বাংলাদেশের নিষিদ্ধ কিছু বই এবং নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ

বাংলাদেশের নিষিদ্ধ কিছু বই এবং নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ

বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লেখকের বই, বিভিন্ন কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিছু লেখক রয়েছে যারা সব সময় ইতিহাস বিকৃতি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, রাজনৈতিক বিতর্ক বা অশ্লীলতা নিয়ে লেখেন। এমনসব কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ অনেক বইকে নিষিদ্ধ বা মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিতরণ ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। বাংলাদেশের সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি থেকে সেই বই গুলো কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের নিষিদ্ধ কিছু বই

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ বইয়ের সংখ্যা অনেক কম। বাংলাদেশে যে বই গুলো নিষিদ্ধ  করা হয়েছে তার বেশি ভাগ  বই ধর্মীয় কারণে নিষিদ্ধ হয়েছে। কিছু কিছু আছে যা নিষিদ্ধ হওয়ার পর পর মামলা করে আদালতের রায়ে পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে। একসময় বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বেশ কয়েকটি বই নিষিদ্ধ হয়েছিল ভারত দেশে। বাংলাদেশে কয়েক টি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কি কারণে করা হয়েছে তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল।

নারী

নারী

হুমায়ুন আজাদের লেখা নারী গ্রন্থটি নারীবাদ ও নারী অধিকার নিয়ে রচিত করা হয়েছে। নারী বইটি বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী কাজ হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। বইটিতে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীর ইতিহাস, সমাজে তার অবস্থান, এবং পুরুষতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রভাব নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ করেছেন। এছাড়াও বইটিতে প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমান আধুনিক যুগ পর্যন্ত নারীদের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই বইয়ে লেখক কিভাবে নারীদের সমাজ থেকে তাদের অধিকার ও ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। বলে রাখা ভালো, ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয় হুমায়ুন আজাদের লেখা বই নারী।

৪০৮ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর পরই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বইটি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করার জন্য আবেদন করেন। কারন হল ইসলাম ধর্ম এবং ধর্মবিদ্বেষী অনেক কিছু লেখা হয়েছে সেই বইয়ে। তৎকালীন সরকার বইটি নিষিদ্ধ করেন ১৯৯৫ সালে ১৯ শে নভেম্বর। বইটিতে অশ্লীলতার অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বইটির প্রকাশক আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছিলেন। পরবর্তীতে অনেক ঝামেলার পরে ২০০০ সালে বইটির উপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ অবৈধ বলে রায় দেয় আদালত।

লজ্জা

লজ্জা

বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও সমালোচনা হয় তসলিমা নাসরিনের বই গুলোকে নিয়ে। লজ্জা বইটি ১৯৯৩ সালে প্রকাশ হয়। বলে রাখা ভালো, লজ্জা উপন্যাসটি মূলত দত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। দত্ত পরিবারটি ঢাকায় বসবাসরত একটি হিন্দু পরিবার। যারা দেশ বিভক্তের পরও বাংলাদেশে থেকে গিয়েছে। মূলত তাদেরকে কেন্দ্র করেই এই বইটি রচিত করা হয়েছে। লেখক এই বইটির মূল বার্তা হিসেবে তুলে ধরেছেন, কিভাবে ধর্মীয় উগ্রতা মানুষের মানবিকতা ও ন্যায়বোধকে ধ্বংস করে। এবং তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে জোরালো যুক্তিও এই বইটিতে তুলে ধরেছেন। এই বইটি প্রকাশিত হওয়ার ৬ মাসের ভিতরেই নিষিদ্ধ করা হয়। লজ্জা বইটি ভারত ও বাংলাদেশে কিছু অংশে এখনো নিষিদ্ধ আছে।

কেননা এই বইটিতে ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর হিন্দু মুসলিমের যে দাঙ্গা বেধেছে সেটাকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে। সেসময় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় কিভাবে নির্যাতিত হয়েছিল তার বর্ণনা দেওয়া ছিল এই বইয়ে। তসলিমা নাসরিন বর্ণনা দিতে গিয়ে ইসলাম ধর্মকে খুবই খারাপ ভাবে কটাক্ষ করে, যার জন্য বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। এই বইটি ৫০ হাজারের ও বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। এই বইয়ের রেশ ধরে তসলিমা নাসরিনের প্রতি এত পরিমান বিদ্বেষ জমা হয়েছে, যার জন্য তাকে নিজ জন্মভূমি ছাড়তে হয়েছে। তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সে সময়ের এক চিকিৎসক। এই বইয়ের লেখকের ফাঁসি দাবিতে রাজপথে মিটিং-মিছিল করে ইসলামপন্থী বেশ কয়েকটি দল। বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া ও বেশ কয়েক টি দেশে এই বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। দেশ গুলো হলঃ নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং ভুটান।

