শিক্ষামূলক

ছোটদের শিক্ষামূলক গল্পের বই যা আপনার বাচ্চার জন্য জরুরী

ছোটদের শিক্ষামূলক গল্পের বই আপনার বাচ্চার মানসিক বিকাশের জন্য এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি কেবল বাচ্চাদের মানসিক বিকাশ ঘটায়না, বরং বাচ্চাদের মজার বিনোদন, নৈতিকতা, সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করে। এসব বই পড়ার মাধ্যমে শিশুদের আনন্দের সাথে বই পড়ার প্রতি একটা আকর্ষন সৃষ্টি করে। ছোটদের শিক্ষামূলক গল্পের বই অনেক সহজ সরল ভাষায় লেখা হয়ে থাকে যার ফলে বই পড়তে এবং শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং তাদের শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হয়ে থাকে।

শিক্ষামূলক গল্পের বই পড়ার ফলে বাচ্চাদের মনের ভিতর এক প্রকার নতুন কিছু শিখার আগ্রহ জন্ম নেয়, যার ফলে তারা নতুন নতুন বই পড়ার প্রতি ঝুকে পরে। তাদের চিন্তা শক্তি এবং সৃজনশীল মনভোভাব বৃদ্ধি করে। এসব বই যেমন বাচ্চাদের আনন্দ দেয়, তেমনি বাচ্চাদের মানসিক চাপ কমাতেও সাহাস্য করে। তার আমাদের উচিৎ বাচ্চাদের সুন্দর সুন্দর শিক্ষামূলক গল্পের বই উপহার দিয়া এবং তাদের এসব গল্পের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করা। তাই আজকের এই প্রবন্ধে আমরা ছোটদের শিক্ষামূলক গল্পের বইয়ের গুরুত্ব এবং কিছু উল্লেখযোগ্য শিক্ষামূলক গল্পের বই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

শিক্ষামূলক গল্পের বই কেন গুরুত্বপূর্ণ

একটি শিক্ষামূলক গল্পের বই শিশুদের মানসিক, সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটাতে অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে। এসব বই এমন ভাবে তৈরি করা হয়, যাতে শিশুদের অনেক শিক্ষণীয় তথ্যের পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন ভাবে বিনোদন প্রদান করে থাকে। শিক্ষামূলক গল্পের বই একটি শিশুর বারন্ত বয়সে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে যা নিচে আলচোনা করা হলোঃ

