সেরা বই

ভারতীয় বাংলা কিছু বেস্ট সেলিং বই ২০২৪

যে বই গুলো পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে ও বড় পরিসরে বিক্রি হয়েছে সে গুলো হল বেস্ট সেলিং বই। এই বইগুলো সহজ ভাষায় লেখা এবং পাঠকের মন ছুঁয়ে যায়। বেস্ট সেলিং বইয়ের গল্পগুলো সাধারণত পাঠকদের নতুন কিছু দেয়। যেমনঃ রোমাঞ্চ, রহস্য, প্রেম, ইতিহাস ইত্যাদি।

ভারতীয় বাংলা কিছু বেস্ট সেলিং বই

জনপ্রিয় লেখকের বই সাধারণত বেশি বিক্রি হয়। যেমনঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার। বইগুলোতে সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট থাকে, যা পাঠকদের নিজেদের জীবনের সঙ্গে সংযোগ ঘটায়। নিচে ভারতীয় বাংলা সাহিত্যের কিছু বেস্টসেলিং বই এবং তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:

সেই সময়

সেই সময় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা একটি অনন্য উপন্যাস। এটি লেখকের ঐতিহাসিক উপন্যাস ট্রিলজির মধ্য প্রথম বই। এই উপন্যাসে লেখক ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব, বাংলার নবজাগরণ, রেনেসাঁসের সূচনা, সমাজের সংকট, ও ব্যক্তিগত পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন। সেই সময় উপন্যাস সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সেই আশ্চর্য জাগরণের সময়কে তুলে এনেছেন ২০-২১ শতকের মানুষদের সামনে। এই সুবিশাল উপন্যাস পড়তে গিয়ে কখনো ক্লান্তি আসবেনা। এই উপন্যাস টি পড়তে আপনার মনে হবে ১৮৪০-১৮৮০ পর্যন্ত চল্লিশ বছরের ঘটনাপ্রবাহ আপনার চোখের সামনেই ঘটছে। তখন  নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবেননা সেই সময় থেকে। ডিরোজিওর শিষ্যদের প্রথা ভাঙার যে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন তার প্রমান চোখের সামনে দেখতে পাবেন।

ভারত উপমহাদেশে এই যুগে জাগরণ এসেছিলো রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য, সমাজ, ধর্ম, দর্শন, আইন, সংস্কার, সংস্কৃতি এই প্রত্যেকটি বিষয়েই নিয়ে। নতুনভাবে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলো ভারতবাসীরা। বাংলা তথা সম্মিলিত পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা ছিলো এর কেন্দ্র। এই উপন্যাসে সামাজিক,রাজনৈতিক আন্দোলনের একেবারে চিত্ররূপ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই বইটি পড়লে সামাজিক,রাজনৈতিক আন্দোলনের একেবারে চিত্ররূপ বর্ণনা পাবেন। বইটিতে সিপাহী বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, সূর্যাস্ত আইন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, সতিদাহ প্রথা রোধ, বিধবা বিবাহ আইন পাশ করা এবং বিধবা বিবাহ প্রচলন,বহুবিবাহ রোধ এই সব আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারবেন।

শঙ্কু সমগ্র

শঙ্কু সমগ্র বইটির লেখক সত্যজিৎ রায়। এই বইটি ২০২০ সালে আনন্দ পাবলিশার্স দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। এই গল্পটি সত্যজিৎ রায়ের লেখা বিজ্ঞানভিত্তিক ছোটগল্প ও উপন্যাসের একটি সংকলন বলা চলে। এই উপন্যাসের মূল চরিত্র প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু। মূলত তার নাম থেকেই উপন্যসের নামকরণ করা হয়। গল্পে প্রফেসর শঙ্কু একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী। এবং যিনি নিত্যনতুন আবিষ্কার করেন এবং বিশ্বজুড়ে অবিশ্বাস্য সব অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। মজার বিষয় হচ্ছে প্রফেসর শঙ্কুর সকল কাহিনী নানা রকমের বিজ্ঞান, রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার এবং কল্পবিজ্ঞানের মিশ্রণ রয়েছে। যেটি পাঠকদের গল্পের প্রতি নানা ভাবে আকর্ষণ করে থাকে। সত্যজিৎ রায়ের রচিত বিজ্ঞান কল্পকাহিনির একটি পূর্ণাঙ্গ সংকলন, যেখানে প্রফেসর শঙ্কুর সমস্ত গল্প একত্রিত রয়েছে।