'ক'

`ক‍‍`

২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় তসলিমা নাসরিনের লেখা আরেকটি বই ক। এই বইটিকে ও নিষিদ্ধ করা হয়। ক বইটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। বলে রাখা ভালো, ক বইটি তসলিমার আত্মজীবনী সিরিজের একটি খণ্ড। এই বইটিতে তিনি তার ব্যক্তিগত জীবন, প্রেম, সম্পর্ক, এবং বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারীর সংগ্রামের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। বইটি প্রকাশের সাথে সাথে অনেক বিতর্কের জন্ম দেয়। এর কারণ বইয়ের ভাষা এবং বিষয়বস্তু অনেকের কাছে অশ্লীল বা অতিরিক্ত খোলামেলা মনে হয়েছিল। ফলে একই সাথে এটি নারীর অধিকার এবং স্বাধীনতার পক্ষে একটি সাহসী কণ্ঠ হিসেবে প্রশংসিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশে এই বই নিষিদ্ধ করার একটাই কারণ এটি বাংলাদেশের সমাজ ও ধর্মের প্রথাগত ধারণাগুলোর বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে। এই বইয়ের লেখক তার নিজের ওপর ঘটা যৌন নিপীড়নের কথা তুলে ধরেছেন। বইটিতে বাংলাদেশের কয়েকজন পরিচিত লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকের নাম উল্লেখ করেছিলেন তিনি। তসলিমা নাসরিনের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্তরা সবাই। এক জন তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার একটি মানহানির মামলা করেছিলেন। এবং বই বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। আর যত দিন না মামলাটি নিষ্পত্তি হচ্ছে। বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে বইগুলো নিয়ে যায় পুলিশেরা। দ্বিখণ্ডিত’ নামে বইটি ভারতে প্রকাশিত হয়। সেখানেও আদালতের আদেশে বইটি নিষিদ্ধ করে ছিল।

নবী মুহাম্মদের ২৩ বছর

নবী মুহাম্মদের ২৩ বছর

ইরানের প্রগতিশীল লেখক আলী দোস্তি নবী মুহাম্মদের ২৩ বছর বইটি লিখেছিল। লেখক তার নিজের মনের মত করে ব্যাখ্যা করেছে নবী মুহাম্মদের নবুওয়াতের ২৩ বছর সময়টাকে। তিনি এই বইটি তে তুলে ধরেছে যে অলৌকিকতা যে শুধুমাত্র বিভ্রম নয় এ বিষয়টি। আলী দোস্তি এই বইটিতে ঐতিহাসিক তথ্য, কোরানের বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক ইসলামি সমাজের প্রভাব নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও এই বইয়ে লেখক ইসলামের উৎপত্তি এবং নবী মুহাম্মদের নবুয়ত প্রাপ্তির সময়ের আরব সমাজের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তবে এই বইটি নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে লেখকের কিছু মন্তব্যের জন্য দায়ি। তিনি বইটিতে নবী মুহাম্মদের জীবনের ঘটনাগুলোকে একধরনের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন।

যেটি মুসলিম পণ্ডিতদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একেবারে ভিন্ন। ধর্মে সন্দেহ পোষণকারী বেশিরভাগ মানুষই ধর্মকে কটাক্ষ করে মন্তব্য ও বই লিখে থাকে। নবী মোহাম্মদের সময়টাকে বাস্তব অর্থে উপলব্ধি করে বোঝার চেষ্টা করেছে এবং পাঠকদেরও সেভাবে বোঝাতে চেয়েছে আলী দোস্তি। নবী মুহাম্মদ যখন তার দক্ষতা, কৌশল, বুদ্ধিমত্তা আর পরিশ্রমের সমন্বয় ঘটিয়ে অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম হন। তখন সেই কাজকে অলৌকিক হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। নবী মুহাম্মদ এই অর্থে সে সময় অসাধ্য সাধন করেছেন। এই বিষয়গুলিকে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে যেখানে অলৌকিকতা হিসেবে দেখা হয়। সেখানে লেখক বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণ করেছে। স্বভাবতই ধর্মের কিছু বিষয় তখন বিশ্বাসে আঘাত হানে। যার জন্য বইটি আরব দেশে ও অন্যান্য মুসলিম দেশে নিষিদ্ধ করা হয়।