  • নৈতিক শিক্ষা প্রদানঃ শিক্ষামূলক গল্পের ভাষা অনেক সহজ সরল হয়ে থাকে যার ফলে শিশুরা খুব সহজে জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নীতি সম্পর্কে জানতে পারে। এসব গল্পের মাধ্যমে শিশুরা সৎততা, সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ, এবং ন্যায়বিচার সম্পর্কে অনেক ভালো ধারণা লাভ করতে পারে। তারা পশুপাখির বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে অন্যের প্রতি দয়ালু হতে শিখে।
  • কল্পনাশক্তি বাড়ানোঃ ছোটবেলায় শিশুদের অনেক রূপকথা এবং ফ্যান্টাসি গল্পের বই পড়তে দিলে অনেক সহজে তাদের সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ ঘটে থাকে। এই ধরণের বই পড়ার ফলে শিশুদের কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যার ফলে ছোট থেকে আপনার শিশু অনেক কিছু কল্পনা করতে পারবে এবং তাদের মাথায় সৃজনশীল বুদ্ধি উজ্জীবিত হতে থাকে।
  • ভাষা এবং পাঠ দক্ষতার উন্নতিঃ শিক্ষামূলক গল্পের বই পড়ার ফলে আপনার শিশু অনেক নতুন নতুন শব্দ এবং বাক্য শিখতে পারবে। এসব নতুন শব্দ এবং বাক্য তাদের ভাষা শিখতে এবং সঠিক ভাবে বাক্য প্রয়োগ করতে সাহায্য করবে। ভাষা গত শিক্ষা এবং পাঠ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিশুদেরকে শিক্ষামূলক গল্পের বই পড়তে দিতে হবে।
  • সমাজ এবং সংস্কৃতির ধারণাঃ শিক্ষামূলক গল্পের মাধ্যমে শিশুরা সমাজের অনেক কিছু জানতে এবং বুজঝতে পারে। একটি সমাজের বিভিন্ন দিক, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষামূলক গল্পের মাধ্যমে জানা যায়। যার ফলে শিশুদের দৃষ্টি ভঙ্গি উদার করতে সাহায্য করে।
  • সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাঃ শিক্ষামূলক গল্পের মাধ্যে বিভিন্ন চরিত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষমতা এবং তা সমাধানের উপায় দেখানো হয়ে থাকে। এ থেকে শিশুদের মধ্যে বুদ্ধি এবং অনেক বিষয়ের উপর যুক্তির বিকাশ ঘটে। যার ফলে বাচ্চাদের মধ্যে যুক্তি এবং কোন সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়।
  • পরিবেশ সচেতনতাঃ অনেক শিক্ষামূলক গল্পে পরিবেশ রক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদ কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয় এবং প্রাণিকূলের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে শেখানো হয়ে থাকে। এসব গল্প পড়ার মাধ্যমে বাচ্চাদের মধ্যে পরিবেশ সম্পর্কে বিভিন্ন রকম সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়।
  • বিনোদন এবং মানসিক উন্নতিঃ শিক্ষামূলক গল্পের বই অনেক সময় শিশুদের আত্ম বিনোদনের খোরাক হয়ে যায়, এখানে অনেক মজাদার গল্পের বিষয়বস্তু শিশুদের আনন্দ দেয় এবং তাদের মধ্যে থাকা মানুসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এসব গল্পের বই একাধারে বিনোদন এবং মানসিক শান্তির বিকাশ ঘটায়।

কিছু শিক্ষামূলক গল্পের বই

আপনার শিশুকে আপনে কোন ধরনের বই পড়তে দিবেন সেটি আপনাদেই ঠিক করতে হবে। আমরা অনেক সময় বাচ্চাদের ভুল গল্পের বই দিয়ে থাকি যা থেকে বাচ্চারা তেমন ভালো কিছু শিখতে পারে না। আমাদের সকলের উচিৎ বাচ্চাদের শিক্ষামূলক গল্পের বই পড়তে দেওয়া, যার ফলে তারা অল্প বয়সে অনেক কিছু শিখতে এবং বুঝতে পারবে। একটি শিক্ষামূলক গল্পের বই আপনার শিশুর যেমন আনন্দের কারণ হবে, তেমনি আপনার শিশুর সৃজনশীল ক্ষমতা, ভাষা জ্ঞানের উন্নতি এবং সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা বৃদ্ধি করবে। সেই সাথে শিশুর নৈতিক শিক্ষা এবং মানসিক বিকাশ ঘটবে। তাই এই প্রবন্ধে আমরা শিশুর জন্য কিছু শিক্ষামূলক গল্পের বই নিয়ে আলচোনা করব যা আপনাদের কাজে লাগবে।

ঠাকুরমার ঝুলি

ক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের লেখা একটি বিখ্যাত ছোটদের গল্পের বই ঠাকুরমার ঝুলি যা ১৯০৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। ঠাকুরমার ঝুলি বাংলা সাহিত্যের একটি ঐতিহ্যবাহী রূপকথা, লোককাহিনি এবং পৌরাণিক গল্প সংকলন। উক্ত বইটিতে ৩২টি মত গল্প সংকলন রয়েছে যা রাজা-রানির প্রাসাদ, দরিদ্র কৃষকের ঘর, মন্ত্র-তন্ত্র, দানব, পাখি, এবং বিভিন্ন কাল্পনিক চরিত্রের সমারোহ রয়েছে। এখানে গ্রামীণ বাংলার সহজ-সরল পরিবেশ, জাদু-বাস্তবতা এবং রূপকথার গল্পে অনেক সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি গল্পে বাংলার লোকজ ঐতিহ্য এবং কল্পনার মিশ্রণ দেখা যায়।