প্রফেসর শঙ্কু হলেন একজন কল্পিত বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক। প্রফেসর শঙ্কু চরিত্রটি ১৯৬১ সালে সৃষ্টি করেন লেখক সত্যজিৎ রায়। প্রফেসর শঙ্কু ৬৯টি ভাষা কথা বলতে পারেন। হায়ারোগ্লিফিক পড়তে পারেন, হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর লিপি উনিই প্রথম পাঠোদ্ধার করেন। প্রোফেসর শঙ্কু তীক্ষ্ণবুদ্ধি, নির্লোভ, সৎ ও স্বদেশপ্রেমিক; ভারতের সনাতন ঐতিহ্য সম্পর্কে তিনি শ্রদ্ধাবান। মোট ৩৮টি সম্পূর্ণ গল্প রয়েছে প্রোফেসর শঙ্কু সিরিজে ও ২টি অসম্পূর্ণ গল্প লিখেছেন। প্রোফেসর শঙ্কু গল্পগুলির পটভূমি ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদ্যামান। যিনি তার আবিষ্কার ও অভিযানের মাধ্যমে পাঠকদের এক অসাধারণ বৈজ্ঞানিক জগতে নিয়ে যান। শঙ্কু সমগ্র শুধু একটি বই নয়, এটি একটি দারুণ ভ্রমণ, যেখানে বিজ্ঞান, কল্পনা এবং রোমাঞ্চের এক নতুন জগতের সন্ধান মেলে।

চাঁদের পাহাড়

চাঁদের পাহাড় একটি রোমাঞ্চকর উপন্যাস। যার লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ সালে। এই উপন্যাসটি শঙ্কর নামক ভারতবর্ষের সাধারণ এক তরুণের আফ্রিকা মহাদেশ জয় করার কাহিনী। চাঁদের পাহাড় উপন্যাসটি একটি তরুণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই উপন্যাসের নায়ক হচ্ছে শঙ্কর রায় চৌধুরী। যিনি গ্র্যাজুয়েশন করার পর পাটকলে চাকরি পায়। সে আফ্রিকার দুর্গম স্থানে যেতে চায়। তার গ্রামের এক লোকে আফ্রিকায় কাজ করে। তার মাধ্যমে সে আফ্রিকার ক্লার্ক হিসেবে কাজ পায় এবং উগান্ডা রেলওয়েতে চাকরি পায়। সেখানে মানুষখেকো সিংহ ছিলো অনেক। তাদের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হত। এছাড়া ও সেখানে অনেক সাপের আক্রমণ হয়েছিল।

এখানেই সে পর্তুগিজ অভিযাত্রীক ও স্বর্ণসন্ধানী ডিয়েগো আলভারেজ-এর দেখা পায়। আলভারেজ তাকে তার সময়ের ঘটনা বলে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরক খনির সন্ধান পায় তার সঙ্গী জিম কার্টার। সব কথা শুনে শঙ্কর ক্লার্কের চাকরি ছেড়ে দিয়ে আলভারেজের সাথে খনি অনুসন্ধানে বের হয়। বুনিপ মেরে ফেলে আলভারেজকে। তখন একা হয়ে পড়ে শঙ্কর। এবং সে হীরকের খনি খুঁজে পায়। সে হায় সে পথ হারিয়ে ফেলে। এবং পাথরে সাহায্য গুহা থেকে বের হয়। গুহা থেকে আসার সময় কিছু পাথর নিয়ে আছে। আসলে সে গুলো হীরা ছিল।সে ইতালীয় অভিযাত্রীক আত্তিলীয় গাত্তির নোট থেকে জানতে পারে, আসলে সে যেই গুহায় পৌছেছিল, সেই গুহায়ই বিখ্যাত হীরক খনি, যার জন্য জিম ও আলভারেজ তাদের জীবন হারিয়েছে।

