গল্প শুনতে বা পরতে কার না ভালো লাগে। ছোট থেকে বড় প্রায় সকল মানুষের গল্পের প্রতি একটি আলাদা ভালোলাগা কাজ করে। গল্প মানুষদের শিক্ষা, আনন্দ ও বিনোদন দিয়ে থাকে। অনেক ধরনের কাল্পনিক দৃশ্য, অ্যাডভেঞ্চার, রোমান্স ও ভয়ানক নানা কাহিনীকে কেন্দ্র করে গল্পের বই রচিত করা হয়। সাধারানত ছোট, বড় থেকে শুরু করে প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষদের জন্য নানা গল্পের বই লক্ষ্য করা যায়।
তার মধ্য অন্যতম ছোটদের গল্পের বই। এই সকল গল্পের বইয়ে বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু এবং থিম থাকে, যা পাঠকের আগ্রহকে আকর্ষণ করে। আজকে আমরা এই আর্টিকেলে ছোটদের সেরা গল্পের বইগুলোর কিছু তালিকা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবো। সেইসাথে সংক্ষেপে এটির বিস্তারিত আলোচনা আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। তাহলে আসুন শুরু করা যাক।
ছোটদের বই
বাংলা সাহিত্যে ছোটদের গল্পের বই একটি অন্যতম জায়গা দখল করে আছে। গল্পের বই মানেই আকর্ষণীয় একটি কল্পকাহিনী। লেখক তার জ্ঞান ও বুদ্ধির মিশ্রণে নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখার মাধ্যমে আমাদের বিনোদন দিয়ে থাকেন। বাংলা সাহিত্যে ছোটদের বই একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক মাধ্যম। যার ফলে শিশুদের মননশীলতা, কল্পনা ও শিখন প্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করে।
ছোটদের গল্পের কাহিনীতে ছবি ও চিত্রকল্প তুলে ধরা হয়। ফলে এতে করে শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং গল্পকে আরো জীবন্ত করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই সকল গল্পের বইয়ে নৈতিক শিক্ষা, বন্ধুত্ব, পরিবার, এবং সমাজের মূল্যবোধ নিয়ে গল্প থাকে, যা শিশুদের চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। বাংলা সাহিত্যে প্রায় একাধিক ছোটদের গল্পের বইয়ের সমাহার রয়েছে। যার কিছু অংশ নিচে সংক্ষেপে আমরা এই লেখাটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
ছোটদের সেরা গল্পের বই
ছোটদের সেরা জনপ্রিয়তা অনেক গল্পের বই রয়েছে। যা পাঠকদের নানা ভাবে আকৃষ্ট করে এসেছে। এই সকল গল্পের বইয়ে নানা কল্পকাহিনী পাঠকদের আকর্ষণ করে থাকে। গল্পের নানা চরিত্র, স্থান, রহস্য ও ভয়ানক নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখক আকর্ষণীয় অনেক গল্প তৈরি করেন।
বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যে ছোটদের গল্পের জনপ্রিয়তা অধিক। এটির জনপ্রিয়তা বর্তমান সময়েও অধিক পরিমানে দেখা যায়। আমরা এই আর্টিকেলে ছোটদের জনপ্রিয় সেরা কিছু বইয়ের তালিকা উল্লেখ করার চেষ্টা করবো। নিচে জনপ্রিয় বইয়ের তালিকা তুলে ধরা হলোঃ
- চাঁদের পাহাড়।
- টেনিদা সমগ্র।
- পাগলা দাশু।
- আমার বন্ধু রাশেদ।
- যকের ধন।
- ক্ষীরের পুতুল।
- গুপি গাইন বাঘা বাইন।
- ছেলেদের রামায়ণ।
- আবোল তাবোল।
- সমগ্র শিশুসাহিত্য।
- পিঁপড়ে আর ব্যোমনাবিক, ইত্যাদি।
ছোটদের গল্পের বইয়ে বিভিন্ন ধরণের গল্প থাকে। যেমনঃ সাহসী নায়ক, বন্ধুত্বের গল্প, রূপকথা এবং শিক্ষামূলক কাহিনী ইত্যাদি। এছাড়াও নানা রহস্য, ভয়ানক কাহিনীকে কেন্দ্র করে অনেক গল্প রচিত করা হয়। যা পাঠকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করে। উল্লেখিত বইয়ের সংক্ষেপে আলোচনা ও এর বিস্তারিত আমরা নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
চাঁদের পাহাড়
