বাংলাদেশ

বাংলাদেশের জাতীয় দিবস এবং তাদের গুরুত্ব সমূহ

জাতীয় দিবস একটি নির্ধারিত দিন যে দিনে কোন রাষ্ট্র বা সার্বভৌম জাতির জাতিসত্তা চিহ্নিত করা হয়। অনেক দেশে একাধিক জাতীয় দিবস রয়েছে, তার মধ্য বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির পরিচয় মনে করিয়ে দেয়। এছাড়াও জাতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও ত্যাগকে স্মরণ করিয়ে দিতে জাতীয় দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।

পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে একটি নির্দিষ্ট তারিখের জাতীয় দিবস পালিত হয়। এবং এই দিন বিশেষ ছুটির দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। আজকে আমরা এই আর্টিকেলে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস এবং এর গুরুত্ব সমূহ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তাহলে আসুন সময় নষ্ট না করে শুরু করা যাক।

বাংলাদেশের জাতীয় দিবস সম্পর্কে আলোচনা

বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলোর মধ্য প্রতিটি দিবসের পেছনে রয়েছে এক অনবদ্য ইতিহাস। যা জাতির চেতনাকে জীবিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে অনেক দিবসের সঞ্চালন রয়েছে। জাতীয় দিবসের সাথে জাতির গৌরব জড়িত। জাতীয় দিবস দেশে ভিন্ন মাত্রায় ব্যাপকভাবে পালিত হয়। বলে রাখা ভালো বেশিরভাগ জাতীয় দিবসকে দুটি বড় দলে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়।

তার মধ্য যে সকল নতুন দেশগুলি যারা তাদের জাতীয় দিবসকে তাদের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালন করে। অন্যদিকে পুরানো দেশগুলি যারা তাদের জাতীয় দিবস হিসাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কোন ঘটনাকে ব্যবহার করে। বাংলাদেশেও বেশ কিছু গৌরবময় দিবস রয়েছে। যেটি প্রতিটি বাঙালিদের মনে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তার মধ্য অন্যতম দিবস হলোঃ

  • ২১শে ফেব্রুয়ারি।
  • ২৬শে মার্চ।
  • ১৬ই ডিসেম্বর।
  • ৭ই মার্চ।
  • ১৪ই এপ্রিল।
  • ১লা মে।
  • ৪ঠা নভেম্বর ইত্যাদি।

এই সকল দিবসে লুকিয়ে রয়েছে হাজারো সৃতি। বাংলাদেশের সকল ধরনের দিবসে বাঙালিরা একজোট হয়ে এটি পালন করে থাকে। নিচে উল্লেখিত বাংলাদেশের জাতীয় দিবস ও এর গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

২১শে ফেব্রুয়ারি

২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ২১শে ফেব্রুয়ারি সকল বাঙালিদের জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে হাজারো বাঙালি পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীদের গুলিতে শহিদ হয়েছে। ২১শে ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস বলার কারণ ১৯৫২ সালের এইদিনে মাতৃভাষা বাংলাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্রজনতা এক ঐক্য আন্দোলন গড়ে তোলে। এবং সেই আন্দোলনে পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক তরুণ এবং সাধারণ মানুষ শহিদ হয়। যাদের মধ্যে রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত সহ নাম না জানা অনেকেই মৃত্যুবরণ করেন। ভাষার জন্য এইসকল মানুষের নির্বিচারে প্রাণহানি হওায়ায় ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এবং জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। বলে রাখা ভালো ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের বিভক্তির পর পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান এই দুইটি দেশ গঠিত হয়। তবে এই দুই দেশের মধ্য অনেক কিছুর অমিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং অর্থনৈতিক ইত্যাদি। এক পর্যায়ে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকারে হওয়ায় সেসময় তৎকালীন সরকার উর্দুকে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং সেটি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মেনে নেয়নি। এটির কারণ বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫৬% যা উর্দুভাষীদের সংখ্যা হতে অনেক বেশি। মূলত এখান থেকেই আন্দোলনের শুরু। এবং তা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের রূপধারণ করে।

২৬শে মার্চ

২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। সকল বাঙালিদের জীবনের এটি একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয় এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর প্রধান কারণ ছিল ভাষা আন্দোলন থেকে। তৎকালীন পাকিস্থানি সরকার উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন, এবং তার সেই সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে বাঙালিরা আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের কারণ শুধু ভাষাগত দিক দিয়েই নয়, বরং তৎকালীন পাকিস্তানিরা বাঙালিদের সঠিক অধিকার দিতে নারাজ ছিল।

সেইসাথে তারা বাঙালিদের ওপর নানা ভাবে নির্যাতন ও অত্যাচার চালাত। বাঙালিরা নিজেদের সঠিক অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম গড়ে তোলে। এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালিরা চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জন করে। এই ৯ মাসে হাজারো প্রাণ নির্বিচারে ঝরেছে। সেইসাথে বাংলার মা বোনদের নানা ভাবে নির্যাতিত হতে হয়েছে। বলে রাখা ভালো ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করে। এবং এই রাতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণদের নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে এবং সেসময় বাংলার প্রতিটা অলিগলিতে হাজারো বাঙালিদের মরাদেহ উদ্ধার করা হয়।