বিষফোঁড়া

বিষফোঁড়া

বিষফোঁড়া বইটি  লিখেছেন সাইফুল বাতেন টিটো। বইটি ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়। বইটিতে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার আবাসিক বাসস্থানে বাচ্চাদের উপর কি ধরনের যৌন নির্যাতন চলে তার বর্ণনা দিয়েছে। বিষফোঁড়া সাইফুল বাতেন টিটোর একটি আলোচিত রাজনৈতিক ও সামাজিক উপন্যাসের বই। এই বইটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সমাজের অস্থিরতা, এবং নৈতিক অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে রচিত করা হয়েছে। বইটিতে লেখক বাস্তবতা, স্যাটায়ার এবং তীক্ষ্ণ সমালোচনার মাধ্যমে সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন।

তার এই বইয়ের প্রধান বিষয়বস্তুের মধ্য রয়েছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সমাজের অবক্ষয়, বাস্তবধর্মী চিত্রায়ণ ও বিদ্রোহের আহ্বান। বিষফোঁড়া প্রকাশের পর এটি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি করে। এবং বইটি ক্ষমতাবান এবং অভিজাত শ্রেণির দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় বিতর্কিত হয়। এই বইটি লিখতে গিয়ে তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষকদের নৈতিকতা নিয়ে অনেক বাজে মন্তব্য করেন। এই কারনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এই বই নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের কাছে আন্দোলন করেন। তার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বইটি কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই বইটি লিখে লেখক তার সাহসিকতার প্রমান দেয়।

বিশ্বাসের ভাইরাস

বিশ্বাসের ভাইরাস

বিশ্বাসের ভাইরাস বইটি লিখেছেন লেখক ব্লগার অভিজিৎ রায়। এখানে বইটিতে লেখক ধর্মান্ধতা মানুষকে অন্ধবিশ্বাসের পথে নিয়ে যেতে পারে সে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে। ব্লগার অভিজিৎ রায় এই বইটি তে ধর্মের অনেক বিশ্বাসগত দিকগুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সেইসাথে অভিজিৎ রায় বইটিতে সমাজে ধর্ম ও বিশ্বাস কিভাবে ভাইরাসের মতো কাজ করে, তা বিশ্লেষণ করেছেন। এবং তিনি যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে কিভাবে ধর্ম মানুষের মস্তিষ্ক ও সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তা অনেক সময় ক্ষতিকর হয়।

এই বইয়ে লেখক কুসংস্কার, অলৌকিক ধারণা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস কিভাবে মানুষের জীবনকে পিছিয়ে দেয়, তা তুলে ধরেছেন। এবং তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, এসব বিশ্বাসের কারণে সমাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে ধর্ম অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। এর পর থেকে বইটিতে নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদ শুরু হয়। এবং বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। বইটিতে লেখক তার কঠিন পরিশ্রম দিয়েছে। বইটি পড়লে বুঝা যায় যে লেখক দীর্ঘ সময় ধরে সম্পাদনা করে এই বইটি। এই বইয়ের কারনে লেখক কে জীবন দিতে হয়েছে।

স্যাটানিক ভার্সেস

স্যাটানিক ভার্সেস

স্যাটানিক ভার্সেস বইটি লিখেছেন ভারতের এক লেখক তার নাম সালমান রুশদি। তিনি এই বইটি লিখেছেন ১৯৮৮ সালে। বইটি তিনি ইসালাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনী কাহিনী ও উনার উপর কিভাবে ওহী নাযিল হয়েছে তা নিয়ে বিতর্কিত ভাবে লেখা লেখি করেন। তিনি আরও লেখেন যে কোরআনের কিছু ওহী শয়তানের পক্ষ নাযিল হয়েছে। আর সেই ওহী গুলো কোরআনের থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেই ওহী গুলো তে উজ্জা নামক দেবতাদের ইবাদত করার কথা বলা হয়েছিল। ইসালাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বুঝতে পারে এই ওহী গুলি শয়তানের পক্ষ থেকে এসেছে।  স্যাটানিক ভার্সেস একটি বিতর্কিত এবং বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্য একটি। এটি প্রকাশিত হওয়ার পরেই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এবং বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এই বইয়ে লেখক রুশদি দুটি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকের কাহিনী তুলে ধরেছেন। যারা একটি বিমান দুর্ঘটনার পর অলৌকিকভাবে জীবিত থেকে দুঃস্বপ্নে লিপ্ত হয়।