চাঁদের পাহাড় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কাল্পনিক উপন্যাস। এই উপন্যাসটি মূলত একটি অভিযানকে নিয়ে রচিত করা হয়েছে। এই উপন্যাসটি ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত করা হয়। এই কাহিনীর মূল চরিত্র শঙ্কর নামক ভারতবর্ষের সাধারণ এক তরুণের। এবং সেইসাথে তার আফ্রিকা মহাদেশ জয় করার কাহিনী এই গল্পে তুলে ধরা হয়েছে। গল্পে দেখা যায় শঙ্কর এক বিশাল অভিযানের জন্য সাগর পাড়ি দেয় আফ্রিকার ভূখণ্ডে।
তার লক্ষ্য চাঁদের পাহাড়। যেখানে সে সোনা ও রত্ন পাওয়ার আশায় ভ্রমণ করে। তার এই ভ্রমনে নানা ঘটনার ও অভিজ্ঞতার কথা বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। যার ফলে গল্পটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এই গল্পে আরও দেখা যায়, শঙ্করের ভ্রমণের আগে তিনি গ্র্যাজুয়েশন করার পর পাটকলে চাকরি পায়। কিন্তু সে আগে থেকেই রোমাঞ্চ খোঁজে। ফলে সে আফ্রিকার দুর্গম স্থানে যেতে চায়। সেই থেকেই এই কাহিনীর পথ চলা শুরু হয়।
গল্পে শঙ্করের অভিযানে নানা প্রতিকূলতা ও বিপদের সম্মুখীন হয়। এবং এই গল্পে শঙ্করের দেখা প্রাকৃতিক বিভিন্ন সৌন্দর্য ও বিচিত্র প্রাণীর কথা উঠে এসেছে। তার অভিযানে বন্য প্রাণীদের সম্মুখীন হওয়া, খনিজ সম্পদের সন্ধান এবং স্থানীয় উপজাতিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নানা বিষয় উল্লেখিত হয়েছে। যা পাঠকদের মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এই গল্পে শঙ্করের সাহস ও বুদ্ধিমত্তার কথা উঠে এসেছে। এবং পরিশেষে সে তার উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হওয়ার জীবন ও অভিজ্ঞতার নানা বিষয় এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
টেনিদা সমগ্র
টেনিদা সমগ্র নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। এই গল্পে টেনিদা চরিত্রের অসাধারণ কাণ্ডকারখানা তুলে ধরা হয়েছে। গল্পে টেনিদা হল একজন তরুণ ও প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন যুবক। যে তার বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্বের কারণে নানা পরিস্থিতিতে মজার ও হাস্যকর অবস্থার সম্মুখীন হয়। মূলত টেনিদাকে ঘিরেই এই গল্পের শুরু। গল্পে দেখা যায়, টেনিদা সবসময়ই নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তার চতুরতার মাধ্যমে সেগুলো সমাধান করে। টেনিদার গল্পগুলোতে তার বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে।
গল্পের শুরুতে আমরা দেখতে পারি, টেনিদা উত্তর কলকাতার পটলডাঙায় বসবাসরত একটি স্থানীয় চরিত্র। বলে রাখা ভালো টেনিদার প্রকৃত নাম ভজহরি মুখার্জি। টেনিদা পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিলেন না। মজার বিষয় হচ্ছে তিনি সাত বারের চেষ্টাতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছেন। টেনিদা মূলত বিখ্যাত ছিলেন তার খাঁড়ার মত নাকের জন্যে। সেইসাথে তার গড়ের মাঠে গোরা পেটানোর জন্যে। এই উপন্যাসে টেনিদার নানা ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে। যা পাঠকদের আনন্দ ও বিনোদনে সহযোগিতা করেছে। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা টেনিদা সমগ্রে প্রতিটি গল্পে একটি মজার টুইস্ট থাকে, যা পাঠকদেরকে আকৃষ্ট করে। এবং গল্পটিকে আরও মজাদার করে তোলে।
পাগলা দাশু