ঠাকুরমার ঝুলি বইটিতে যে সকল গল্প রয়েছে তা অনেক সহজ-সরল এবং মিষ্টি ভাষায় উপস্থাপনা করা হয়েছে যা শিশুদের কল্পনার জগৎকে সমৃদ্ধ করে। এসব গল্পের মাধ্যমে শিশুদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে যা থেকে তাদের সততা, বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য, এবং সাহসিকতা বৃদ্ধি পাবে। এসব গল্পের মাধ্যমে বাংলার গ্রামীণ মানুষের জীবনধারা, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে বাচ্চারা পরিচিতি লাভ করতে পারবে। বিভিন্ন রূপকথা এবং পৌরাণিক গল্পের মাধ্যমে শিশুদের কল্পনা শক্তি বিকাশ ঘটে থাকে। অনেক গল্পের দানশীলতা এবং সহযোগিতার বিষয় ফুটে তোলা হয়েছে যা দ্বারা শিশুরা পরোপকারের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। আবার এসব গল্পের মাধ্যমে অনেক বিষয়ের উপর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং তা সমাধানের উপায় সম্পর্কে বুঝতে এবং জানতে পারে। সর্বপরি বলতে পারি ঠাকুরমার ঝুলি গল্পের বইটিতে যে সব গল্প রয়েছে তা থেকে শিশুরা অনেক বিনোদন এবং শিক্ষামূলক দিক থেকেই উপকৃত হতে পারবে।

পঞ্চতন্ত্রের গল্প

পঞ্চতন্ত্রের গল্প বিখ্যাত লেখক বিষ্ণু শর্মার এক অসাধারণ গ্রন্থ যা নীতিশিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে রচিত হয়েছে। এই গ্রন্থটিকে পাঁচটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে যার ফলে একে মূলত পঞ্চতন্ত্রের গল্প বলা হয়ে থাকে। এখানে গ্রাণী কেন্দ্রিক গল্পের মাধ্যমে সাধারণত মানব জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা অনেক সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলি সাধারণত শিশুকিশোরদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে যা শিশুদের চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষা প্রদান করে থাকে।

পঞ্চতন্ত্রের গল্প প্রথমে সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয়েছিল এবং পরে এটি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। বিষ্ণু শর্মা মূলত শিশুদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা এবং নৈতিকতা শেখাতে এই গল্প গুলো রচনা করেছেন। এসব গল্পের মধ্যে কোনো না কোনো প্রাণী প্রধান চরিত্র রূপে উপস্থিত হয় এবং গল্পের শেষে নৈতিক বার্তা প্রদান করে থাকে।

পঞ্চতন্ত্রের গল্প বই শিশুদের কাছে যুগ যুগ ধরে শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক গ্রন্থ হিসেবে জনপ্রিয় স্থান দখল করে রয়েছে। এই বইয়ের সকল গল্প শিশুদের নৈতিক চেতনা মূলক শিক্ষা প্রদান করে, যা একটি শিশুর জন্য অনেক সুন্দর উপহার হতে পারে। পঞ্চতন্ত্রের গল্প পড়ে শিশুরা কোন সমস্যা সমাধানের চতুর এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনা করতে শিখে। মানুষের বিপদে সাহাস্য সহযোগিতা, সম্পর্কের গুরুত্ব এবং দায়িত্ববোধ শেখায়। এসব বিষয় শিশুদের জীবনের চলার পথে অনেক ভাবে কাজে লাগবে যা তারা ছোট থেকে শিখতে পারছে।