মূলত এটিই এই কাহিনীর মূল বিষয়। বইটিতে আরও দেখা যায়, দুর্ঘটনার শিকার দুই চরিত্র জিব্রিল ফারিশ্তা ও সালাদিন চামচা অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় এবং সমুদ্রে পতিত হয়। দুর্ঘটনার পরবর্তী সময়ে তারা দুইজন মধ্য বেশ পরিবর্তন দেখা যায়। জিব্রিল ফারিশ্তা একজন আধ্যাত্মিক ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হয়। এবং অন্যদিকে সালাদিন চামচা রূপান্তরিত হয় শয়তানের আকারে। এই বইয়ের কাহিনীতে বিভিন্ন বাস্তব এবং কল্পকাহিনীর মধ্যে চলাফেরা করে এবং ইসলাম ধর্ম, নৈতিকতা, বিশ্বাস এবং নিজস্ব পরিচয়ের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটি প্রকাশের পর বিভিন্ন মুসলিম দেশ ও সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এটি তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ সৃষ্টি করে এবং কিছু দেশ এই বইটি নিষিদ্ধ করে। পাশাপাশি সালমান রুশদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করা হয়। যেটি তার জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। মূলত ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করায়  এই বইটিকে নিষিদ্ধ করা হয়।

আমার ফাঁসি চাই

আমার ফাঁসি চাই

আমার ফাঁসি চাই বইটি লিখেছেন  মতিউর রহমান রেন্টু। বইটি প্রকাশিত হয়েছে ১৯৯৯ সালে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিয়ে আলাপ – আলোচনা করা হয়েছে। বইটি তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন চরিত্রের বর্ণনা করা হয়েছে। এই বইটি তে রাজনৈতিক বিতর্ক ও ইতিহাস বিকৃতি ছড়ানোর অভিযোগে রয়েছে। এই কারণে বইটি নিষিদ্ধ করা হয়।

আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায় জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড করেছে এই বইটি তে লেখা হয়েছে। এবং মোহাম্মদ হানিফকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বানাতে দলটি ১.৩৭ কোটি টাকা খরচ করার কথা উল্লেখ রয়েছে। বইটি আর ও লেখা হয়েছে যে শেখ হাসিনা লাশের খবর শুনলে খুশি হয়ে উঠতেন।

রাতভর বৃষ্টি

রাতভর বৃষ্টি

রাতভর বৃষ্টি উপন্যাসের লেখক বুদ্ধদেব বসুর। এই বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। এই বইটি বিয়ে ও সংসার নামক যৌথ প্রতিষ্ঠানের জটিল পাকচক্রে আবদ্ধ তিন নর-নারীর মনোদৈহিক টানাপোড়েনের গল্প লেখা হয়েছে। মধ্যবিত্ত সমাজজীবনে স্বামী-স্ত্রী বা বিবাহিত নারী-পুরুষের দাম্পত্য সম্পর্কে আলাপ – আলচেনা করা হয়েছে।

এই উপন্যাসের তিনটি চরিত্র নয়, বরং প্রচলিত যৌন নৈতিকতার প্রথাগত মূল্যবোধের সঙ্গে ক্রমাগত লড়ে চলা মানুষে কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ও যৌন-নৈতিকতা বা শারীরিক সম্পর্কের প্রথাগত মূল্যবোধের ওপর তীব্র আঘাতও টের পাওয়া যায়। এই কারণে রাতভর বৃষ্টি উপন্যাস কে  নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আমার মেয়েবেলা

আমার মেয়েবেলা

আমার মেয়েবেলা বইটি লেখক তসলিমা নাসরিন। বইটি ১৯৯৯ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ হচ্ছে এই বইটি তে একটি মেয়ে কি ভাবে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মাধ্যমেও বেড়ে ওঠে তাই নিয়ে আলচেনা করা হয়েছে। মেয়েরা পুরুষতান্ত্রিক যৌননিপিড়িত হয়েছেন আত্মীয়-স্বজন কর্তৃক দ্বারা সে বর্ণনাও উঠে এসেছে বইটিতে। এই সকল অশ্লীলতার অভিযোগের কারণে বই টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

উতল হাওয়া

উতল হাওয়া

উতল হাওয়া বইটি হল আমার মেয়েবেলা’র দ্বিতীয় খণ্ড। উতল হাওয়া বইটি ২০২২সালে প্রকাশিত হয়। লেখকের তার আত্মজীবনী নিয়ে লিখেছেন। এই বইটি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে ইসলাম বিরোধী তথ্য থাকার কারণে নিষিদ্ধ করা হয়। এই বইটি ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাত করে।