পাগলা দাশু সুকুমার রায়ের একটি রোমাঞ্চকর এবং হাস্যরসাত্মক গল্প। এই গল্পটি একটি যুবকের কাণ্ডজ্ঞানহীন ও মজার অভিযানের কাহিনী নিয়ে রচিত করা হয়েছে। পাগলা দাশু গল্পের জনপ্রিয় চরিত্র পাগলা দাশু, যিনি তার অদ্ভুত আচরণ ও চিন্তাধারার জন্য পরিচিত। লেখক তার কাল্পনিক চরিত্রকে একটি কৌতুকপূর্ণ চরিত্র হিসেবে ফুটে তুলেছেন। পাগলা দাশুর মাথায় সব সময় নতুন নতুন কল্পনা ও পরিকল্পনা ঘোরে। এবং গল্পে দেখা যায় পাগলা দাশু সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অদ্ভুত পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। সে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন। এবং সেইসাথে প্রতিটি ঘটনার মাধ্যমে তার চতুরতা ও হাস্যরসের চাতুরী প্রকাশ পায়। যা কাহিনীতে ফুটে তোলা হয়েছে।
গল্পে পাগলা দাশু ছিল সকলের ঠাট্টাতামাশা পাত্র। তার বুদ্ধি ও চেহারা সম্বন্ধে অনেকেই অপ্রীতিকর সমালোচনা করতো। কিন্তু সে কখনও বিরক্ত হতো না। বরং অনেক সময় সে নিজেই অন্যের অপ্রীতিকর মন্তব্যের ওপর রঙ চড়িয়ে নিজের সম্বন্ধে নানারকম অদ্ভুত গল্প বলতেন। গল্পে দেখা যায় পাগলা দাশু তার সাহস ও অদ্ভুত আচরণ তাকে বিপদের মুখোমুখি করলেও, প্রতিটি পরিস্থিতিকে তিনি হাস্যরসের মাধ্যমে মোকাবেলা করেন। এই গল্পে লেখক শিক্ষণীয় অনেক বিষয় তুলে ধরেছেন। যা পাঠকদের জন্য বেশ কার্যকরী। এবং গল্পের প্রতিটা মুহূর্ত নানা আকর্ষণে ভরপুর। ফলে পাঠকদের মনোযোগ ধরে রাখতে এটি গুরুপ্তপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।
আমার বন্ধু রাশেদ
আমার বন্ধু রাশেদ মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি হৃদয়গ্রাহী উপন্যাস। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমির ওপর বানানো হয়েছে। এই গল্পের প্রধান চরিত্র রাশেদ। এই কাহিনীর প্রেক্ষাপট হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে মফস্বলের ছোট একটা শহর। এবং গল্পের একাধিক চরিত্রের মধ্য কয়েকজন স্কুলছাত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গল্পে দেখা যায়, রাশেদ ভিন্ন ধরনের সাহসী এবং দেশপ্রেমিক একজন ছেলে। এই গল্পে রাশেদ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় এবং তার সাহসিকতা ও নেতৃত্বের গুণাবলি প্রদর্শন করে। রাশেদের নেতৃত্বে ইকবাল এবং তার বন্ধুরা নানা দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নেয়।
তাদের কাহিনীতে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম, বিপদ, এবং আত্মত্যাগের নানা চিত্র ফুটে উঠেছে। এই গল্পের নানা চরিত্রকে লেখক অনেক আকর্ষণীয় ভাবে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। ফলে গল্পের প্রতিটা চিত্রে রাশেদ সহ তার সহপাঠীদের মহিমা দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগের কথা প্রমাণ করে। এই গল্পটি মূলত কিশোরদের সাহস, দেশপ্রেম, এবং বন্ধুত্বের শক্তি সম্পর্কে একটি অনন্য দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য গুরুপ্তপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।
যকের ধন
যকের ধন হেমেন্দ্রকুমার রায়ের লেখা রোমাঞ্চকর গোয়েন্দা উপন্যাস। যকের ধন উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই গল্পের কেন্দ্রবিন্দু হল একটি যকের খোঁজ। উপন্যাসের মূল চরিত্র বাঘা এবং তার বন্ধু। মূলত তারাই এই যকের খোঁজ করতে রহস্যময় এই অভিযান চালায়। গল্পের শুরুতে আমরা দেখতে পারি, ঠাকুরদাদা মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া একটি বাক্স খুঁজে পায় কুমার। মজার বিষয় হচ্ছে সে এই বাক্সে হতে খুঁজে পায় কালো মড়ার খুলি। সেই খুলির গায়ে তার অপরিচিত কিছু ভাষায় সংকেত ইত্যাদি লেখা, যার অর্থ সে বুঝতে পারেনা। তবে বলে রাখা ভালো কুমারের প্রিয় বন্ধু বিমল অনেক সাহসী ও অভিযান প্রিয়।