এসোপস ফেবলস

এসোপস ফেবলস একটি অসাধারণ গল্প সংকলন যা প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিক এবং দাস এসোপ রচনা করেছেন বলে ধারণা করা হয়। এইসব গল্পের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এগুলো অনেক সংক্ষিপ্ত, সরল, এবং শিক্ষামূলক যা প্রধানত নৈতিক শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে রচিত হয়েছিল। প্রতিটি গুল্পে গ্রাণী, পশু-পাখি এবং প্রকৃতির উপাদান চরিত্র হিসেবে ফুটে তোলা হয়েছে এবং সে সব উপাদান মানুষের মত চরিত্র বহন করে।

এসোপস ফেবলসের গল্পগুলো সাধারণত সবার মুখে মুখে প্রচলিত ছিল, যা পরবর্তিতে বিভিন্ন ভাষায় লিখিত ভাবে রূপান্তরিত হয়। সব গুলো গল্পে কিছু শিক্ষণীয় এবং নীতিকথা মূলক সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। যেমন, খরগোশ ও কচ্ছপ এর গল্পে ধৈর্য ও অধ্যবসায় দিক ফুটে তোলা হয়েছে। অপরদিকে সিংহ ও ইঁদুরের গল্প বাচ্চাদের মানবিক মূুূল্যবোধ এবং কৌশলগত প্রভাব শেখানো হয়েছে। এসব গল্পের মাধ্যমে শিশুরা ছোট থেকে লোভের কুফল এবং আসা হতাশার শিক্ষা প্রদান করে থাকে।

এসোপস ফেবলস বইতে যেসব গল্প রয়েছে তা হতে শিশুদের মাঝে নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এসব গল্প শুধুমাত্র বিনোদন দেয় না, শিশুদের বাস্তব জীবনের নানা বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে তাদের মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

তিন গোয়েন্দা সিরিজ

তিন গোয়েন্দা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় কিশোর উপন্যাস সিরিজ যা রকিব হাসান রচনা করেছেন। তিন গোয়েন্দা সিরিজ আমেরিকান উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত হলেও এটির কাহিনী লেখক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবং কিশোর পাঠকদের পড়ার উপযোগী করে রচনা করেছেন। তিন গোয়েন্দা কাহিনীতে মূল চরত্রে রয়েছে মুসা আমান, কিশোর পাশা এবং রবিন মিলফোর্ড, যারা তিন জন মিলে বিভিন্ন রহস্য অনুসন্ধান এবং উন্মোচনের নেশায় থাকেন। এই সিরিজের প্রতিটি গল্পে একটি রহস্যময় ঘটনা থাকে, যা তারা তিনজন মিলে নিজেদের বুদ্ধি, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাধান করে থাকেন।

তিন গোয়েন্দা সিরিজের গল্প গুলোতে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার, থ্রিল এবং সাসপেন্স যা পাঠককে একটু সময়ের জন্যেও গল্প পাঠ থেকে চোখ সরাতে দিবে না। এসব গল্প থেকে আমাদের চার পাশের  প্রকৃতি, সামাজিক সমস্যা এবং বিভিন্ন নৈতিকতার দিক উঠে আছে। এসব গল্প শুধু মাত্র বিনোদনের জন্যে না, শিশু কিশোরদের চিন্তা-ভাবনা এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব গল্প পড়ার মাধ্যমে শিশুরা দলগত কাজ করার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে এবং যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য সবাই মিলে কাজ করে। এই সিরিজের গল্পগুলোতে বিভিন্ন সময় বিজ্ঞানের ব্যবহার এবং প্রযুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে, যা আমাদের শিশুদের জীবনে অনেক সুন্দর প্রতিফলন ঘটবে। তিন গোয়েন্দা সিরিজ কেবল মাত্র বাচ্চাদের সততা ও নৈতিকতা শিক্ষা দেয় না, এখান থেকে বাচ্চারা তাদের কল্পনা জগৎকে সমৃদ্ধ করতে এবং তাদের মানসিক বিকাশকে সমৃদ্ধ করতে পারবে।