সেই সব অন্ধকার

সেই সব অন্ধকার

সেই সব অন্ধকার বইটির লেখক তসলিমা নাসরিন। যা প্রকাশিত হয়েছে ২০০৪ সালে। বই টি লেখক তার আত্মজীবনী থেকে নিয়ে লিখেছেন। জীবনের অন্ধকারময় সময়গুলো, সমাজের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম এবং ব্যক্তি জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন এই বইয়ে।

এছাড়া ও ইসলাম ধর্ম হযরত মুহাম্মদ (স:) সম্পর্কে কূটক্তি থাকার অভিযোগে রয়েছে এই বইয়ে। এই বইটির মাধ্যমে সমাজকে আঘাত হানতে পারে। এই জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ সালে বইটি নিষিদ্ধ করেন।

নির্বাসন(২০১২)- তাসলিমা নাসরিন

নির্বাসন

নির্বাসন বইটি লেখক তসলিমা নাসরিন। এই বইটি লেখকের আত্মজীবনী সিরিজের সপ্তম খণ্ড। নির্বাসন বইটির মাধ্যমে লেখক তার সাহসী আত্মপ্রকাশ এবং তার অভিজ্ঞতার দলিল হিসেবে মনে করে। এই বইটি প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে।

এই বইটিতে লেখক তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে সমাজের ধর্মীয় রক্ষণশীলতা এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাত নিয়ে আলোচনা করে। নির্বাসন বইটি ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে ও সামাজিক শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে। এই জন্য বইটি  নিষিদ্ধ করা হয়।

রঙ্গিলা রসুল(১৯২৩)- চামুপতি লাল

রঙ্গিলা রসুল

রঙ্গিলা রসুল বইটি লিখেছেন পণ্ডিত এম এ চমূপতি। যা ১৯২৪ সালে লেখা হয়েছে। রঙ্গিলা রসুল বইটি একটি ধর্মকারী কুফরী বই। এই বইটি তে ইসলামের প্রাথমিক যুগ এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনের কিছু দিক ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।

যা মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত হানে। রঙ্গিলা রসুল বইটি ধর্মীয় সংবেদনশীলতার ও ভারতের ইতিহাসে বাকস্বাধীনতা মধ্যে সংঘাতের অংশ হতে পারে। এক মুসলিম যুবক ইলম-উদ-দীন এই বইয়ের প্রকাশক কে ১৯২৯ সালে হত্যা করেন।

সত্যার্থ প্রকাশ-(১৯৪৪)

সত্যার্থ প্রকাশ

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী রচিত একটি গ্রন্থ হচ্ছে সত্যার্থ প্রকাশ। গ্রন্থটি হিন্দিতে প্রকাশিত হয় ১৮৭৪ সালে। সত্যার্থ প্রকাশ বইটি ছিল তাঁর অন্যতম পাণ্ডিত্যপূর্ণ রচনা। বর্তমানে এই বইটি হিন্দি ছাড়া ও ইংরেজি, বাংলা, ফরাসি, জার্মান,আরবি, চীনসহ ২০ টির ও বেশি ভাষা অনুদিত হয়েছে। সত্যার্থ প্রকাশ বইটিতে কিছু লেখা রয়েছে যা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়।

এর ফলে ধর্মীয় এবং সামাজিক শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে। ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম, এবং অন্যান্য ধর্মীয় বিশ্বাসের কঠোর সমালোচনা করেন।বইটিতে ব্যবহৃত ভাষা অনেকে ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতি অবমাননাকর বলে মনে করা হয়। এই জন্য সত্যার্থ প্রকাশ বইটি  নিষিদ্ধ করা হয়।

শেষ কথা

বাংলাদেশে কিছু বই রয়েছে যে গুলো বিভিন্ন সময়ে সাহসী চিন্তার প্রতিফলন থাকলেও সমাজে শান্তি বজায় রাখতে এবং উত্তেজনা এড়াতে সেগুলো নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ বই গুলো ইতিহাস, রাজনীতি, এবং সমাজতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে আজও আলোচিত।

About the Author: Piku

হ্যালো, আমি পিকু। নাম দেখে অনেকেই মনে করতে পারেন এইটা কেমন নাম, এইটা কি আমার আসল নাম নাকি? না এইটা আমার ছদ্মনাম যা আমি নিজেই দিয়েছি। আমি বিডিইবুক সাইটে একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে লেখালিখি করে থাকি। আমি মূলত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বিভিন্ন বই এবং লেখক নিয়ে লিখে থাকি। আমার পড়া বিভিন্ন সেরা বই সম্পর্কে আপনারা এই সাইটে আর্টিকেল পড়তে পারবেন।

You May Also Like

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।