া।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একজন ঔপন্যাসিক, কবি, প্রাবন্ধিক এবং সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। তার রচনা বাংলা সাহিত্য এবং জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। এবং বলে রাখা ভালো, তাঁকে প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও তিনি গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসেবে সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি ২৬ জুন, ১৮৩৮ সালে জন্ম গ্রহন করেন বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে। পাঁচ বছর বয়সে কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেখড়ি হয়। এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগ থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
পরের বছর ১৮৫৯ সালে প্রথমবারের মতো বি.এ. পরীক্ষা নেওয়া হয়। মোট দশজন ছাত্র প্রথমবারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উত্তীর্ণ হয়েছিলেন কেবলমাত্র বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন প্রথম বাঙালি গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে একজন। ৭ আগস্ট ১৮৫৮ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে যোগদান করে। এবং আরও জানা যায়, ব্রিটিশদের সময়কালে তিনি তার জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ৮ এপ্রিল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মোট ১৫টি উপন্যাস লিখেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ে বিখ্যাত উপন্যাস হলঃ দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়, চন্দ্রশেখর, রাধারানী, রজনী, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরানী ও সীতারাম।
কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে এক বাঙালি মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী নজরুল ইসলাম ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। বলে রাখা ভালো, কাজী নজরুল ইসলামের জীবন শুরু হয়েছিল সাধারণ একটি পরিবেশে। তিনি স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম গ্রামের স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করতেন। বাল্য বয়সেই লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটি লেটো গানের দলে যোগ দেন। তিনি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন লেটো দলেই। নিজ কর্ম এবং অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য অধ্যয়ন শুরু করেন। একইসাথে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ পুরাণসমূহ অধ্যয়ন করতে থাকেন। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন ভারতের জাতীয় কবি।
এছাড়া তিনি একজন বিদ্রোহী কবি ছিলেন। তার কবিতা, গদ্য, পদ্য, উপন্যাস সহ ইত্যাদি নানা বিষয়ে বিদ্রহ্যের বানী লুকিয়ে থাকতো। ফলে ব্রিটিশ সরকার তাকে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে রাজদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দী করেছিল। তরুণ বয়সেই তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, নাটক, গজল, গান রচনা শুরু করেন। তাকে জাতীয় কবি হিসাবে মর্যাদা দেওয়া বাংলাদেশে। কাজী নজরুল ইসলাম কে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয় ১৯৭৬ সালে। কাজী নজরুল ইসলাম বিখ্যাত বই গুলো হলঃ বিদ্রোহী, অগ্নিবীণা, রাখালী, ধর্ম, নজরুল গীতি, জীবনানন্দ, নজরুল রচনা সংকলন ইত্যাদি। নজরুল অপরিমেয় স্বাস্থ্য ও প্রাণখোলা হাসির জন্য বেশ বিখ্যাত ছিলেন। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারাত্মকভাবে স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পরেন। এবং আকস্মিকভাবে তার সকল সক্রিয়তার অবসান ঘটে।
জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন একজন বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক ৷ ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বাংলাদেশ) অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ (১৯১৫) সালে বরিশাল ব্রজমোহন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বি এম কলেজ থেকে আই.এ (১৯১৭) সালে, ও কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বি.এ (১৯১৯) সালে ও ইংরেজিতে এম.এ (১৯২১)সালে পাস করেন। আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পরীক্ষা দেননি। কিন্তু তাঁর সাহিত্যকর্মে মূলত বাংলা ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে। জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান ও আধুনিক বাঙালি কবি লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার মধ্য অন্যতম স্থানে রয়েছেন। এছাড়াও জীবনানন্দ দাশকে রূপসী বাংলার কবি অভিধায় খ্যাত করা হয়।
এবং বাংলা সাহিত্যের আরেকজন খ্যাতিমান লেখক বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দ দাশকে নির্জনতম কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন। এবং অন্যদিকে অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে শুদ্ধতম কবি অভিধায় আখ্যায়িত করেন। বলে রাখা ভালো, জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন৷ তবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন। যেটির একটিও তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যজীবন ছিল মৃদু, তবে তাঁর কবিতা বাংলা সাহিত্যের রীতিকে এক নতুন দৃষ্টিতে উপস্থাপন করেছে। জীবনানন্দ দাশ সম্পাদক ছিলেন ব্রহ্মবাদী পত্রিকার। তিনি কলকাতা সিটি কলেজে ১৯২২ সালে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা শুরু করেন। এবং ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর কলকাতায় জীবনানন্দ দাশ মারা যান। জীবনানন্দ দাশ বিখ্যাত বই গুলোর মধ্য অন্যতম, বনলতা সেন, রূপসী বাংলা, নীল কাঁকড়, আকাশের গান, ইত্যাদি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ সালে মাদারীপুর মহকুমা, ফরিদপুর, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা মাদারীপুর জেলা, ঢাকা, বাংলাদেশ) জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তার বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলা সাহিত্যিক, কবি, উপন্যাসিক এবং সম্পাদক। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন তিনি ১৯৫৩ সাল থেকে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