ব্যোমকেশ সমগ্র

ব্যোমকেশ সমগ্রের লেখক হচ্ছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সী। ব্যোমকেশ বক্সীর রয়েছে অসামান্য পর্যবেক্ষণ-ক্ষমতা ও অনবদ্য বিশ্লেষণী দক্ষতা। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ব্যোমকেশ সমগ্র বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় গোয়েন্দা গল্পের মধ্য একটি। এই বইটিতে ব্যোমকেশ বক্সী ও তার সঙ্গী অজিতের রহস্য ভেদ করার রোমাঞ্চকর কাহিনিগুলো ফুটে তোলা হয়েছে। গল্পে ব্যোমকেশ নিজেকে একজন গোয়েন্দা নয় বরং তিনি একজন সত্যান্বেষী মানুষ হিসেবে তুলে ধরেন। এই কাহিনীতে ব্যোমকেশের সততা, বুদ্ধিমত্তা এবং মানবিক দিক গল্পটিকে পাঠকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

ব্যোমকেশ সমগ্র ৩৩ টি গল্প উপন্যাস রয়েছে। এই গল্পগুলিতে ব্যোমকেশ নিজেকে সত্য-সন্ধানী হিসাবে উল্লেখ করেন। ব্যোমকেশ রেনসিক বিজ্ঞানের দক্ষতার জন্য পরিচিত, যা তিনি কলকাতায় ঘটে যাওয়া জটিল মামলাগুলি, সাধারণত খুনের সমাধান করেন। ব্যোমকেশের সাথে সৈয়দ রমেশ চন্দ্র মিত্র নামক একজন বন্ধু ও সহকারী থাকে। যিনি তার কেসগুলো নথিভুক্ত করেন এবং গল্পগুলো শোনান। ব্যোমকেশের কেসগুলো খুবই উত্তেজনাপূর্ণ এবং রহস্যময়। ব্যোমকেশ বক্সী সিরিজটি শুধু সাহিত্যেই জনপ্রিয় নয়। এর উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন শো এবং নাটকও নির্মিত হয়েছে। যার মধ্যে ব্যোমকেশ বক্সী সিনেমা (২০১৫) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

গল্প ১০১

গল্প ১০১ বইটি লিখেছেন সত্যজিৎ রায়। এবং আনন্দ পাবলিশার্স মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। গল্প ১০১-এর হল একটি ছোটগল্পের সংকলন। যেখানে বিভিন্ন ধরনের গল্প রয়েছে যেমন রহস্য, হাস্যরস, সামাজিকতা, মনস্তত্ত্ব এবং মানবীয় সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে। প্রতিটি গল্পে তার ব্যতিক্রমী বর্ণনা এবং গভীরতা দেখা যায়। সত্যজিৎ রায়ের গল্পগুলির মধ্যে এমন কিছু চরিত্র এবং পরিস্থিতি দেখা যায়। যেগুলি মানব মনের গভীরতা এবং দৈনন্দিন জীবনের অস্পষ্টতাগুলিকে তুলে ধরে। অনেক গল্পের মধ্যে মানুষের মনের অন্ধকার দিকগুলো বা মানসিক দ্বন্দ্ব তুলে ধরা হয়েছে।

এই গল্পগুলো কখনও কখনও চরিত্রের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বা সংঘর্ষের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, যা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে। প্রতিটি গল্পের মধ্যেই সত্যজিৎ রায় কিছু গভীর জীবনবোধ, সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, রহস্যের মিশ্রণ দেন। যা তার লেখার এক অবিশ্বাস্য শক্তি। এসব গল্পে তার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে মানুষের মন, সম্পর্ক এবং সমাজের জটিলতাগুলিকে খুব সহজ এবং আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার। গল্প ১০১ শুধু ছোটগল্পের একটি সংকলন নয়। এটি একটি সাহিত্যিক যাত্রা।

গল্পগুচ্ছ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পের সংকলন হচ্ছে গল্পগুচ্ছ। এটি ১৯১২ সালে প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই পরেনি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম বললেই চলে। কারণ বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সকল বই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ঠিক তারই মধ্য অন্যতম আরেকটি বই গল্পগুচ্ছ। গল্পগুচ্ছ বই কোনো উপন্যাস নয়। মূলত এটি একটি ছোটগল্পগুলোর একটি সংকলন। গল্পগুচ্ছ বাংলা সাহিত্যের একটি অনন্য সম্পদ হিসেবে পরিচিত। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সৃষ্টিশীলতা, গভীর মানবিক অনুভূতি এবং সমাজের বহুমুখী রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। বলে রাখা ভালো, তিনি বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পের ধারার সূচনা করেছিলেন।