সে নানা রহস্য উদ্ঘাতন করতে পছন্দ করে। তাই বিমল সেই রহস্যের পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করে। সে অনুমান করে একটি গুপ্তধন রয়েছে যা নেওড়া ভ্যালির কোনো এক স্থানে লুকোনো আছে। এবং তারা দুই বন্ধু সেই গুপ্তধনের খোঁজে রওনা দেয়। মূলত এই গল্পের কাহিনী এখান থেকে শুরু হয়। তাদের এই গুপ্তধনের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে তারা নানা বিপদ ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। যা এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এই গল্পের প্রতিটা মুহূর্তকে পাঠকদের শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা এবং রোমাঞ্চে ভরিয়ে দেয়। এবং লেখক এই কাহিনীতে বন্ধুত্ব, সাহসিকতা, এবং বুদ্ধিমত্তার মিশ্রণ ফুটে তুলেছেন। যা পাঠকদের মন্ত্রমুগ্ধ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ক্ষীরের পুতুল
ক্ষীরের পুতুল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত একটি জনপ্রিয় রূপকথার উপন্যাস। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষীরের পুতুল উপন্যাস লিখেছিলেন। এই গল্পের প্রধান চরিত্ররা হলেন রাজকন্যা মুকুন্দমালা এবং রাজকুমার রামকৃষ্ণ। গল্পে দেখা যায়, মুকুন্দমালা একটি ক্ষীরের পুতুল তৈরি করে, যা সবসময় তার সাথে থাকত। এবং মুকুন্দমালা এই পুতুলের মাধ্যমে তিনি নানা সমস্যার সমাধান করতেন। তার জীবনের ছোট বড় নানা সমস্যার সমাধানে মুকুন্দমালা ক্ষীরের পুতুলকে কাজে লাগাত। এবং অবশেষে দেখা যায়, মুকুন্দমালা তার জীবনের সকল বাধা অতিক্রম করে সুখী জীবন যাপন করতে শুরু করেন।
এই গল্পটি রূপকথার হলেও গল্পের প্রতিটি অংশ পাঠকদের নানা ভাবে আকর্ষণ ধরে রাখতে গুরুপ্তপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এছাড়াও এই গল্পের আরেকটি চরিত্র রাজকুমার রামকৃষ্ণ। ক্ষীরের পুতুল বইয়ে রাজকুমার রামকৃষ্ণের অনেক ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এই গল্পের প্রতিটি কাহিনী অনেক আকর্ষণীয়। সেইসাথে লেখক তার বইয়ে নানা শিক্ষণীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ক্ষীরের পুতুল উপন্যাসটি রূপকথার মাধ্যমে ন্যায়বিচার, বন্ধুত্ব এবং সাহসিকতার গুরুপ্ত তুলে ধরা হয়েছে। ক্ষীরের পুতুল উপন্যাসটি ছোটদের জন্য একটি অনন্য কাহিনী। যা তাদের কল্পনাশক্তি ও সৃষ্টিশীলতার বিকাশে সাহায্য করবে।
গুপি গাইন বাঘা বাইন
গুপি গাইন বাঘা বাইন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা একটি জনপ্রিয় রূপকথার গল্প। এই গল্পটি ছোটদের জন্য বেশ পছন্দের একটি কাহিনী। এই গল্পের মূল চরিত্র গুপি গাইন এবং বাঘা বাইন। গল্পে গুপি গাইন আর বাঘা বাইন নামের দুই যুবক ছিলেন অত্যন্ত অদ্ভুত এবং মজার চরিত্র। গল্পে আমরা দেখতে পারি, গুপি ভালোবাসত গান গাইতে এবং তার আরেক বন্ধু বাঘা ভালোবাসত ঢাক বাজাতে। তবে তাদের কোনোটাতেই ভালো পারফর্মার ছিল না।
তাদের গানের কারণে গ্রামবাসীরা তাদের দুইজনকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়। এবং পরবর্তী সময়ে তারা দুইজন একদিন জঙ্গলে মিলিত হয়। এই গল্পের আকর্ষণীয় চিত্র, গুপি গাইন এবং বাঘা বাইন জঙ্গলে এক ভূতের রাজার সাথে তাদের পরিচয় হয়। এবং ভূতের রাজা তাদের সংগীত প্রতিভার জন্য তিনটি বর প্রদান করেন। এই তিনটি বর মূলত ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতো। প্রথম বর হলো তারা যেখানে গাইবে সেখানে কেউ গান গাইতে পারবে না। দ্বিতীয়টি হলো, তারা যেখানেই যাবে সেখানে খাবারের অভাব হবে না। এবং সর্বশেষটি হলো, তারা যেখানেই যাবে সেখানে তাদের ইচ্ছামত যাত্রা করতে পারবে।