তারা এই রাতে বাংলার নেতাগণদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এবং অনেক নেতাদের গ্রেফতার করে কারাগারে প্রবেশ করে। পশ্চিম পাকিস্তানিদের এই হত্যাকাণ্ডকে অপারেশন সার্চলাইট বলে আখ্যায়িত করা হয়। পরবর্তীতে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এবং পুরো দেশ স্বাধীনতার জন্য একত্রিত হয়ে পাকিস্থানিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ এবং ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন করি।

১৬ই ডিসেম্বর

১৬ই ডিসেম্বরে বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত অর্জন করে। তাই এটিকে মহান বিজয় দিবস হিসেবে পালিত করা হয়। ১৬ ডিসেম্বরকে ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এবং এই দিনটি বাংলাদেশে সরকারি ছুটির দিন। ১৯৪৭ সালে যখন দেশ বিভক্ত হয় ঠিক তখন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুইটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করা হয়। মূলত এখান থেকেই ঘটনার শুরু। বলে রাখা ভালো পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানিদের ভাষাগত সহ প্রায় সকল দিক দিয়ে আচার আচরণ ছিল ভিন্ন। তাই পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি চরম বৈষম্য চালিয়ে যায়। এবং একসময় পূর্ব পাকিস্তানিরা ভাষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক দিক থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।

পরবর্তীতে বাংলার মানুষ তাদের সঠিক অধিকার আয়াদের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। এবং সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশের ছাত্র জনতা ও সকল শ্রেণীর মানুষ এই আন্দোলনে যোগদান করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রধান কারণগুলো ছিল, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন ও ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ গণহত্যা ইত্যাদি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখের বেশি মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি। ১৬ই ডিসেম্বর শুধু একটি তারিখ নয়, বরং এটি প্রতিটি বাঙালিদের মনে এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

৭ই মার্চ

৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দিবস। ৭ই মার্চ বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত দিন হিসেবে পালিত হয়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। যে ভাষনের মূল লক্ষ্যে ছিল জনগণের মুক্তি এবং পাকিস্তানিদের নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার। এই ভাষণে শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন এবং দেশের মানুষের প্রতি তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালিদের মনে একটি সাহসের প্রতিক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হসেবে গণ্য করা হয়। তার এই ভাষণটি ছিল নয় মিনিটের।

তবে এই নয় মিনিট প্রতিটা বাঙালিদের মনে সাহসের প্রতিক হিসেবে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। তার ভাষণের মধ্য সবথেকে জনপ্রিয় বার্তা ছিল “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। এছাড়াও শেখ মুজিব তার ভাষণে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের পরিবর্তে জনগণকে বিক্ষোভ ও প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। যা বাঙালিদের সেসময়ের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার ভাষণের পরে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তার ভাষণ দ্বারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এবং সাধারণ জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করে। ৭ই মার্চ এই দিনটি বাংলাদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। এবং ৭ই মার্চের ভাষণ কেবল মাত্র একটি বক্তৃতা ছিল না। বরং এটি ছিল স্বাধীনতার এক অলিখিত ঘোষণা।

১৪ই এপ্রিল

১৪ই এপ্রিল বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ। এই দিনটি বাংলা সনের প্রথম দিন, এবং বাঙালিরা এই দিনে সংস্কৃতির অন্যতম বৃহত্তম উৎসব পালন করে থাকেন। বাংলাদেশের মানুষ নতুন পোশাক মিষ্টি খাবার এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপন করে। পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। বলে রাখা ভালো পহেলা বৈশাখ উদযাপনের শুরু হয়েছিল পুরান ঢাকার মুসলিম মাহিফরাস সম্প্রদায়ের হাত থেকে। ১লা বৈশাখ বাঙালিদের এক বিশেষ পরিচয় বহন করে থাকে। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশের প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চান্দ্রসৌর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়ে থাকে। এই দিনে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বাংলা নববর্ষ বাঙালির ঐতিহ্যবাহী উৎসব। যেখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে উদযাপন করে। এবং ১লা বৈশাখে একটি পুরনো রীতিনীতি লুকিয়ে রয়েছে, ব্যবসায়িক দিক দিয়ে এটিকে হালখাতা বলা হয়। যেখানে ব্যবসায়ীরা তাদের পুরনো হিসাব চুকিয়ে নতুন বছরের জন্য লেনদেন শুরু করেন। এবং ১লা বৈশাখে একটি আকর্ষণীয় পন্থা হচ্ছে পান্তা ভাত। এদিনে সকালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজন, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা ও পান্তা ভাত খাওয়ার রীতি বাঙালিদের মধ্যে বেশ প্রচলিত। পহেলা বৈশাখে ঢাকা শহরের রমনা পার্ক, চারুকলা ইনস্টিটিউট, এবং বিভিন্ন জেলা শহরে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। এছাড়াও এই দিনে পাড়া মহল্লায় খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১৪ই এপ্রিল বাঙালিদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। যেটির মধ্য বাঙালিদের এক বিশেষ পরিচয় লুকিয়ে রয়েছে।