এবং তার ছোটগল্প গুলো সাহিত্যিক ও মানসিক গভীরতায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। গল্পগুচ্ছ মোট ৯৫ টি ছোটগল্প রয়েছে। প্রতিটি গল্পে মানবজীবনের নানা রূপ, অনুভূতি, এবং সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেশিরভাগ গল্প লিখেছেন ১২৯৮ থেকে ১৩১০ বঙ্গাব্দের মধ্যে। অখণ্ড সংস্করণে মোট ৯৫টি ছোট গল্প রয়েছে। ইন্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস ৫ খণ্ডে এগুলো প্রকাশ করেন ১৯০৮‌-১৯০৯ সালে। গল্পগুচ্ছ উল্লেখযোগ্য গল্প হচ্ছেঃ কাবুলিওয়ালা, ফেল, নষ্টনীড়, মাল্যদান, পোস্টমাস্টার, ব্যবধান, হৈমন্তী, অতিথি, খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অনেক সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। হিতবাদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় দেনা-পাওনা গল্প। তাঁর প্রথম ছোটগল্প ভিখারিণী ভারতী পত্রিকায় ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। গল্পগুচ্ছ বাংলা ছোটগল্পের বিকাশে বিশাল ভূমিকা রেখেছে।

প্রথম আলো

বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগের বিখ্যাত বাঙালি কবি ও কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা একটি জনপ্রিয় ঐতিহাসিক উপন্যাস হল প্রথম আলো। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। এটি বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই উপন্যাসটি দুই খণ্ডে রচিত করা হয়েছে। উপন্যাসটি উনিশ শতকের বাঙালি সমাজ এবং তার নবজাগরণ কালকে তুলে ধরা হয়েছে। এই উপন্যাসে সময়কাল হিসেবে ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়কে নেওয়া হয়েছে। যেখানে বাঙালির সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং চিন্তাধারার পরিবর্তন চমৎকারভাবে চিত্রিত হয়েছে।

ত্রিপুরার রাজপরিবারের কাহিনি দিয়ে উপন্যাসটির শুরু হয়। ক্রমশ জমাট বাঁধে তৎকালীন বিশিষ্ট সব মানুষ এবং কলকাতায় ঠাকুর পরিবারে নিয়ে। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলি সবই প্রায় বাস্তব ঐতিহাসিক চরিত্র যেমন:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাদম্বরী দেবী,নরেন্দ্রনাথ দত্ত(স্বামী বিবেকানন্দ), ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, নটী বিনোদিনী, গিরিশচন্দ্র ঘোষ প্রভৃতি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সর্প্রবথম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উপন্যাসের চরিত্র হিসাবে ব্যবহার করেছেন। প্রথম আলো উপন্যাসটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি অসাধারণ দক্ষতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে পরিচিত। যেটি পাঠকগণদের নানা ভাবে আকৃষ্ট করে এসেছে।

পদ্মানদীর মাঝি

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৩৪ সাল থেকে পূর্বাশা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। এবং ১৯৩৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।। বাঙালির গ্রামীণ জীবন, প্রকৃতি, এবং দরিদ্র মানুষের সংগ্রামকে গভীরভাবে তুলে ধরে। এই উপন্যাসে নদীমাতৃক জীবনের এক অনন্য চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলেদের দৈনন্দিন জীবন, তাদের সম্পর্ক, সংগ্রাম, স্বপ্ন এবং বেঁচে থাকার ইচ্ছা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

বাংলাদেশের পদ্মা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী একদল জেলের জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই উপন্যাসটি। পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে দরিদ্র জেলেদের জীবন ও বেঁচে থাকার জন্য তাদের কঠিন সংগ্রামের গল্প নিয়ে লেখা হয়েছে। কুবের নামের মাঝি এবং তার প্রেমিকা কপিলার সম্পর্কের মধ্য দিয়ে মানুষের আবেগ, ভালোবাসা, এবং ত্যাগের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এই উপন্যাসের আরেকটি চরিত্র হল হোসেন মিয়া। তিনি একজন প্রতাপশালী জমিদার। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি চরিত্র এই উপন্যাসে রয়েছে। যেমন- রাসু, ধনঞ্জয়, পীতম মাঝি, মালা, গণেষ, আমিনুদ্দি, রসুল, ফাতেমা প্রভৃতি চরিত্র।