আবোল তাবোল

আবোল তাবোল বাংলার প্রখ্যাত ভাষা সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের লেখা এক অসাধারণ ছড়ার বই, যা ১৯২৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি বেশ কিছু ছড়ার সংকলন যা অনেক হাস্যরস, বুদ্ধি এবং কল্পনার সমন্বয়ে রচিত হয়েছে। আবোল তাবোল বইয়ের সকল ছড়ার মধ্যে মানুষের জীবনের হাস্যকর দিক, অদ্ভুত কল্পনা এবং সামাজিক রীতিনীতি সূক্ষ্ম ভাবে ফুটে তোলা হয়েছে। এই বইয়ের মধ্যে কিছু ছড়া রয়েছে যা শব্দের খেলায় শিশুদের মুগ্ধ করে রাখে যেমন, খিচুড়ি, গুচ্ছলিবাবা, হাট্টিমাটিম টিম প্রভৃতি।

আবোল তাবোল গ্রন্থের এক একটি ছড়া মানে শিশুদের জন্য মজার বাক্স যার মধ্যে হাস্যরস এবং আনন্দের অফুরন্ত ধারা লুকায়িত রয়েছে। এসব ছড়ার মাধ্যমে বাচ্চারা কেবল মাত্র আনন্দ পাবে তা না, প্রতিটি ছড়ার মাধ্যমে বাচ্চাদের কল্পনার বিকাশ ঘটতে সাহাস্য করবে। এসব ছড়ার সহজ সরল ভাষা বাচ্চাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করবে এবং বাংলা ভাষা শেখা এবং পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে। আবোল তাবোল বইয়ের ভাষা সহজ সরল হলেও এতে বৃদ্ধি এবং কল্পনার গভীরতা রয়েছে। আবার এসব ছড়ার হাস্যরস এবং নৈতিক শিক্ষা হাসির মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন বিষয় উপলব্ধি করতে সাহাস্য করে। সর্বপরি বলা যায়, আবোল তাবোল গ্রন্থ বাচ্চাদের সৃজনশীলতা বাড়াতে এবং বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসতে সাহাস্য করে।

টুনটুনির গল্প

টুনটুনির গল্প বাংলা শিশুসাহিত্যের একটি অসাধারণ উপহার যা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী রচনা করেছেন। এই গল্পের বইয়ে একটি ছোট টুনটুনি পাখিকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে টুনটুনি ছোট পাখি হলেও তার বিশেষ বুদ্ধিমত্তা, চতুরতা এবং সাহস দিয়ে বিভিন্ন মজার ঘটনা সৃষ্টি এবং সমাধান করে থাকেন। গল্পগুলো সাহ্যরসের হলেও এখানে জীবনের গভীর শিক্ষা বহন করে থাকে।

ছোট টুনটুনি তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে রাজা, শিয়াল এবং মাঝে মাঝে মানুষদের সঙ্গেও মজার পরিস্থিতি তৈরি করে থাকে। এখানে টুনটুনি ছোট হলেও সে প্রমাণ করে যে, সাহস এবং বুদ্ধি থাকলে অনেক বড় সমস্যাও সমাধান করা যায়। গল্পগুলো থেকে শিশুরা অনেক কিছু শিখতে পারবে, যেমন টুনটুনি ছোট হলেও বুদ্ধিমত্তার কারণে অনেক কঠিন সমস্যাও জয় করতে পারে। এখানে টুনটুনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, যা শিশুদের ন্যায়ের পক্ষে দাড়াতে উদ্বুদ্ধ করবে। প্রতিটি গল্পে হাস্যরস ও শিক্ষার মিশ্রণ রয়েছে যা শিশুদের আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা দিবে। আর  প্রকৃতি ও পশুপাখির প্রতি শিশুদের ভালোবাসতে সাহাস্য করবে।