১লা মে

১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এই দিনটি প্রতি বছর পয়লা মে তারিখে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়। এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদ্‌যাপন দিবস। বলে রাখা ভালো ভারত ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পয়লা মে জাতীয় ছুটির দিন। এবং এই দিনটিকে আরো অনেক দেশে বেসরকারিভাবে পালিত করা হয়। এটিকে শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত করা হয়। ১লা মের ইতিহাস ও উৎপত্তি হয় মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর থেকে। এদিনে হাজারো শ্রমিক ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস বাস্তবায়নের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে।

এবং শ্রমিকদের এই দাবিতে ৪ঠা মে হেইমার্কেট স্কয়ারে এক প্রতিবাদ সভা চলাকালীন পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায় এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে অনেক শ্রমিক নিহত হন। এই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত শ্রমিক কংগ্রেসে ১লা মেকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১লা মে এই দিনে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে সরকারি ছুটির দিন থাকে। এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন মিছিল ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়।। এছাড়াও বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে মে দিবসকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশেও এদিনটি সরকারি ছুটির দিন। এবং মে দিবসে এই দিনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও রাজনৈতিক দল মিছিল ও সভার আয়োজন করে।

৪ঠা নভেম্বর

৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান গণপরিষদে গৃহীত হয়। এ দিনটি বাংলাদেশের জন্য এক বিশেষ দিন। ৪ঠা নভেম্বর দেশের সংবিধানের প্রণয়ন এবং গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পরে ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশ সংবিধানে প্রণীত হয়। তা ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে কার্যকর হয়। ৪ঠা নভেম্বরের এই সংবিধান বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ও সমাজতন্ত্রের প্রতিফলন ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। সংবিধান দিবসে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেটির মাধ্যমে ৪ঠা নভেম্বরকে স্মরণ করা হয়।

সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শপথ অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, ও সংবিধানের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মদের সঠিক ধারনা পেশ করা হয়। এবং এই দিনে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্রছাত্রীরা সংবিধানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ও বিতর্কে অংশ নেয়। বলে রাখা ভালো বাংলাদেশের সংবিধানে চারটি মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে তা হলোঃ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত, গণতান্ত্রিক ও সার্বভৌম দলিল, যা রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এ দিনটির মাধ্যমে দেশের জনগণকে সংবিধানের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এবং দেশের সাধারণ জনগণ সংবিধান দিবসের মাধ্যমে বিধানের মূল আদর্শ ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কে জানতে পারে। যা দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে ।

শেষ কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দিবসসমূহ আমাদের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রের মূলনীতি হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের প্রতিটি দিবস আমাদের দেশের ইতিহাস ও সংগ্রামের অধ্যায় স্মরণ করিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এইসকল দিবসের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি। আজকে আমরা এই আর্টিকেলে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আসা করছি এটি আপনাদের উপকারে আসবে। আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত প্রকাশ করুন ধন্যবাদ।

Taufik

হ্যালো বন্ধুরা, আমি তৌফিক বিডিইবুক সাইটের একজন কন্টেন্ট লেখক। আমি মূলত বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বাংলা ভাষার বই নিয়ে লেখালিখি করে থাকি। বিডিইবুক সাইটে আমার লেখা পড়লে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলা ভাষার বই সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমি সব সময় সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করে থাকি যা আপনারা আমার লেখা পড়লেই বুজঝতে পারবেন।

Recent Posts

আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ১০টি কার্যকর কৌশল যা সবার জানা প্রয়োজন

আত্মবিশ্বাস বাড়ানো আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাস একজন মানুষের…

3 সপ্তাহ ago

জনপ্রিয় বাংলা সাহিত্য পুরস্কার ও তার গুরুত্ব

বাংলা সাহিত্যের প্রচলন অনেক আগে থেকেই। বাংলা সাহিত্যে অনেক কিছু শিক্ষণীয় বিষয়ের সাথে বাস্তবতার মিল…

3 সপ্তাহ ago

স্বাস্থ্য ও মানসিক প্রশান্তির জন্য আমাদের যে বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত

স্বাস্থ্য মানুষের জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। অপরদিকে মানসিক প্রশান্তি ছাড়া আমাদের জীবনের সুখ শান্তি কল্পনা…

4 সপ্তাহ ago

বাংলা নাটকের ইতিহাস ও ক্রমবর্ধমান ধারা

নাটক সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা। নাটকে আমরা মূলত অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের নড়াচড়া, কথাবার্তা ইত্যাদির মাধ্যমে…

4 সপ্তাহ ago

সময় ব্যবস্থাপনা ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর ১০টি কার্যকর উপায়

সময় আমাদের জীবনের অনেক বড় একটি অংশ। এই পৃথিবীতে আমাদের সকলের জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে…

4 সপ্তাহ ago

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন কেন্দ্র সমূহের বিস্তারিত আলোচনা

সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশের সমুজ শ্যামল মাঠ, বিস্তীর্ণ…

1 মাস ago