এই তিনটি বরকে কাজে লাগিয়ে গুপি গাইন ও বাঘা বাইন রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে গান বাজনা করে এবং রাজ্যকে বিভিন্ন বিপদ থেকে মুক্ত করে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই বর পেয়ে তারা রাজ্যের রাজার আমন্ত্রণে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে গান বাজনা করতেন। এই গল্পের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক গুপি গাইন এবং বাঘা বাইন রাজকন্যাদের সাথে বিয়ে করে সুখে জীবনযাপন করে। যা গল্পটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সাহায্য করেছে। এই গল্পটিতে লেখক শিশুদের জ্ঞান ও সৃষ্টিশীলতা বিকাশে জন্য মজা এবং শিক্ষণীয় নানা দিক তুলে ধরেছেন। সেইসাথে গল্পের প্রতিটি মুহূর্ত পাঠকদের মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ছেলেদের রামায়ণ
ছেলেদের রামায়ণ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এটি মূলত প্রাচীন ভারতের মহাকাব্য রামায়ণের একটি সহজবোধ্য ও সংক্ষিপ্ত রূপ নিয়ে রচিত করা হয়েছে। এই গল্পটি বিশেষ করে ছোটদের জন্য লেখা হয়েছে। যাতে তারা রামায়ণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি সহজে বুঝতে পারে। এই গল্পের মূল চরিত্র রামায়ণ। এই গল্পে রামায়ণের চরিত্র ও ঘটনাগুলি তুলে ধরা হয়েছে। এটি মূলত রাজা দশরথ, রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, হনুমান এবং রাবণের গল্প।
এই বইটি শুধু কিশোরদের জন্যই নয় বরং বড়দের জন্যও খুব গুরুপ্তপূর্ণ। এক কথায় বলা যায়, যারা বিশেষ করে স্বল্প সময়ে বিশাল রামায়ণকে পড়তে চান তাদের জন্য এই বইটি। এই বইয়ে উনিশ শতকের গোড়ার দিক থেকে শুরু করে বাঙালির আধুনিকতার সূচনাকালে প্রায় সকল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। শিশুকিশোরদের ভারতবর্ষের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল সম্পর্কে জানতে এই বইটি গুরুপ্তপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।
ছেলেদের রামায়ণ বইটি পড়ার মাধ্যমে শিশুকিশোররা শুধু ভারতীয় পূরাণের সাথেই পরিচিতি হবে না বরং তাদের মধ্যে জাগ্রত হবে নৈতিকতাবোধ। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এই বইয়ে শিক্ষণীয় অনেক বিষয়কে তুলে ধরেছেন। ফলে এটির মাধ্যমে পাঠকরা সঠিক জ্ঞান আরোহণ করতে পারবে। লেখক এই বইয়ের কাহিনীগুলোকে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। যাতে ছোটরা আনন্দের সাথে পড়তে পারে এবং রামায়ণের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
শেষ কথা
বাংলা সাহিত্যে ছোটদের গল্পের বই গুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আমরা সকলেই জানি, বাংলা সাহিত্যে প্রাচিনকাল থেকেই এর আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের অধিককালেরও পুরানো। লেখকরা এখানে তাদের নানা বই উপস্থাপন করে এসেছে। তার মধ্য অন্যতম বই শিশু সাহিত্য। শিশু সাহিত্যে অনেক ধরনের বইয়ের উপস্থিতি আমরা দেখতে পারি। যা নানা ভাবে পাঠকদের বিনোদন দিয়ে আসছে।
ছোটদের সেরা ও জনপ্রিয় বইগুলো পাঠকদের কল্পনার জগতে উড়িয়ে নিয়ে যায়। এবং তাদের মনের মধ্যে আনন্দ ও শিক্ষার একটি অনন্য মিশ্রণ প্রদান করে। বাংলা শিশু সাহিত্যে এরকম অনেক জনপ্রিয় গল্পের বই রয়েছে। এই সকল গল্পগুলো শুধু বিনোদনই দেয় না, বরং নৈতিকতা, সাহসিকতা, বন্ধুত্ব, এবং মানবিক মূল্যবোধ বুঝতে শেখায়। যার কিছু অংশ সংক্ষেপে আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এবং আসা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। এই সকল নিত্য নতুন প্রয়োজনীয় তথ্যের আপডেট পেতে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ধন্যবাদ।