এছাড়া ও ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তিনি শিশুসাহিত্যে জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ কাকাবাবু-সন্তু রচয়িতা করেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ২৩ অক্টোবর ২০১২ (বয়স ৭৮) কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত মৃত্যু বরন করে। বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসের কাহিনি চলচ্চিত্রে রূপায়ণ করা হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। কাকাবাবু চরিত্রের চারটি কাহিনি সবুজ দ্বীপের রাজা, কাকাবাবু হেরে গেলেন? মিশর রহস্য এবং পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিখ্যাত কিছু বই রয়েছে। যেমনঃ এতো দিন পরে, পত্রলেখা, কালপুরুষ, সোমভদ্র, ঝর্ণার জল, পথের শেষ।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি বিশেষভাবে তাঁর উপন্যাসের জন্য পরিচিত, যা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী মুরাতিপুর গ্রামে নিজ মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার পিতার কাছে পড়ালেখার পাঠ শুরু করেন। এরপর নিজ অন্য গ্রামের কয়েকটি পাঠশালায় পড়াশোনার পর বনগ্রাম উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
সেখানে তিনি অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতলার খেলাৎচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি পথের পাঁচালী রচনা শুরু করেন ১৯২৫ সালে। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা নভেম্বর তারিখে বিহারের (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিখ্যাত বই গুলো হলঃ পথের পাঁচালী, অপুর সংসার, দ্বিতীয় প্রতিক্ষা, চোখের বালি।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে (১৩১৫ বঙ্গাব্দের ৬ জ্যৈষ্ঠ) বিহারের সাঁওতাল পরগনা,বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জন্ম গ্রহণ করেন। সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পিতা। তার ডাকনাম ছিল মানিক আর পিতার দেওয়া নাম ছিল প্রবোধকুমার। পিতা মাতার চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়া ওয়েসলিয় মিশন কলেজ থেকে আই.এস.সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন।
তিনি তার জীবনের সাহিত্য রচনাকেই মূল পেশা হিসেবে বেছে নেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত, তবে তিনি ছোটগল্পও লিখেছেন। তাঁর লেখায় সাধারণ মানুষের জীবনের যন্ত্রণা, সামাজিক অবিচার, প্রেম এবং সম্পর্কের জটিলতা উঠে এসেছে। তাঁর লেখায় বর্ণিত চরিত্রগুলো সাধারণ মানুষের জীবনের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৬ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতে মৃত্যু বরন করেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বিখ্যাত কিছু বই রয়েছে। যেমনঃ পদ্মা নদীর মাঝি, জীবনস্মৃতি, কাহিনী, রাজরূপা, বেলা অবেলা।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২ নভেম্বর ১৯৩৫সালে ময়মনসিংহ, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জন্ম গ্রহন করেন। তিনি একজন বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক, যিনি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গল্প ও উপ্যনাস লিখে থাকেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ভারত বিভাজনের সময়ে তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জলপাইগুড়ির ফনীন্দ্রদেব ইনস্টিটিউশনে অষ্টম শ্রেণী অব্দি পড়েন, তারপর তিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
তিনি একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মানবজমিন উপ্যনাসের জন্য সাহিত্য একডেমি পুরস্কার পান ১৯৮৮ সালে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর বিখ্যাত কিছু উপন্যাসের নাম হলঃ যাও পাখি, উজান, কাগজের বউ, কীট, ক্ষয়, চোখ, জাল, দিন যায়, দূরবীন, পারাপার, ফুলচোর, বিকেলের মৃত্যু, মানবজমিন, ঘুণ পোকা, আশ্চর্য ভ্রমণ, রঙীন সাঁকো, পাপ, তিন হাজার দুই, নয়নশ্যামা, হৃদয়বৃত্তান্ত, নানা রঙের আলো, গয়নার বাক্স, অসুখের পরে, গতি, প্রজাপতির মৃত্যু ও পুর্নজন্ম, দ্বিতীয় সত্তার সন্ধানে, আদম ইভ ও অন্ধকার, নিচের লোক উপরের লোক, ক্রীড়াভূমি, সম্পত্তি, তিথি, পার্থিব, চক্র, আলোয় ছায়ায়, আলোর গল্প ছায়ার গল্প, ঋণ, কাপুরুষ।
স্বামী বিবেকানন্দ
স্বামী বিবেকানন্দ ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ সালে কলকাতা, (বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত) এক ঐতিহ্যবাহী কায়স্থ পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, লেখক, দার্শনিক। ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। তিনি আধ্যাত্মিক জীবনের মূল শিক্ষা লাভ করেন রামকৃষ্ণের কাছ থেকেই। তার মূল নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত।
দর্শন ও যুক্তিবিদ্যায় পড়াশোনা করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে। বিশ্বকে ভারতের আধ্যাত্মিকতা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন স্বামী বিবেকানন্দ। যুবসমাজই দেশের উন্নয়নের মূল শক্তি বিশ্বাস করতেন স্বামী বিবেকানন্দ। জাতীয় যুব দিবস হিসেবে উদযাপিত হয় স্বামী বিবেকানন্দ জন্মদিন কে। বিখ্যাত কিছু স্বামী বিবেকানন্দ বই গুলো হলঃ রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, কর্মযোগ, মদীয় আচার্যদেব, ভারতে বিবেকানন্দ।
শেষ কথা
বাংলা সাহিত্যে ভারতীয় বাঙালি লেখকদের অবদান অন্যতম। ভারতীয় বাঙালি লেখকরা বাংলা সাহিত্যকে নানা ভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। তাদের রচনায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন। এছাড়াও এই লেখকরা বাংলা সাহিত্যে একটি স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন। যেটির মাধ্যমে তাদের বইগুলি আজও পাঠকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
বাংলা সাহিত্যের প্রকৃত গভীরতা ও বৈচিত্র্যের সাথে পরিচিত হওয়া জন্য এই লেখকদের বই গুলো আমাদের পড়া উচিত। এই লেখকদের বই গুলো মাধ্যমে সমাজ, সংস্কৃতি, এবং জীবনের গভীর অনুভূতি সম্পর্কে জানা যায়। মননশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং জীবনের নতুন উপলব্ধি অর্জিত হয় এই বইগুলো পাঠ করলে। এবং তাঁদের বইগুলি না পড়লে বাংলা সাহিত্যের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যাবে না।