উপযুক্ত বই নির্বাচনের টিপস

আমরা শিশুদের জন্য বই কিনতে গেলে অনেক সময় দ্বিধা দণ্ডে পড়ে যাই। যার ফলে আমরা সঠিক বই কিনতে পারি না বা কি বই কেনা উচিৎ তা নির্ধারণ করতে পারি না। তাই আমাদের উচিৎ শিশুর জন্য বই নির্বাচন করতে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা। যেমন, শিশুর বয়সের উপর নির্ভর করে গল্প বা বই বাছাই করুন। ছোটদের জন্য সহজ ভাষা এবং সুন্দর চিত্রসহ উপযুক্ত গল্পের বই বাছাই করুন। এখানে লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো গল্পের ভাষা সহজবোধ্য এবং মজাদার হয়, যাতে শিশুরা গল্প পড়তে আগ্রহী হয়। আবার এমন গল্পের বই বাছাই করতে হবে যাতে এটি শিশুরাদের নৈতিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা নিশ্চিত করে। প্রতিটি গল্পের বই রঙিন চিত্রসহ দেখে কিনতে হবে যাতে শিশুরা গল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়তে মজা পায়। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমাদের শিশুদের বয়স ভেদে বই নির্বাচন করে কিনতে হবে।

শেষ কথাঃ

উপরিক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম কিভাবে শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক গল্পের বই নির্বাচন করতে হবে এবং শিশুদের শিক্ষামূলক গল্পের বই তাদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে কতটুকু সহায়তা করে। এ প্রবন্ধের মধ্যে কিছু গল্পের বই নিয়ে আলচোনা করা হয়েছে যা আপনার শিশুর বারন্ত বয়সে অনেক উপকারে আসবে।

Piku

হ্যালো, আমি পিকু। নাম দেখে অনেকেই মনে করতে পারেন এইটা কেমন নাম, এইটা কি আমার আসল নাম নাকি? না এইটা আমার ছদ্মনাম যা আমি নিজেই দিয়েছি। আমি বিডিইবুক সাইটে একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে লেখালিখি করে থাকি। আমি মূলত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বিভিন্ন বই এবং লেখক নিয়ে লিখে থাকি। আমার পড়া বিভিন্ন সেরা বই সম্পর্কে আপনারা এই সাইটে আর্টিকেল পড়তে পারবেন।

Recent Posts

আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ১০টি কার্যকর কৌশল যা সবার জানা প্রয়োজন

আত্মবিশ্বাস বাড়ানো আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাস একজন মানুষের…

3 সপ্তাহ ago

জনপ্রিয় বাংলা সাহিত্য পুরস্কার ও তার গুরুত্ব

বাংলা সাহিত্যের প্রচলন অনেক আগে থেকেই। বাংলা সাহিত্যে অনেক কিছু শিক্ষণীয় বিষয়ের সাথে বাস্তবতার মিল…

3 সপ্তাহ ago

স্বাস্থ্য ও মানসিক প্রশান্তির জন্য আমাদের যে বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত

স্বাস্থ্য মানুষের জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। অপরদিকে মানসিক প্রশান্তি ছাড়া আমাদের জীবনের সুখ শান্তি কল্পনা…

4 সপ্তাহ ago

বাংলা নাটকের ইতিহাস ও ক্রমবর্ধমান ধারা

নাটক সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা। নাটকে আমরা মূলত অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের নড়াচড়া, কথাবার্তা ইত্যাদির মাধ্যমে…

4 সপ্তাহ ago

সময় ব্যবস্থাপনা ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর ১০টি কার্যকর উপায়

সময় আমাদের জীবনের অনেক বড় একটি অংশ। এই পৃথিবীতে আমাদের সকলের জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে…

1 মাস ago

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন কেন্দ্র সমূহের বিস্তারিত আলোচনা

সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশের সমুজ শ্যামল মাঠ, বিস্তীর্ণ…

1 মাস ago