দূরবীন

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দূরবীন একটি অসাধারণ উপন্যাস। দূরবীন উপন্যাসে তিনটি প্রজন্মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমজন পুর্ববঙ্গের জমিদার হেমকান্ত চৌধুরী, দ্বিতীয়জন ব্রিটিশ ভারতের বিপ্লবী। এবং স্বাধীন ভারতের ডাকসাঁইটে রাজনীতিবিদ ও হেমকান্তর নয়নের মণি কৃষ্ণকান্ত চৌধুরী ও কৃষ্ণকান্তের বখে যাওয়া ছেলে ধ্রুব চৌধুরী; লোফার, হৃদয়হীন থেকে শুরু করে অনেক বিশেষনই তার সাথে যুক্ত করা যায়। এই উপন্যাসে শক্তিশালী নারী চরিত্রটি হচ্ছে রঙ্গময়ী। ধ্রুব প্রতাপশালী একজন মন্ত্রীর রুপবান একমাত্র পুত্র। যার মনে পিতার প্রতি প্রবল ক্ষোভ ও ক্রোধ।

যার মূল কারণ মায়ের আত্মহত্যা। সে এজন্য তার পিতাকেই দায়ী মনে করে। তার বাবার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন, প্রবল ব্যাক্তিত্বের সৌন্দর্য ঢাকা পরে যায় তার নিঃসঙ্গ বেড়ে ওঠা। বাবাকে কাছে না পাওয়া আর মাতৃবিয়োগের কাছে। পিতার প্রগাঢ় ব্যাক্তিত্ব আর ক্ষমতার বিপরীতে নিজেকে দূর্বল হিসেবে প্রতিয়মান পুত্র প্রতিশোধ স্পৃহার প্রকাশ ঘটায় নিজেকে নষ্ট করার মাধ্যমে। বাবার ওর্ডার সরাসরি প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা না থাকলেও পরোক্ষভাবে তার পিতার পছন্দ করা পুত্রবধুকে অবজ্ঞা করা, নিজেকে মাতাল করা, যা-তা ভাবে জীবন যাপন করার মাধ্যমে পিতাকে কষ্ট দেয়ার প্রচেষ্টা ছিলো সারাটা সময়।

কিন্তু ধ্রুব যে প্রকৃতই তেমন নষ্ট যুবক নয় তা খুব কাছ থেকে রেমি ঠিক অনুভব করতো। কিন্তু কেন সে নিজেকে এমন খারাপ ভাবে প্রকাশ করার চেষ্টায় অবিচল সেটাই ছিলো রেমির বিস্ময়। বুঝতে পারা, না পারার দোলাচলে রেমি আরও বেশি ধ্রুবর প্রেমে পড়ে যেত। পিতার প্রতি ধ্রুবর ঘৃনাটাও রেমিকে অবাক করতো কারন শশুরের চমৎকার শক্তিশালী ব্যাক্তিত্ব আর ভালোমানুষি গুণটাও সে ফিল করতো। অবশেষে পিতার মৃত্যু ও চিঠিই ধ্রুবকে তার ভুল ভাঙায়। লেখক ধ্রুব চরিত্রটা চিত্রায়ন করেছেনই এমন করে যাতে সবাই প্রচন্ডভাবে তাকে ঘৃনা করে আবার আকর্ষণও ফিল করে, অনেকটা রেমির অনুভবের মতো। নিজেকে নেতিবাচকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে ধ্রুব উঠে পরে লেগেছিল। তার স্ক্যান্ডাল যেন পিতার ওপর কালিমা লেপন করে।

টেনিদা সমগ্র

টেনিদা সমগ্র বইটির হচ্ছে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। আর টেনিদা হলো নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র। ছোটদের জন্যে তাঁর সমস্ত রচনা কিশোর সাহিত্য নামক বইতেও পাওয়া যায় কিন্তু টেনিদা এদের মাঝে উজ্জ্বলতম। টেনিদা সমগ্র বইটি মূলত কিশোরসাহিত্য হলেও যে কোন বয়সের মানুষ  বইটি পড়ে আনন্দ পাবে। এই টেনিদা ছিলেন আসলে লেখকের বাড়িওয়ালা যার সাথে একটি খুব সহজ এবং ভাল সম্পর্ক ছিল লেখকের। টেনিদা সমগ্র বইটিতে ৫টি উপন্যাস, ৩২ টি গল্প এবং ১টি নাটিকা যা এ সংকলনে স্থান পেয়েছে।

এই বইয়ের সবগুলোই রোমাঞ্চ গল্প এবং হাস্যরসে ভরপুর। টেনিদা মূলত তিন কিশোরের লীডার। তাদের নাম হলঃ ক্যাবলা, হাবুল, প্যালা। টেনিদাকে নিয়ে ‘চার মূর্তি’ নামে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম উপন্যাস লেখেন যা ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে অভ্যুদয় প্রকাশ মন্দির থেকে গ্রন্থাগারে প্রকাশিত হয়।টেনিদাকে নিয়ে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় পরের উপকার করিও না নামে একটিমাত্র নাটক রচনা করেছেন। টেনিদা কাহিনী একাধিকবার চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। টেনিদাকে নিয়ে বাংলায় একাধিক কমিক্স তৈরি হয়েছে। অরিজিৎ দত্ত চৌধুরী এই কমিক্সগুলোতে চিত্রনাট্য ও ছবি উভয়েরই শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন।

শেষ কথা

বাংলা সাহিত্যের বেস্টসেলার বইয়ের সংখ্যা অসংখ্য। এগুলো বিভিন্ন সময় বাংলার সংস্কৃতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে, এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাঠকদের মুগ্ধ করে চলেছে। বেস্ট সেলিং বইয়ে মূলত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। ফলে এটি পাঠকদের নানা ভাবে আকৃষ্ট করে থাকে। এবং সেইসাথে গল্পের প্রতিটি অংশ পাঠকদের মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

এইসকল বইগুলো একদিকে যেমন সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বাংলা সাহিত্য প্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। আমরা এই লিখাটিতে ভারতীয় বাংলা কিছু বেস্ট সেলিং বই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আসা করছি এটি আপনাদের উপকারে আসবে। আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এবং নিয়মিত এইসকল তথ্য পেতে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ধন্যবাদ।

Taufik

হ্যালো বন্ধুরা, আমি তৌফিক বিডিইবুক সাইটের একজন কন্টেন্ট লেখক। আমি মূলত বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বাংলা ভাষার বই নিয়ে লেখালিখি করে থাকি। বিডিইবুক সাইটে আমার লেখা পড়লে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলা ভাষার বই সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমি সব সময় সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করে থাকি যা আপনারা আমার লেখা পড়লেই বুজঝতে পারবেন।

Recent Posts

১২০+ বিখ্যাত হুমায়ূন আহমেদ এর উক্তি ও বাণী

হুমায়ন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় নাম। হুমায়ন আহমেদের লেখা সকল বই, বইপ্রেমিদের নানা ভাবে…

7 দিন ago

সেরা ১০০+ কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি ও বাণীসমূহ

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলের একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি। তার লেখা সকল কবিতা পাঠকদের নানা ভাবে…

7 দিন ago

নাটক ও উপন্যাসের মধ্যে পার্থক্য কিছু মিল ও অমিল

নাটক ও উপন্যাস পছন্দ করে না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই দেখা যায়। মানুষের বিনোদন…

7 দিন ago

আঞ্চলিক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য ও কিছু আঞ্চলিক উপন্যাসের উদাহরণ

বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস জগতের গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হচ্ছে আঞ্চলিক উপন্যাস। আঞ্চলিক উপন্যাসের মধ্যে কোন একটি…

1 সপ্তাহ ago

রাজনৈতিক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য ও সেরা কিছু রাজনৈতিক উপন্যাস

রাজনৈতিক উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের এমন একটি শাখা যেখানে কোনো রাজনৈতিক ঘটনা, রাজনৈতিক পরিবেশ, রাজনৈতিক ব্যক্তি,…

2 সপ্তাহ ago

জনপ্রিয় ইসলামিক উপন্যাস ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা

ইসলামিক উপন্যাস মূলত মুসলিম ধর্মের জনসাধারণের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এর কারণ…

2 সপ্তাহ ago